DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সুন্দরবনে তেল অপসারণে নৌ-মন্ত্রণালয়ের গাফলতি রয়েছেঃ ড.হাছান মাহমুদ

10683710_10152967213806532_2081251663297876585_oসুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবিতে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণ কার্যক্রমে নৌ মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তেল অপসারণের এ কার্যক্রমে হতাশাও ব্যক্ত করেছেন তারা।

জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে এমন হতাশার কথা বলেন কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পর্যাবেক্ষণে জানা গেছে, ট্যাংকারটি ডুবে যাওয়ার পর নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। এছাড়া নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের এধরনের দুর্ঘটনা তেল অপসারণের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না।’

‘ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটির বৈধ কাগজ পত্র ছিলো না’ উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণে জানতে পেরেছি শুধু মাত্র ডুবে যাওয়া ট্যাংকারটিই নয় এমন বহু তেলবাহী ট্যাংকারের বৈধ কাগজ-পত্র নাই। ত্রুটিপূর্ণ এসব নৌ-যান চলাচল বন্ধ করতে আমরা নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২০১১ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে তেলবাহী ট্যাংকারসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছিল, ২০১৪ সালের মধ্যে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ করা হবে। আমরা অবাক হয়েছি, কীভাবে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে এমন টক্সিকবাহী (বিষাক্ত দ্রব্য) নৌযান চলাচল করে। কমিটি সুপারিশ করেছে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে তেলবাহী ট্যাংকারসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল অতি শিগগিরই চলাচল বন্ধ করে মংলা-ঘসিয়াখালি-মোরেলগঞ্জ চ্যানেল পুনঃখনন করে ওই পথে চলাচল করা হোক।’

সাবেক এই পরিবেশ মন্ত্রী জানান, পরিবেশ ও মন্ত্রণালয়ের পর্যাবেক্ষণে দেখা গেছে, সুন্দরবনের মধ্যে এ ধরনের দুর্ঘটনার ফলে ভবিষ্যতে সুন্দরবনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য দীর্ঘ দিনের জন্য নষ্ট হতে পারে। ডুবে যাওয়া ট্যাংকারের ৩ লাখ ৫৭ হাজার লিটার ফার্নেস ওয়েলের মধ্যে ১৭ ডিসেম্বর তারিখ পর্যন্ত অনুন্নত পদ্ধতিতে মাত্র ৬০ হাজার লিটার তেল সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব তেল সুন্দরবনের ৩০০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। তবে শ্যালা নদী ও এর আশপাশের নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা বর্তমানে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ যা স্বাভাবিক মাত্রা ৫ এর চাইতে বেশি। এসব নদীর পানিতে গ্রিজওয়েলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ট্যাংকারটি ডুবের যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি এর চারপাশে বুম বা ভাসমান বেরিকেড তৈরি করা যেত তাহলে তেল এতো বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়তো না। ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার তিন দিন পর বন মন্ত্রণালয় বেরিকেড তৈরি করে যা কার্যত কোনো ফল দেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ভাসমান তেল অপসারণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে একটি বিশেষ জাহাজ ছিলো। কিন্তু সুন্দরবনের দূর্ঘটনায় এই জাহাজটিকে ঘটনাস্থনে আনা হয়নি। পরে আমরা জানতে পেরেছি জাহাজটিকে ঘটনাস্থলে আনতে হলে সমুদ্রপথে আনতে হবে। কিন্তু এই জাহাজটিরও সমুদ্রপথে চলাচলের ছাড়পত্র নেই।’

এদিকে কমিটি সুত্রে জানা যায়, ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় সুন্দরবন এলাকায় পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্রের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে সুপারিশ করার উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) মো. নূরুল করিমকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্য বিশিষ্ট্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি মূলত ফার্নেস অয়েল নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্রের উপর ক্ষতিকর প্রভাব এবং সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপরন করবে। একই সঙ্গে সম্ভাব্য বিপর্যয় ও ক্ষয়ক্ষতির উত্তরণে করণীয় বিষয়ও সুপারিশ করবে।

কমিটি সুত্রে আরো জানা যায়, ফার্নেস অয়েল নিঃসরণজনিত দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের উপর সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবেলা করা জন্য ইউএনডিপি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে ইআরডি’কে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইউএন মিশনের সদস্যদের নামের তালিকা পাঠানোর জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!