DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর শান্তিপূর্ন মিছিলে পুলিশের বাধা, গ্রেপ্তার ৪৬

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রাজধানীতে শান্তিপুর্ন বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী। মিছিলে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের হামলা, গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে জামায়াতের অন্তত ১৫/২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি দলটির। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৬ জন।

পুলিশ বলছে, জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল সংক্রান্ত কোনো কর্মসূচির বিষয়ে অনুমতি ছিল না। যাত্রাবাড়ীতে  পুলিশ সদস্যদের ওপর জামায়াতের নেতাকর্মীরা মারমুখী হলে তাদের প্রতিহত করা হয়েছে। প্রয়াত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় বাধা, কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করে অবাধ  ও সুষ্ঠু নির্বাচন, নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও সারা দেশে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল যাত্রাবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। 

নেতারা বলছেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবস্থান নেয়। সড়কের ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। যে রুটে মিছিল করার কথা, সেখানে আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নেয়।

পরে জামায়াত নেতারা রুট পরিবর্তন করে মিছিল শেষে সড়কের ওপর বক্তব্য দেন। কর্মসূচি শেষে নেতাকর্মীরা যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশ গুলি ছুড়ে। নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। দলটির দাবি এ সময় অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে সেখান থেকে আটক করা হয়। পুলিশের হামলায় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। 

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মধুসূদন দাস মানবজমিনকে বলেন, জামায়াত কর্মসূচি পালনের কোনো অনুমতি নেয়নি। সকালে দলটির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল পালনকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় দায়িত্বে থাকা নেতাকর্মীদের ওপর মারমুখী আচরণ করে। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে উল্টো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এ সময় পুলিশ শটগান থেকে গুলি ছুড়ে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় ৪৬ জনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এনিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেছে। অজ্ঞাত আসামি রয়েছে আরও অনেকে। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হবে।

এ ঘটনার তাৎক্ষণিক তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
বিবৃতিতে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সরকার জনগণের বাক-স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার হরণ করে দেশকে আজ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আজ সরকারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিনা উস্কানিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সমাবেশ শেষে ফেরার পথে পুলিশ অতর্কিত হামলা, গুলিবর্ষণ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এক ভীতিকর পরিস্থিতির অবতারণা করে। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জামায়াত-শিবির কর্মীসহ অর্ধশতাধিক নিরীহ পথচারীকে গ্রেপ্তার করে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতাকর্মীকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

 

তিনি আরও বলেন, সরকার গত ১৫ বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে জুলুম, নির্যাতন চালিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে, এটা তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। মিটিং-মিছিল ও সমাবেশ করা যেকোনো রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এখতিয়ার কারও নেই। জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে অতীতের কোনো স্বৈরাচারী জালেম সরকার যেমন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি তেমনি বর্তমান সরকারও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। জুলুম-নিপীড়ন যত বৃদ্ধি পাবে নেতৃবৃন্দের মুক্তি, কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিসহ জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন তত বেগবান হবে ইনশাআল্লাহ। গণতন্ত্র হরণকারী এই জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমি ঢাকাবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

 

এর আগে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, মাওলানা আবু সাদিক, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, কামরুল আহসান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী পূর্বের সভাপতি তাকরিম হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ঢাকা কলেজ সভাপতিসহ জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন থানা আমীর-সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!