DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

জাতিসংঘ শুনানীতে বোমা ফাটালেন নিহত অভিজিৎ এর স্ত্রী বন্যা

bonna2দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ শুধু ধর্মীয় মৌলবাদী হত্যাকারীরাই নয়, পক্ষান্তরে বাংলাদেশ সরকারের আশ্রয়ে প্রশ্রয়েই সাম্প্রতিক মুক্তমনা ব্লগারদের হত্যাকান্ড গুলো  ঘটেছে  ~ জাতিসংঘের শুনানিতে নিহত অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা । 

 তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন সরকার অবশ্যই ব্লগার হত্যাকারীদের গ্রেফতার করেছে, তাই না? "না"। বরং সরকার আইসিটি আইনের আওতায়  উল্টো কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেফতার করেছে। বর্তমান সরকারকে ও সরকারের একজন মন্ত্রীকে অপমান করার অভিযোগে একজন সাংবাদিককে কয়েক সপ্তাহ আগেও গ্রেফতার করে প্রচন্ড নির্যাতন করা হয় "।

bonna5সাংবাদিকদের ওপর হামলা বিষয়ক জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত ‘এন্ডিং ইমপিউনিটি ফর ক্রাইমস এগেইনস্ট জার্নালিস্টস ’ বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্যানেলে বক্তৃতা করেছেন জঙ্গিদের হামলায় নিহত ব্লগার ড. অভিজিত রায়ের স্ত্রী রাফিয়া আহমেদ বন্যা ।অতি সম্প্রতি নিহত ব্লগার অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক দীপন হত্যাকাণ্ড এবং অপর প্রকাশক টুটুলসহ তিনজনের ওপর হামলার মাত্র ২ দিন পর এই প্যানেল আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয় ।

প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হওয়া হামলার ঘটনাগুলোতে বিচারহীনতার বিষয়গুলো তুলে ধরেন মার্কিন প্রবাসী বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিত ঢাকায় নিহত হওয়ার সময় চাপাতির কোপে গুরুতর আহত তার স্ত্রী বন্যা । তার বক্তব্যে তিনি বলেন, একুশ শতকের এই আধুনিককালেও সাংবাদিকদের ওপর হামলাগুলো দিনে-দুপুরে আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে।

রাফিদা আহমেদ বন্যা বলেন: আজ থেকে দু’দিন আগে, শনিবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জন্য একটি রক্তাক্ত দিন ছিলো। ফেব্রুয়ারির পর থেকে এটি ছিলো এ বছরের ষষ্ঠ ঘটনা, যেখানে দিনের বেলা ব্লগার বা লেখকদের এবং এবার এক প্রকাশকের ওপর হাজারো মানুষের সামনে হামলা চালালো। ‘ কিন্তু সেখানেই তারা থামবে কেনো?

bonna3শুধু লেখক পর্যন্ত চাপাতির কোপ থামিয়ে রেখে কী হবে, যেখানে তারা জানে তারা যা-ই করুক না কেনো, বাংলাদেশ সরকার চুপ করেই  থাকবে"। তাই এবার হামলাকারীরা দু’জন প্রকাশককে টার্গেট করলো যারা এসব লেখকদের মুক্তচিন্তা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাকস্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা বই প্রকাশ করার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন।’

তিনি বলেন ,‘পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই গুরুতর। এই রক্তাক্ত দিনগুলো যেনো একটা নিত্য বিষয়ে পরিণত হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে । ‘এই শনিবার তারা জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যা করতে সফল হয়েছে। তার অপরাধ তিনি অভিজিত রায়ের দু’টি বই প্রকাশ করেছিলেন। আরেক প্রকাশক শুদ্ধস্বরের মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুল নিজ অফিসে চাপাতির একাধিক কোপ খেয়েও ভাগ্যের জোরে বেঁচে যান। লেখক ও ব্লগার রণদীপম বসু এবং কবি তারেক রহিম তখন টুটুলের সঙ্গে তার অফিসে ছিলেন। তারা দু’জনেই আহত হন। তারেক রহিমের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। একাধিক চাপাতির আঘাতের ক্ষত এবং পেটে বুলেট নিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি।’

bonna4বন্যা এসময় প্যানেলকে প্রশ্ন করেন ,‘আপনারা যদি মনে করেন আমরা শুধু এসব ধর্মীয় মৌলবাদী হত্যাকারীদের কাছ থেকেই হামলার শিকার হচ্ছি, তবে তা "আপনাদের ভুল ধারণা"। পরিস্থিতির ‘উন্নতি’ করতে আমাদের নিজেদের সরকারই তথাকথিত 'তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন' প্রণয়ন ও সংশোধন করেছে। এই আইসিটি আইন অনুসারে যেকোনো তথাকথিত ‘মিথ্যা’ ও ‘অশ্লীল’ প্রকাশনা, সম্প্রচার বা ওয়েবসাইট এবং ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করে বা করতে পারে এমন যেকোনো যোগাযোগকে বেআইনী ঘোষণা করতে পারে। আপনারা বুঝতেই পারছেন, এগুলো খুবই অস্পষ্ট ধারণা; এদের সংজ্ঞায়িত করা খুবই কঠিন।’

তিনি জানান ,‘নতুন আইসিটি আইন অনুসারে, ইন্টারনেটে ধর্মীয় সমালোচনা করলে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এবং হ্যাঁ, বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে এই আইনের আওতায় গ্রেফতারও করেছে।’  

রাফিদা আহমেদ বন্যা আরও বলেন:‘এ বছর প্রথম তিনটি হত্যাকাণ্ড হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার একেবারে চুপ হয়েই ছিলো । আর চতুর্থ হত্যাকাণ্ডের পর যখন সরকারকে কিছু বলতে চাপ দেওয়া হয়, তারা আমাদের সতর্ক করে দেয় যেনো আমরা কী বিষয়ে লিখছি সে বিষয়ে বেশ সচেতন থাকি। সরকার আমাদের খোলাখুলিই বলেছে, নির্বাচনী রাজনীতির কারণে খুব তারা সাবধানে চলছে। গুটি কয়েক ধর্মনিরপেক্ষ লেখকদের পক্ষ নিয়ে সরকার ধর্মীয় দলগুলোর সমর্থন হারানোর ঝুঁকি নিতে পারবে না।’

অভিজিতের সঙ্গে ‘মুক্তমনা’ ব্লগ পরিচালনা করা রাফিদা আহমেদ বন্যা বলেন: এখন পর্যন্ত কোনো প্রকৃত খুনীই গ্রেফতার বা বিচারের সম্মুখীন হয়নি। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে, তবে তাদের বিচারের আওতায় আনতে আমরা এখনও দেখিনি। এদের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই আবার জামিনে মুক্ত হয়ে গেছে।

তিনি এসময় ক্ষোভের সাথে বলেন ,‘ব্লগাররা যখন তাদের কাছে সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে আসা হুমকির বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গেছেন, পুলিশ তখন তাদের বিষয়টি চেপে গিয়ে  নিষ্ক্রিয় থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ পরামর্শ পেয়েছেন, বিদেশে চলে যাওয়ার। এভাবে অপরাধীদের পরোক্ষ সমর্থন দেওয়ার জন্য সরকার সামান্যও লজ্জিত বা বিব্রত করেনি।’

বন্যা হতাশা নিয়ে বলেন, আমরা এমন এক দেশে বাস করি, যেখানে লেখক, ব্লগার, সাংবাদিকরা নিজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে এখন আর নিরাপদ বোধ করেন না। ‘অন্য কিছু দেশের মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই’ তিনি ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে সচেতন হতে অনুরোধ’ জানান।

রাফিদা আহমেদ বন্যা পরিশেষে বলেন ,‘বাংলাদেশের সাহসী সাংবাদিক, ব্লগার, লেখক, প্রকাশকরা তাদের দেশকে ভালোবাসেন এবং মাতৃভূমির এই অবস্থায় পরিবর্তন আনতে চান। আমরা এখানে কথা বলার মুহূর্তেও তারা ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাটে এসব হত্যা, হত্যার বিচারহীনতা এবং বাংলাদেশ সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। হুমকির মুখে থেকেও আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের মুক্তকণ্ঠ, বাকস্বাধীনতা এবং একটি কার্যকর ধর্মনিরপেক্ষ সমাজকে রক্ষা করতে সাহায্য করার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে এগিয়ে আসার উদাত্ব আহ্বান জানাচ্ছি।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!