DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

তিন মন্ত্রণালয়ের টানাপোড়েনের ফলঃ বিদেশে চাকরি হারানোর শঙ্কায় লাখো বাংলাদেশী শ্রমিক

p6dubaiGETTYপররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারণে চাকরি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার লাখ লাখ শ্রমিক। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ওই তিন দেশে বসবাসকারী শ্রমিকরা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেখাতে ব্যর্থ হলে তাদের দেশে ফিরতে হবে।
 
এমন বাস্তবতায় সরকার সাত দেশে ১০টি মিশনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য আলাদা উইং স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। জারি হয়েছে এ সংক্রান্ত সরকারি আদেশ (জিও)। এরপরও নিজেদের গুরুত্ব কোনোভাবেই কমতে দিতে রাজি নয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, নিজেদের কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ার শঙ্কা থেকে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য আলাদা উইং বসতে দিতে চাইছে না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের সভাপতিত্বে প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের এমআরপি ও এমআরভি প্রদানসহ কনস্যুলার সেবা প্রদানের বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ছয় কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে অনুমোদনকৃত উইং স্থাপন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
 
কেবল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই নয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য আলাদা উইং স্থাপন প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ও। এরই অংশ হিসেবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করেছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় ৮ সেপ্টেম্বর বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে শ্রম উইং নিয়ে একটি পরিপত্র জারি করে।
 
পররাষ্ট্র সচিবের কাছে পাঠানো ওই পরিপত্রে বলা হয়, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে শ্রম উইং একটি স্বতন্ত্র উইং হিসেবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে থাকে। শ্রম উইংয়ে পদায়িত কর্মকর্তারা সরাসরি মিশন প্রধানের তত্ত্বাবধানে কাজ করে থাকেন। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কোনো কোনো দেশে বাংলাদেশ মিশনের শ্রম উইংয়ের কর্মকর্তাদের একই মিশনের অন্য উইংয়ের অধীনে কাজ করতে হচ্ছে। এতে শ্রম উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ মন্ত্রণালয়ের দেয়া দায়িত্ব সম্পাদনে তথা শ্রম উইংয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিঘ্নের সৃষ্টি হচ্ছে।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-এর শেষ দিকে বিদেশে মিশনগুলোতে পাসপোর্ট ও ভিসা উইং স্থাপনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদ সৃষ্টির বিষয়ে একটি আধাসরকারি পত্র (ডিও লেটার) দেন পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হক। ওই ডিও লেটারে নিজেদের অধীনে এমআরপি ও এমআরভি থাকার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, রুলস অব বিজনেসের অধীনে সরকারের কর্মবণ্টন বিধিতে বিদেশে কূটনৈতিক ও কনস্যুলার প্রতিনিধিত্বের যাবতীয় দায়িত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর অর্পণ করা হয়েছে।
 
এছাড়া অ্যালোকেশন অব বিজনেসের কোথাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে পাসপোর্ট বা ভিসা ইস্যু করা বা আলাদা পাসপোর্ট ও ভিসা উইং স্থাপনের বিষয় অন্তর্ভুক্ত নেই। আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শ ও মতামত গ্রহণের গুরুত্ব অনুসরণ না করেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বতন্ত্রভাবে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে আলাদা পাসপোর্ট ও ভিসা উইং স্থাপন ও নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, যা প্রচলিত রীতিনীতি ও মৌল চেতনার পরিপন্থী। রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬-এর আওতায় অ্যালোকেশন অব বিজনেসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত চার নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত।
 
বর্তমান পররাষ্ট্র সচিবের এমন বিরোধিতার পরও সাত দেশের ১০টি বাংলাদেশ মিশনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উইং স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সৌদি আরবের জেদ্দা ও রিয়াদ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবি, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, ওমানের মাস্কট, কাতারের দোহা, কুয়েতের কুয়েত সিটি, সিঙ্গাপুরের সিঙ্গাপুর সিটি এবং ইতালির রোমে বাংলাদেশ মিশন রয়েছে। এখন এ মিশনগুলোতে উইং স্থাপন নিয়েই শুরু হয়েছে টালবাহানা।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!