DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সিরাজগঞ্জে তিন খুন: টাকার জন্য পরিবারের সবাইকে খুন করল ভাগনে

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ব্যবসায়িক কাজে আর্থিক লেনদেনের বিরোধের জেরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মা–বাবা–মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রড ও হাসুয়া উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রথমে মেয়ে এরপর মা এবং সবার শেষে হত্যা করা হয় বাবাকে।

নিহত বিকাশ চন্দ্র সরকারের ভাগনে রাজিব কুমার ভৌমিক লোহার রড দিয়ে প্রথমে মাথায় আঘাত করেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে পরে একে একে তিনজনের গলা কাটেন। ঘাতক রাজিব কুমার ভৌমিককে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথের ছেলে ও নিহত বিকাশ চন্দ্র সরকারের আপন ভাগনে।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল।

পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত রাজিব কুমার ভৌমিক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ভুক্তভোগী বিকাশ সরকারের বোন প্রমীলা রানীর ছেলে রাজিব কুমার ভৌমিক। ভুক্তভোগীরা ও হত্যাকারী আত্মীয়। রাজিব কুমার ভৌমিকের বাবা মারা যাওয়ার পর ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত।

বিকাশ চন্দ্র সরকার তাঁর ভাগনে রাজিব কুমার ভৌমিককে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন। রাজিব কুমার মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেন। তবে চলতি বছরে এসে রাজিব কুমারের কাছে অতিরিক্ত ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন মামা বিকাশ চন্দ্র সরকার।

বিকাশ চন্দ্র সরকার গত ২২ জানুয়ারি দাবিকৃত টাকা ৭–৮ দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার জন্য রাজিবকে চাপ দেন। মোবাইল ফোনে রাজিব ও তাঁর মাকে বকাবকি করেন। রাজিব কুমার টাকা ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হয়ে মামাসহ পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে মামাকে ফোন করে পাওনা টাকা নিয়ে বাসায় আসতে চান রাজিব। বিকাশ চন্দ্র তাড়াশ উপজেলার বাইরে থাকায় ভাগনেকে টাকা নিয়ে মামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাসাতেই থাকতে বলেন। রাজিব বাসায় মামার অনুপস্থিতির সুযোগে মামি ও মামাতো বোন তুষিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

রাজিবের জন্য কফি কিনতে মামি নিচে দোকানে যান। এ সময় রাজিব ব্যাগে করে আনা লোহার রড দিয়ে মামাতো বোন তুষি রানি সরকারের
মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে হাসুয়া দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন রাজিব। এর মধ্যে মামি কফি নিয়ে বাসায় প্রবেশ করলে একই ভাবে তাঁকেও মাথায় কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেন।

এর কিছুক্ষণ পর মামা বিকাশ চন্দ্র ঘরে ঢুকলে তাঁকেও প্রথমে মাথায় আঘাত করে এবং পরে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে মরদেহ বেডরুমে তালা মেরে
উল্লাপাড়ায় ফিরে যান রাজিব। যাওয়ার পথে লোহার রডটি একটি পুকুরে ফেলে যান এবং রক্তমাখা হাসুয়াসহ ব্যাগটি নিজ বাড়িতে রাখেন।

এ ঘটনায় বিকাশ চন্দ্র সরকারের আত্মীয় সুকোমল চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে তাড়াশ থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার পৌর এলাকার বারোয়ারি বটতলা মহল্লায় তিনতলা নিজ বাসায় থাকতেন ব্যবসায়ী বিকাশ সরকার, তাঁর স্ত্রী স্বর্ণা সরকার ও তাঁদের দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে পারমিতা সরকার তুষি। গত রোববার সন্ধ্যা থেকে তাঁদের বারবার কল দিলেও সাড়া না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন স্বজনেরা। পরে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন বাসা তালাবদ্ধ। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) ভোরে তাড়াশ থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে ঘরের তালা ভেঙে বিকাশ, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের গলাকাটা মরদেহ দেখতে পায়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!