মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, দলের সব নেতাকর্মীকে সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। আপনারাও একই পরামর্শ পালন করবেন। বিএনপি- জামায়াত ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছে।
মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা আলোচনা হয়। মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার বিষয়টি বার বার তুললে প্রধানমন্ত্রী এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আমার মনে হয়, আমাকে খুন না করা পর্যন্ত ওরা থামবে না। হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করবে না। দেশের মানুষকে শান্তি দেবে না। মন্ত্রিসভায় অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়।
সিনিয়র কয়েক মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার সদস্যদের বক্তব্য শোনার সময় প্রধানমন্ত্রীকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। বৈঠকে রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড এবং সমপ্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা আলোচিত হয়। আলোচনার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান জোরদারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের কেউ কেউ বলেন, সারা দেশে নাশকতা চালাতে পাহাড়ি এলাকা দিয়ে অস্ত্র, বোমা, বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস আনার আরও চেষ্টা হতে পারে। পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গিরা সংগঠিত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে। এ ব্যাপারে আইশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান আরও জোরদার এবং ওইসব এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালাতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হালিশহরের একটি বাসা থেকে ৭৬টি বোমা, ১৫০ কেজি বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে হাটহাজারী ও বাঁশখালি থেকেও জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এছাড়া, কয়েকজন মন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।
বৈঠকে তারা বলেন, এর আগে লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার জন্য একইভাবে আক্রমণ করা হয়েছিলো। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকেও ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছিলো। হুমায়ুন আজাদকে আক্রমণের মতো একই কায়দায় অভিজিতের ওপর আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আক্রমণের ধরনও একই রকম।
একজন সিনিয়র মন্ত্রী জানান, বৈঠকে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার ব্যাপারে গুরুত্ব দেন বেশির ভাগ মন্ত্রী। তারা বলেন, চট্টগ্রাম থেকে গত দুই সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জব্দ বিস্ফোরকদ্রব্যের কারণে ওই এলাকার নেতাকর্মীদের বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে পরামর্শ দেয়া ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা দেননি।
সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার বিষয়টি একাধিক সিনিয়র নেতা বৈঠকে তুললে প্রধানমন্ত্রী তাতে সায় দেন।