DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

তারেক রহমানকে এনে বিচারের মুখোমুখি করার উদ্যোগ সরকারেরঃ সহিংসতা উসকে দেয়া ও ইতিহাস বিকৃতির তথ্য যাচ্ছে ব্রিটেনে

image_62388_0দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নয়া উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় ব্রিটিশ সরকারের কাছে পাঠানোর জন্য তৈরি করা একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, তারেক রহমান একজন ফেরারি আসামী। 

ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে তাকে বাংলাদেশে ফেরানো জরুরি। এতে আরও বলা হয়েছে, লন্ডনে বসে বাংলাদেশে সহিংসতা উসকে দেয়া এবং ইতিহাস বিকৃতি করছেন। পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানায়। সূত্র জানায়, প্যারোল নিয়ে চিকিত্সার জন্য লন্ডন গিয়ে ‘প্যারোলের শর্ত’ লঙ্ঘন করেছেন বলে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের একদলীয় এবং গনতন্ত্র বিবর্জিত কর্মকান্ডে ব্রিটেন সহ ইউর উদ্বেগ থাকায়, তারা তারেক রহমানকে জেনে শুনে চরম ঝুকি মাঝে ঠেলে না দেবার সম্ভানাই বেশী।

তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এর আগে গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ৫ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা থেকে তারেক রহমানকে প্রত্যর্পণের অনুরোধও করা হয়েছে ব্রিটিশ সরকারের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোতে।

ওই চিঠির কথা উল্লেখ করে এবার নতুন চিঠি তৈরি হচ্ছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের আদালতে বিচারাধীন পলাতক আসামি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এর আগে ঢাকার বাংলাদেশ জাতীয় অপরাধ প্রতিহত কমিটি থেকে ব্রিটেনের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোতে (এনসিবি) পাঠানো হয়েছে।’ এবারের চিঠিতে লন্ডনে বসে বাংলাদেশে সহিংসতা উসকে দেয়া এবং ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ আনা হচ্ছে।

লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র জানায়, গত ৫ নভেম্বর ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চালাতে নির্দেশনা দেয়া হলেও ইউকে বর্ডার গার্ডকে মে মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত কোনো চিঠি দেয়া হয়নি। তবে এখন ঢাকা থেকে নতুন করে দেয়া চিঠি তারা ইউকে বর্ডার এজেন্সিতে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, আরাফাতের কোনো খবর পাওয়া না গেলেও লন্ডনে রাজনৈতিক কার্যক্রমে তত্পর রয়েছেন তারেক রহমান।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেককে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হলেও সুপ্রিমকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ‘চিকিত্সার জন্য’ লন্ডনে যান তিনি। বঙ্গবন্ধুর খুনিসহ পলাতকদের ফেরাতে গত ২০১০ সালে একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই টাস্কফোর্সের কর্মপরিধি বাড়িয়ে ২৫ মার্চ এটিকে পুনর্গঠন করা হয়। এই টাস্কফোর্সের আওতায় তারেক রহমান ও তার ভাই আরাফাত রহমানকে দেশে আনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

তারেক রহমানকে ফেরানোর নানা বিষয় পর্যালোচনা করছে টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের প্রধান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘তারেক রহমানের প্যারোল বাতিল করা হয়েছে। যদিও এখনও কোনো মামলায় তার সাজা হয়নি, তবে তার বিরুদ্ধে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার চলছে।’ টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘টাস্কফোর্সটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা সম্পূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। তবে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে তা বলতে পারছি না।’ তবে ‘অপেক্ষা করে দেখেন অগ্রগতি কী হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এখনও ১৬টি মামলা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, নাইকো দুর্নীতি মামলা ও চাঁদাবাজির মামলাগুলো বহুল আলোচিত। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচার মামলায় নিম্ন আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিলেও উচ্চ আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছেন এবং ওই খালাস দেয়া নিম্ন আদালতের বিচারক মালয়েশিয়া পালিয়ে গেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ব্রিটেনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভিসা স্ট্যাটাস নিয়ে এখনও পরিষ্কার কিছু জানা যাচ্ছে না। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ব্রিটেনে বসবাস করছেন। এর মধ্যে তিনি ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। যদিও তারেক রহমান কিংবা তার আইনজীবীর পক্ষ থেকে কখনই তারেক রহমানের লন্ডনের ভিসা স্ট্যাটাস প্রকাশ করা হয়নি।

লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ইউকে বর্ডার এজেন্সির কাছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হবে। তারেক রহমান ২০১৩ সালে ব্রিটেনে থাকা অবস্থায় ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে যান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তারেক রহমান ব্রিটেনে ‘আশ্রয়’ (অ্যাসাইলাম) পেয়ে থাকলে, তার বাংলাদেশে ফিরে আসা সহজ হবে না।

কারণ তারেক রহমান যদি ব্রিটিশ সরকারকে বলে থাকেন তিনি বাংলাদেশে ফিরে গেলে নির্যাতিত হতে পারেন, ন্যায়বিচার পাবেন না অথবা তার জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে, তাহলে আবার যুক্তরাজ্য তারেক রহমানের এই আবেদন মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করে তার আশ্রয়ের মেয়াদ বাড়াবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার চাইলেই ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিতে পারবে না। 

কারণ ব্রিটিশ সরকারের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি ১৯৫৪ অনুযায়ী আশ্রিত ব্যক্তি প্রটেকটেড থাকবেন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে প্রমাণ করতে হবে তারেক রহমান একজন অপরাধী, দেশে থাকা অবস্থায় তার করা গুরুতর অপরাধগুলো বিচারাধীন, তাই তাকে বাংলাদেশ সরকার ব্রিটেন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে বিচার করতে চায়।

তবে বাংলাদেশ তারেক রহমানের বিচার করলেও তাকে ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেয়া হবে না এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারেককে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে পারে ব্রিটিশ সরকার। প্রসঙ্গত ২০০৮ সালে লন্ডনে যাওয়ার পর ওয়েলিংটন হসপিটালে চিকিত্সা নেন তারেক রহমান।

২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি এনফিল্ড টাউন এলাকায় যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রয়াত নেতা কমরউদ্দিনের বাড়িতে থাকতেন। তবে এখন তিনি কিংসটনের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকছেন। তার স্ত্রী জুবাইদা গুলশান আরা ও দুই কন্যা তার সঙ্গেই থাকেন। তারেক রহমান সাউথ ব্যাংক ইউনিভার্সিটি ও কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি থেকে আইনের উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়েছেন বলে জানা যায়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!