DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

খালেদা-মোদীর বৈঠকঃপাল্টে যেতে পারে রাজনৈতিক দৃশ্যপটঃ খুলতে পারে সম্ভাবনার নতুন দ্বার

kzmodiক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  আগামী ৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।। এই বৈঠকেই পাল্টে যেতে পারে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক দৃশ্যপট। বৈঠকে দেশের গণতান্ত্রিক সংকট নিরসনে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে মোদীর কাছে পূর্ণ সহযোগিতা চাইতে পারেন খালেদা জিয়া।  বিএনপির একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

 

সূত্র মতে, অতীতের সুসম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়া সাক্ষাত না করার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করবেন সিনিয়র নেতারা। এবিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে  বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকে চলমান রাজনীতিতে যে গণতন্ত্র নেই তার বাস্তবচিত্র তুলে ধরা হবে। তবে এ বৈঠক হবে দু’দেশের সুসম্পর্কের মাইলফলক।

 

সুত্র জানায়, মোদী সরকার আস্থা না পাওয়ার কারণ হচ্ছে ২০০১ সালের নির্বাচনে ভারত বিএনপির বিরোধিতা করেনি; বরং পক্ষে কাজ করেছে। ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করার পর তাদের অনেক পদক্ষেপও ভূমিকাই ভারতের বিপক্ষে গেছে। দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায়  বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা নিয়ে বিএনপির প্রতি দেশটি ক্ষুব্ধ হয়েছে। পরে ক্ষুব্দ হয় ২০১৩ সালের ৪ মার্র্চ বাংলাদেশ সফরের সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে হরতালের অজুহাতে সাক্ষাত করেননি খালেদা জিয়া। যদিও ঐদিন হরতাল ডেকেছিল বিএনপি। একই সঙ্গে বিএনপির জোটের অন্যতম শরিকদল জামায়াতে ইসলামীকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না ভারত। 

 

সূত্রটি জানায়, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়া সৌজন্য সাক্ষাৎ না হওয়ার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হবে। বৈঠকে জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে আলোচনা হলে প্রয়োজনে জামায়াতের  ব্যাপারেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তবে অতিতে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছিল। এ কথাও ভারতকে স্বরণ করিয়ে দেবে বিএনপি। 

 

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল অব. মাহবুবুর রহমান বলেন,বিজেপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বৈঠকে অতীতের ভুল ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিনগুলোতে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পরিকল্পনা  করা হবে। দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে মোদী সরকারের সহযোগীতা চাওয়া হবে। এতে জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার শর্ত এলে, দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সেই প্রস্তাব  বিবেচনা করবে বিএনপি। 

 

সুত্রটি আর জানায়, বিজেপির সরকারের কাছে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরবেন বিএনপি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের আগে ও পরে গুলশানের বাসায় খালেদা জিয়াকে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা। বাসার সামনে বালুর ট্রাক রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেওয়া। অবৈধ সরকারের ১ বছর পুর্তিতে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়াকে ‘অবরুদ্ধ ’ করে রাখা। গুলশান কার্যালয়ের গেটে ও রাস্তায় ১৪ টি বালুর ট্রাক রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃস্টি করা। কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধা।কার্যালয়ের বিদ্যূৎ,গ্যাস, ডিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার তথ্য উপাত্ত ও ভিডিও চিত্র বিজেপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে তুলে দেবে দলটি।

 

এবিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেস্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মোদী সরকারের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বৈঠক রাজনৈতিক অঙ্গনে অবশ্যই ইতিবাচক সাড়া ফেলবে। বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সর্ম্পকে বাস্তবচিত্র তুলে ধরবে বিএনপি। সূত্র মতে, ভারতের সঙ্গে সর্ম্পক উন্নয়নের সব ধরনের চেস্টা করবে বিএনপি।

 

এর আগে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে দিল্লী সফর করেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। সপ্তাহব্যাপী ওই সফরে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, কংগ্রেস ও বিজেপির নেতাদের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক হয়। তবে দলের কাজে রাজ্য সফরে থাকা কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হয়নি।

 

ওই সফরেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের নিরাপত্তার বিষয়ে খালেদা জিয়া স্পষ্টভাষায় বলেছিলেন,বাংলাদেশের মাটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কখনো প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। এবিষয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেস্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, বৈঠকে মোদী সরকারের কাছে আমরা বিভিন্ন ইতিবাচক প্রস্তাব দেব। মোদী সরকারও আমাদের কাছে কিছু প্রস্তাব এবং কিছু শর্ত দেবেন। আমরা ভেবে সেগুলো মেনে নেওয়ার চেস্টা করবো। বিশেষ করে করিডোরের নামে ট্রানজিট। সীমান্ত ও তিস্তা চুক্তির বিষয়েও আমাদের জোর দাবি থাকবে।তবে আলোচনা মধ্য দিয়ে সুসর্ম্পক আরও শক্তিশালী হবে।

 

দলীয় সুত্রটি আরও জানায়, ভারতে মোদী সরকারকে খুশি করতে আপ্রাণ চেস্টা চালাচ্ছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ভিতরে ভিতরে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। কারন আসন্ন ৭জুন মোদি-খালেদা বৈঠকে সকল টানাপড়েনের যবনিকাপাত এবং পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয় নিয়ে দলের শীর্ষ নেতারা তৎপর হয়ে উঠেছেন।

 

সূত্র মতে, বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টুও, বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ড.এমাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!