DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

পশ্চিমা বিশ্ব ও বিরোধীদের চাপ আমলে নিচ্ছে হাসিনা সরকার

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অগ্রহণযোগ্য ডামি নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে অস্বস্তিতে আছে সরকার। সাংগঠনিক ভাবেও দুঃসময় পার করছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যেই বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ধীরে ধীরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ফিরছে।

গত ৩ বছর ধরে ডলার সংকট এবং ব্যাংক ও বাণিজ্যিক খাতগুলোতে তীব্র অস্থিরতা চলছে। আইএমএফসহ দাতা দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ করে অর্থনৈতিক খাতে সুবাতাস ফেরানোর বহুমুখি উদ্যোগও সরকার নিয়েছে। কিন্তু কিছুতেই পালে হাওয়া লাগছে না।

গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও দুর্নীতি এসব ইস্যুতে ২০২২ সাল থেকেই চাপ আসতে শুরু করে গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে। শেখ হাসিনা সরকার এসব চাপ কাটিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রতিবেশী ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের সাথে সখ্য বাড়িয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বকে পরোয়া করেননি শেখ হাসিনা।

ইউরোপ-আমেরিকাও পর্যায়ক্রমে হাসিনা সরকারকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে এশিয়ার দুই বৃহৎ রাষ্ট্র চীন ও ভারতের দেখানো পথেই হেঁটেছে সরকার।

ধারণা করা হচ্ছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকারের সামনে রপ্তানিমুখি গার্মেন্টখাত সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে রেমিটেন্স প্রবাহও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে।

সব মিলিয়ে নতুন সরকারের সমানে রপ্তানি, জ্বালানী, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও কৃষিসহ বেশ কয়েকটি খাত সবচেয়ে বড় চ্যলেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে, বিরোধীদের সরকার পতনের আন্দোলন।  

এগুলোকে চাপ হিসেবে নিয়েই সরকার এগুচ্ছে বলে প্রথম বাংলাদেশকে জানালেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, “আমরা চাপ অনুভব করছি, দেশি-বিদেশি এমন চাপ মোকাবেলা করার বহুমুখি উদ্যোগ বা চিন্তা আমাদের আছে।”

তার মতে, “পরিস্থিতি খারাপ অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। ইউরোপ আমেরিকা আমাদের যে ভাবে বলছে; সেভাবে চলা সম্ভব নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে কারো সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা সম্ভব নয়। আর বিএনপিসহ বিরোধী পক্ষের আন্দোলনকেও আমরা বিবেচনায় রেখেছি। তাদের সমালোচনাগুলোও মূল্যায়ন করছি; নিয়মতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমরা বাধা দেব না। কিন্তু পশ্চিমাদের পরামর্শে ভিন্ন পথে ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা সফল হবে না। এটা সাংগঠনিকভাবেই মোকাবেলা করবো আমরা।”

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য, যিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে পরাজিত হয়েছেন তিনি প্রথম বাংলাদেশের সাথে আলাপচারিতায় বলেন, “চাপতো থাকবেই, নির্বাচন নিয়ে বিতর্কও থাকতে পারে। পশ্চিমারা পর্যবেক্ষণ করেছে। এখনো তাদের দুটি প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করছে। ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছে। এখন হয়ত তাদের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করবেন। তখন দেখা যাবে নির্বাচন কতটুকু বিতর্কিত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “নির্বাচন স্বচ্ছ হয়েছে, তা আমি বলছি না। আমাকেও তো হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বিতর্কিত যেটুকু আছে, সেটুকু নিয়ে ঝামেলা হতেই পারে।”

তিনি আরও বলেন, “সাংগঠনিক রাজনীতিতে বিএনপি আওয়ামী লীগের সামেনে দাঁড়ানোর মতো ভিত তৈরি করতে পেরেছে বলে আমি মনে করি না।”

“সরকারের অনেক দুর্বলতা আছে, অর্থনীতি, প্রশাসনের কর্মকাণ্ডসহ অনেক দুর্বলতা আছে, এগুলো ক্যাশ করার মতো জনসম্পৃক্ততা বিরোধী পক্ষের নেই। সুতরাং নতুন সরকার সকল দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবে; হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। বেশ কয়েকটি খাত বন্ধও হয়ে যেতে পারে; নতুন খাত সৃষ্টি হবে।” বলে প্রথম বাংলাদেশকে জানান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের ওই সদস্য।

এসবের বাইরে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ভারত বিরোধী মুভমেন্ট “ইন্ডিয়া আউট” কর্মসূচি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের পরিক্ষীত বন্ধু ভারত এ বিষয়টিকে চীনের কারসাজি বলে মন্তব্য করেছে। বুধবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রকাশ্যে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তারাও ভাবছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, তারাও বিষয়টি কাজ করছেন।”

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, “কে কাকে আউট করে, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে, এই মুহূর্তে এটির পেছনে যারাই কলকাঠি নাড়ুক, তাদের উদ্দেশ্য ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পৃতি নষ্ট করে দেওয়া। পরিক্ষীত বন্ধুর সাথে শত্রুতা তৈরি করা।”

দিন শেষে ভারতকে আওয়ামী লীগের শত্রু বানানো এত সহজ হবে না; যারা ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি দিয়েছে, তারাই আউট হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন বাহাউদ্দিন নাছিম।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!