DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

এ আবার কিসের আলামতঃ জঙ্গি ও দুষ্কৃতকারী নির্মূলে একসঙ্গে অভিযান পরিচালনা করবে ভারত ও বাংলাদেশ

1416238962দুই দেশেই (ভারত ও বাংলাদেশ) জঙ্গি ও দুষ্কৃতকারী রয়েছে। এদের খুঁজে বের করে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দরকার। এজন্য একসঙ্গে অভিযান পরিচালনা জরুরি। যাতে এক দেশে অভিযানের সময় পাশ্ববর্তী দেশে আত্মগোপন করার সুযোগ না পায় তারা। ভারত ও বাংলাদেশে জঙ্গি তত্পরতা নিয়ে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত দুদেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের পৃথক ৩টি বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়। 



বৈঠকে ভারতের তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে ৩৪ জন সন্দেহভাজন অপরাধীর তালিকা হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া সাম্প্রতিক নানা কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে শিগগিরই মাঠে নামার ব্যাপারে দুদেশের প্রতিনিধিরা প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেন। 



বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের বলেন, ভারত ও বাংলাদেশে জঙ্গি তত্পরতা নিয়ে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) যেসব তথ্য দিয়েছে তা ‘উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়’। স্বরাষ্ট্র সচিব ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘ভারতের সন্দেহ, ভারত ও বাংলাদেশে দুই দেশেই দুষ্কৃতকারী রয়েছে। এদের খুঁজে বের করা দরকার। এ জন্য দুদেশ যৌথভাবে কাজ করবে’। তিনি বলেন, তাদের সন্দেহ উড়িয়ে দেয়ার মতো নয় বলে আমরাও মনে করি।



সচিব বলেন, ‘দুই দেশই মনে করে, আমাদের ভূখণ্ড দুষ্কৃতদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। আমাদের সঙ্গে স্বল্প সসময়ের বৈঠক হয়েছে। তাদের চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে আলোচনা ও পদক্ষেপের জন্য আমাদের ছয় সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছ। তারাই বিস্তারিত আলোচনা করবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশে কোনো দুষ্কৃতকারী থাকলে এনআইএকে এ কমিটির মাধ্যমে আইনানুগ সহযোগিতা দেয়া হবে। 



তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মাত্র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের সঙ্গে এখনও তেমন কোনো তথ্য আদান-প্রদান হয়নি। তবে তারা আমাদের সমস্যা দেখবে, আমরাও তাদের সমস্যা দেখব। আমরা একে অপরের সহযোগিতায় কাজ করব। আমরা চাই না দুদেশে কোনো জঙ্গি ও দুষ্কৃতকারী থাকুক। তারা দেশ ও জনগণের শত্রু। তিনি আরও বলেন, ‘এনআইএ প্রতিনিধি দলটি সোম ও মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফর করবে। গঠিত কমিটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তারা মাঠ পর্যায়ে সফর করতে পারে।’



পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তের দায়িত্বে থাকা এনআইএর প্রতিনিধি দল সোমবার ঢাকায় পৌঁছেন। এরপর দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন। এনআইএর মহাপরিচালক শারদ কুমারের নেতৃত্বে চার সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে আছেন আইজি সঞ্জিত কুমার, ডিআইজি অনুরাগ তস্কা ও ডিআইজি সজীব ফরিদ। এছাড়া তাদের সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনের এক প্রতিনিধিও আসেন। দুপুর ২টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় পরিচিতি ও সংক্ষিপ্ত বৈঠক।

বৈঠকে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক হাছান মাহমুদ খন্দকার, র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক সামছুল হক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) প্রধান মেজর জেনারেল আকবর হোসেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান জাবেদ পাটোয়ারি, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোখলেসুর রহমান, র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান আবুল কালাম আজাদ, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

 

জঙ্গিদের নামের তালিকা দিল এনআইএ: সংক্ষিপ্ত বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে র্যাব ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন এনআইএর প্রতিনিধিরা। এই বৈঠকে ভারতের বর্ধমানে বিস্ফোরণসহ দুই-একটি ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েক জঙ্গির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে দিয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। বৈঠক চলার সময় বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের হাতে নামগুলো দেয়া হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা কয়েকটি নাম দিয়েছেন। সেগুলো ভারতীয় না বাঙালি তা নিশ্চিত নয়। কারণ একেকজন জঙ্গির ১০০ নামও থাকে। তবে এগুলো এখন যাচাই করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেএমবিসহ অন্য জঙ্গিরা যাতে এপাশে (বাংলাদেশ ) বা ওপাশে (ভারত) মাথাচাড়া দিতে না পারে, আশ্রয় নিতে বা ঘাঁটি গাড়তে না পারে, সেজন্যও আলোচনা হয়েছে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি বর্ধমান বোমা বিস্ফোরণ ও অন্য দুটি ঘটনায় বেশকিছু তথ্য, যেগুলো আমরা ওপেন সোর্স থেকে পেয়েছি, সে ধরনের কিছু তথ্য আমরা অফিসিয়ালি পেলাম। সেগুলো নিয়েই আমরা যাচাই-বাছাই করছি। সেখানে বেশকিছু নাম বেরিয়ে এসেছে, তারা বাংলাদেশের নাগরিকও হতে পারে, আবার ভারতের নাগরিকও হতে পারে। মনিরুল ইসলাম বলেন, নামগুলো বাংলাদেশ না ভারতের নাগরিকের তা নিশ্চিত নয়। আমাদের কাছেও কিছু নাম আছে, বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ থেকে পলাতকও রয়েছে। তাদের সঙ্গে মিল খোঁজার চেষ্টা করব।



তারা কোনো দালিলিক প্রমাণ দিতে পেরেছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যেসব জঙ্গি আসামি ছিনতাই হয়েছে, তাদের বিষয়েও আমরা যাচাই করছি।



বর্ধমান হামলার তদন্ত করবে বাংলাদেশ: বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা হামলার ঘটনার তদন্ত করবে বাংলাদেশ। এ হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জঙ্গিদের নামের তালিকা হস্তান্তরের পরই এ সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 



এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ‘বর্ধমানে বোমা হামলা ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা বাংলাদেশে আছে কি না, তা এখনও আমরা নিশ্চিত নই। তবে এনআইএ সদস্যরা জঙ্গিদের একটি নামের তালিকা দিয়েছেন। হামলার সঙ্গে জড়িত যেসব জঙ্গির কথা ভারতীয় প্রতিনিধি দল মনে করছে, সেটি আমরা যাচাই করে দেখব। এ নিয়ে তদন্ত করা হবে।’ তিনি বলেন, জেএমবির সদস্যরা দুই দেশে যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে ব্যাপারেও দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।



প্রসঙ্গত, গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে শাকিল আহমেদ ও সুবহান মণ্ডল নামের দুজন নিহত এবং আবদুল হাকিম নামের একজন আহত হন। এ ঘটনার পর তদন্তে নেমে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার কথা জানায় এনআইএ। সেই সঙ্গে আন্তঃদেশীয় একটি জঙ্গি নেটওয়ার্কের তথ্য পাওয়ার কথাও জানায় সংস্থাটি। তারা দাবি করে— বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে হত্যারও ছক কষছে জঙ্গিরা। এর পরপরই বাংলাদেশে তদন্ত চালানোর বিষয়টি মাথায় আনে এনআইএ।

বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার পর তাদের আসার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। বর্ধমান বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে এনআইএ, যার মধ্যে শেখ রহতুল্লাহ সাজিদসহ কয়েকজন বাংলাদেশিও রয়েছে বলে তাদের দাবি। গত ৮ নভেম্বর সাজিদকে কলকাতায় গ্রেপ্তারের পর বলা হয়, ৪০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জেএমবির কমান্ডার। তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের ফরাজীকান্দায়। তবে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাজিদ নামে কাউকে শনাক্ত করতে না পারলেও মাসুম নামে এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই মাসুমই ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া সাজিদ। মাসুমের এক ভাইকে গত ১১ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। 



এনআইএর প্রাথমিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও নদীয়া জেলায় ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার ছক এঁকেছিল জেএমবি। বর্ধমান বিস্ফোরণে জড়িত ১২ জনের চারজন বাংলাদেশের। 

তবে এ ঘটনার পর ভারতের কাছে বাংলাদেশের জঙ্গি সম্পৃক্ততার তথ্য চায় বাংলাদেশ। তবে দীর্ঘদিনেও তথ্য দেয়নি ভারত। 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!