DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

একদফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে আবার বিএনপি-জামায়াতের ঐক্য !

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চলমান একদফার আন্দোলন সফল করতে গনদাবীর মুখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ফের সম্পর্ক ‘পুনর্মূল্যায়ন’ করতে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপির সাথে সুদীর্ঘ ১৮বছর সফল ভাবে জোটে থাকার ইতিহাস মূল্যায়ন করে আবার একই মঞ্চে উঠতে যাচ্ছে দেশের প্রধান এই দুই বিরোধী দল। দেশের ভেতরে ও বাইরে যে শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে জামায়াতের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ বজায় রেখেছিল, তা থেকে সরে আসার পরিকল্পনা কষছে বিএনপি। বিশেষ করে এর আগে জামায়াতের ব্যাপারে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আপত্তিকে ‘গুরুত্ব’ দিলেও আসন্ন নির্বাচনে দেশটির সমর্থন শেখ হাসিনা অনুকূলে থাকায় বিষয়টি  আর গুরুত্ব দিচ্ছে না তারা।

এ পরিস্থিতিতে রাজপথের চলমান আন্দোলনকে জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধান বিরোধী দলটি। এ লক্ষ্যেই সব দল ও মতকে নিয়ে ‘একসঙ্গে’ মাঠে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। গঠন করা হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী সর্বদলীয় ঐক্য’। এতে যেমন দীর্ঘদিনের পুরোনো মিত্র জামায়াতে ইসলামী থাকবে, তেমনি সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোকেও রাখা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ১৭ ডিসেম্বরের পরপরই এ পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ লাভ করতে পারে। তবে জামায়াতকে নিয়ে যেসব সমমনা বাম দলের আপত্তি থাকবে, তাদের যুগপৎ আন্দোলনে শরিক রাখার কৌশলও রয়েছে দলটির। সরকার পতনের আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে সব দল, মত এবং পথকে এক ও অভিন্ন করে এক মঞ্চে আনতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা  জানান, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা দীর্ঘ এক বছর ধরে যুগপৎ আন্দোলন করছেন। শুরুতেই বলা হয়েছিল, আন্দোলনের গতি-প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে জোট গঠন কিংবা এক মঞ্চের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখন সেই সময়টা এসেছে বলে তারা মনে করছেন। 

দলটির নেতারা বলছেন, পরিস্থিতিই তাদের এক মঞ্চের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে অনেকে জামায়াতের বিষয়ে আপত্তি তুলতে পারেন। তবে আগে দেশ বাঁচাতে হবে। দেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে কে ডান, কে মধ্য আর কে বাম– তা দেখার সময় নেই। এখনই এক হতে না পারলে কেউ বাঁচতে পারবে না। ভোটাধিকার আর গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে যারাই আন্দোলন করছেন, তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াত এক মঞ্চে কর্মসূচি পালনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই কাজ শুরু করেছেন দুই দলের নেতারা। পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডে টিমওয়ার্ক করছেন। তথ্য আদান-প্রদান থেকে শুরু করে কর্মকৌশল ঠিক করতে উভয় অংশের নেতারা বৈঠক করছেন। জোট গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার পর রাজপথে এর কার্যক্রম শুরু হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান  বলেন, তারা এখন আন্দোলনের একটি কৌশলে আছেন। সেটা হচ্ছে, যুগপৎ। তবে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে সবকিছু নির্ভর করবে পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর। তখন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, বর্তমানে বিএনপি-জামায়াত মাঠে একই রকম কর্মসূচি দিচ্ছে। সেটা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমেই কর্মসূচি নির্ধারণ করছি। যেহেতু নির্বাচন এগিয়ে আসছে, স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলন আরও জোরদার হবে। সে ক্ষেত্রে আরও কত কাছাকাছি থেকে আন্দোলন করা যায়, সেই বিষয়টি চিন্তাভাবনা করছি। 

শিগগিরই এক মঞ্চে উঠে বিএনপি-জামায়াত কর্মসূচি পালন করবে কিনা– এমন প্রশ্নের উত্তরে এই জামায়াত নেতা বলেন, সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সময়ের প্রয়োজনে যে কোনো কিছুই হতে পারে।
বিএনপি সূত্র জানায়, এক দফা আন্দোলনের শেষ ধাপে তারা সবাইকে এক মঞ্চে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। সেটা আগামী ১৭ ডিসেম্বরের পর দৃশ্যমান হবে। আর বাস্তবায়ন হতে পারে ২৬ ডিসেম্বরের পর থেকে। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগ মুহূর্তে তারা একসঙ্গে মাঠে নামবেন, একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করবেন। তবে সেখানেও রয়েছে বাধা। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির দু-একজন নেতা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছেন শুরু থেকে। তবে বেশির ভাগ রয়েছেন ইতিবাচক সিদ্ধান্তে। 

জামায়াত বিরোধিতায় থাকা বিএনপি নেতাদের বক্তব্য– জামায়াতে ইসলামীকে এক মঞ্চে নিয়ে এলে আবারও ওই দলটির নেতিবাচক কার্যক্রমের দায়ভার বিএনপিকে বহন করতে হবে। বিএনপি ‘মৌলবাদী রাজনীতি’কে সমর্থন করে বলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচারণা চালাবে সরকারি দলসহ বিরোধী পক্ষ। যুদ্ধাপরাধের বিষয়টিকে নতুন প্রজন্ম ভালোভাবে নেয়নি। এর বাইরে ‘ইসলামী ফোবিয়া’ হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিষয়টি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হতে পারে।

তবে অন্য নেতাদের যুক্তি এর সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের মতে, দেশের তৃতীয় শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত্তি অনেক মজবুত। বিএনপি নেতাকর্মীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে রাজপথে কর্মসূচি পালন করলে খুব দ্রুত সময়ে ভালো ফল আসতে পারে। দেশে এখন একমাত্র জনইস্যু হচ্ছে– জনগণের ভোটাধিকার, স্বাধীন মতপ্রকাশ, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা। যে গণতন্ত্র ও মানবতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, দেশকে স্বাধীন করা হয়েছিল– তার কিছুই নেই এখন। সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে এখন সবাইকে ভূমিকা পালন করতে হবে।
এ পক্ষের নেতারা বলেন, নাইন-ইলেভেনের টুইন টাওয়ার ভয়ংকর হামলার পর সারাবিশ্বে যে ‘ইসলামী ফোবিয়া’ সৃষ্টি হয়েছিল– তা এখন আর নেই। এতদিন ক্ষমতাসীন দল ওই ইস্যুকে পুঁজি করে অনেক জঙ্গি নাটক সৃষ্টি করেছে, যা এখন সবাই বুঝতে পারছে। তাই ওই ইস্যুকে আর কাজে লাগাতে পারবে না বিরোধী পক্ষ। অন্যদিকে জামায়াতকে নিয়ে সমস্যা থাকলে পশ্চিমা বিশ্ব এই দলটিকে এড়িয়ে চলত। সেটা হচ্ছে না। শুধু একটি পার্শ্ববর্তী দেশ এই ইস্যুকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে আসছে। তবে সেখান থেকে বিএনপির জন্য কোনো সুখবর নেই। তারা এই দেশে একটি দলের বাইরে যেতে পারছে না বলে তাদের প্রেসক্রিপশনে চলা যাবে না।

জানা গেছে, জামায়াত ছাড়াও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলোকেও এক মঞ্চে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করছেন দলের হাইকমান্ড। এরই মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চসহ ১২ দলীয় জোট, সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট, এলডিপি, গণফোরামসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। অনেকে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও বাম ঘরানার কেউ কেউ তুলেছেন আপত্তি। তবে শেষ পর্যন্ত তারাও দেশের স্বার্থে, আন্দোলনকে সফল করার স্বার্থে বৃহত্তর ঐক্যে আসবেন বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!