DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

কি আশায় বাঁধি খেলাঘরঃযদি এভাবেই ফেরত পাওয়া যেত ইলিয়াস আলীদেরও!

iliasক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  অপহৃত বিএনপি নেতা  সালাহউদ্দিন আহমেদের সন্ধানের খবরে অন্যদের মতো বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ ইলিয়াস আলী, ঢাকা মহানগর নেতা চৌধুরী আলম ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনসহ নিখোঁজ বিএনপি নেতাদের পরিবারগুলোতে নতুন আশা জেগেছে।
 তাদের ধারণা হয়তো সালাহ উদ্দিনের মতো তাদের নিখোঁজ স্বজনরাও হঠাৎ বাড়িতে ফোন করে বলবেন, তোমরা দুশ্চিন্তা করো না আমি বেঁচে আছি, সুস্থ আছি।
 নিখোঁজ আনিসুর রহমান তালকুদারের ভাই ইমরান তালুকদার বলেন, ‘ভাইয়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে আমার বৃদ্ধ বাবা-মা পাগলপ্রায়। ক্ষণে ক্ষণে ফোন করে ছেলের খোঁজ জানতে চান তারা। কিন্তু তাদের মিথ্যা সান্ত্বনা দিতে হয়। ভাইয়ের চিন্তার আমাদের পরিবারের সবারই অস্থির সময় কাটাচ্ছেন। সালাহ উদ্দিন ভাইকে ফিরে পাওয়ায় আমরা আশা রাখি খোকন ভাইকেও পাবো।’
 সালাহউদ্দিনের সন্ধান পাওয়ার পর মঙ্গলবার ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা জানান, “আমি তো সব সময়ই মনে করি, ইলিয়াস ফিরে আসবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই আশাটা আরো বেশি হচ্ছে। তাকে ফিরে পেতে আমার সন্তানরাও আশায় বুক বেধেছে।’
 তিনি বলেন, সরকার ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে প্রয়োজনীয় কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তবে সালাহ উদ্দিন সাহেবের মতো ইলিয়াস আলীকেও যাতে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হয় সরকারের প্রতি সেই আকুতিই জানান তিনি।
 সালাহ উদ্দিনের সন্ধানের ঘটনায় রাজনীতির নানা হিসেব-নিকেশ থাকলেও তার পরিবার এবং সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। এ খবর শোনার পর স্বস্তি প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
 মঙ্গলবার বিএনপি নেতার খোঁজ মেলার খবরটি সিলেটের বিশ্বনাথে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বিএনপি ও এলাকাবাসী এবার ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন। সালাহ উদ্দিনের মতো ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
 বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ বলেন, “সালাহ উদ্দিন আহমেদকে পাওয়া গেছে এটা আমাদের অনেক আনন্দের সংবাদ। তবে তাকে কারা ভারতে নিয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।”
 তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি ইলিয়াস আলী ও খোকন আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। আমরা তাদের অপেক্ষায় আছি।”
 বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনে রাজধানী থেকে বিএনপির ও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের ২১ নেতাকর্মী নিখোঁজ হন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে খুঁজে পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ নেতাকর্মী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
 ২০১০ সালের ২৫ জুন রাতে রাজধানীর ইন্দিরা রোড থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৬ নং ওয়ার্ড কমিশনার ও বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমকে সাদা পোশাকের কিছু লোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। এটাই ছিল প্রথম কারো নিখোঁজের ঘটনা। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও তার সন্ধান মেলেনি।
 একই বছরের ২৩ নভেম্বর বরিশালের উজিরপুরের বিএনপি নেতা হুমায়ুন খান রাজধানীর মালিবাগ থেকে নিখোঁজ হন।
 ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্র আল-মোকাদ্দেস ও ওয়ালিউল্লাহকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে র্যা ব পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছেন।
 ২০১২ সালের ১ এপ্রিল রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনার।
 ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল গুমের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. আনসার আলী। ওই দিন রাত সোয়া ১২টার দিকে নিজের বাসায় ফেরার পথে বনানীর ২ নম্বর সড়ক থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যায়।
 ২০১৩ সালের ২৩ জুন নিখোঁজ হন খুলনার নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বিবিএ’র দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র আল-আশিক নির্মাণ। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু ও পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজ গুম হন।
 ২৮ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজনৈতিক সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গুম হন সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল সাংগঠনিক সম্পাদক সম্রাট মোল্লা, ৭৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি খালেদ হাসান সোহেল, ৭৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি আনিসুর রহমান খান, একই ওয়ার্ডের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব ও ৮০ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দল সম্পাদক মিঠুসহ ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের পাঁচ কর্মী।
 পরে মুন্সীগঞ্জে নিয়ে আনিসুর রহমান, বিপ্লব ও মিঠুকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু এখনও খোঁজ মেলেনি সম্রাট ও খালেদের।
 ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর বংশাল থানা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. সোহেল, বিএনপি নেতা মো. হোসেন চঞ্চল, বংশাল ৭১ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজ, একই ওয়ার্ডের ছাত্রদল নেতা মো. জহির শাহবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন।
 ৪ ডিসেম্বর বসুন্ধরা (আই ব্লক, রোড নং-৪, বাড়ি নং-৪১৪) এলাকা থেকে রাজধানীর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমন, একই ওয়ার্ডের নেতা তানভীর, ছাত্রদল নেতা আসাদুজ্জামান রানা, মাজহারুল ইসলাম রাসেল ও আল-আমিনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়।
একইদিন রাত আড়াইটার দিকে তেজগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কাউসার ও এসএম আদনান চৌধুরীকে শাহীনবাগের বাসা থেকে র্যা ব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়।
 একই বছরের ৬ ডিসেম্বর তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম রাজধানীর দক্ষিণ খান এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। ১১ ডিসেম্বর সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টু পল্লবী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন।
 ১৯ ডিসেম্বর ৫৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সোহেল ও রানা হাইকোর্ট এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। এরপর থেকে তাদের খোঁজ মেলেনি।
 নিখোঁজ হওয়ার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজদের পরিবারগুলো এখনো আশা ছাড়েননি। তারা এখনো অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তাদের নিখোঁজ ছেলে-স্বামীর ফেরতের আশায়।
 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!