DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

পিকে হালদারঃ এক ধুরন্ধর ব্যাংক লুটেরার ৩,৬৩৪কোটি টাকা আত্মসাতের কাহিনী

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশের আর্থিক খাতের জালিয়াতির অন্যতম হোতা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার নিজেকে আড়ালে রাখতে জালিয়াতিতে তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং সহকর্মীদের ব্যবহার করেছেন। 

 

তিনি তাদের নামে বিভিন্ন কোম্পানি গঠন করেছেন, টাকা স্থানান্তর করে পরে নিজে সে টাকা সরিয়ে নিয়ে অথবা তাদের মাধ্যমেই পাচার করেছেন। বিনিময়ে তারাও আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), হাইকোর্টে পি কে হালদারের যে ৮২ জন সহযোগীর নামের তালিকা দিয়েছে তাতে হালদারের মা, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, সাবেক সহকর্মীর নাম আছে। বিএফআইইউ বলেছে, এদের মাধ্যমে হালদার ৩৬৩৪ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, ভাই প্রিতিশ কুমার হালদার ও তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা সাহা, খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী, অভিজিৎ অধিকারী, মামাতো ভাই শঙ্খ ব্যাপারিসহ আত্মীয়স্বজন, সাবেক সহকর্মী উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও তার স্ত্রী অনিতা কর, অবন্তিকা বড়াল, বন্ধু একেএম শহীদ রেজাসহ ৮২ জনের নামে নামসর্বস্ব কোম্পানি গঠন কিংবা তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা পাচার করা হয়েছে।

বিএফআইইউর অনুসন্ধানে জানা গেছে, পি কে হালদারের ব্যক্তিগত কয়েকটি ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন সময়ে জমা হয় ২৪০ কোটি টাকা। আর তার নিজের মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হয় ৮২৩ কোটি টাকা।

পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হলেও তার তিনটি ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের পরিমাণ ১৬০ কোটি টাকা। তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি থাকার সময় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ৩ গ্রাহকের ঋণের ৬৩ কোটি টাকাও লীলাবতী হালদারের হিসাবে জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।  

পি কে হালদারের ভাই প্রিতিশ কুমার হালদার। দুই ভাই মিলে ভারতে হাল ট্রিপ টেকনোলজি নামে একটি কোম্পানি খোলেন ২০১৮ সালে। আর কানাডায় ২০১৪ সালে পিঅ্যান্ডএল হাল হোল্ডিং ইনক নামে একটি কোম্পানি খোলা হয়, যার পরিচালক পি কে হালদার, প্রিতিশ কুমার হালদার ও প্রিতিশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা।

প্রিতিশ কুমার হালদারের ব্যাংক হিসাবে ৫০ লাখ টাকা জমা থাকলেও তার নামে রয়েছে হাল টেকনোলজি, হাল ট্রিপ টেকনোলজি, পিঅ্যান্ডএল হোল্ডিং, মাইক্রো টেকনোলজিস, নর্দান জুটসহ আরও নানা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ৫০০ কোটি টাকার বেশি জমা হয়।
সুস্মিতা সাহাও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবেও বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেন হয়েছে।

পিপলস লিজিংয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন আনান কেমিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের আপন খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী পি কে হালদারের সাবেক সহকর্মী। নন্দীর স্ত্রী অনিতা করও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটির আরেক পরিচালক পি কে হালদারের আরেক খালাতো ভাই অভিজিৎ অধিকারী।

তবে প্রতিষ্ঠানটির সুবিধাভোগী ছিলেন পি কে হালদার। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ৭০.৮২ কোটি টাকা ঋণ নিলেও একটি টাকাও ব্যবসার কাজে ব্যবহার না করে সব টাকাই বিভিন্ন জনের একাউন্টে স্থানান্তর করে পরে তুলে নেয়া হয়েছে। 

পি কে হালদারের মামাতো ভাই শঙ্খ ব্যাপারির প্রতিষ্ঠান মুন এন্টারপ্রাইজের নামে ৮৩.৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হলেও তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠজন নওশের-উল ইসলামের প্রতিষ্ঠান মার্কো ট্রেডের নামে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের দুটি হিসাবে যথাক্রমে ২১.২৪ কোটি ও ১৫ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়।

এই ঋণ থেকে ব্র্যাক ব্যাংকে সিগমা ক্যাপিটাল মানেজমেন্ট লিমিটেডের হিসাবে ৬ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়ায় হাল ইন্টারন্যাশনালের হিসাব এবং অন্যান্য কয়েকটি অ্যাকাউন্টসহ পিকে হালদারের ব্যক্তিগত হিসাবে ৩ কোটি টাকা সরিয়ে নেয়া হয়।
শঙ্খ ব্যাপারিকে গত ৪ জানুয়ারি দুদক গ্রেপ্তার করেছে।

সাবেক সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে অর্থ পাচার

পিকে হালদারের সাবেক সহকর্মী উজ্জ্বল কুমার নন্দী পিপলস লিজিং-এর চেয়ারম্যান হিসেবে এবং খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী পিপলস লিজিং পরিচালক হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ছিলেন। 

তারা বেনামী প্রতিষ্ঠানের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে টাকা বের করে সে টাকা দিয়ে পিপলস লিজিং-এর চেয়ারম্যান ও পরিচালক হন। পরে একই কায়দায় পিপলস লিজিং থেকে টাকা বের করে প্রতিষ্ঠানটিকে পথে বসিয়েছেন।

ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ ও এমটিবি মেরিন লিমিটেডের মালিক নওশেরুল ইসলাম হালদারের আরেক ঘনিষ্ঠজন। ভুয়া কোম্পানীর নামে ঋণ দেখিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস লিজিং ও পিপলস লিজিং থেকে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তার একাধিক ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ৩৫২০ কোটি টাকা। তুলে নেয়া হয়েছে ২৪৩২ কোটি টাকা। বাকি টাকার মধ্যে দুদক ফ্রিজ করেছে ৯৫২ কোটি টাকা।

নওশেরের স্ত্রী মমতাজ বেগমের ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ দেখিয়ে কয়েক বছরে তার একাধিক ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ৪ কোটি টাকা এবং উত্তোলন করা হয়েছে ২.৫ কোটি। দুদক ফ্রিজ করেছে ২.৬৯ কোটি টাকা। 

এমটিবি মেরিনের পরিচালক বাসুদেব ব্যার্নাজী এবং তার স্ত্রী ও ন্যাচার এন্টারপ্রাইজের পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জির ভূয়া কোম্পানীর নামে ঋণ দেখিয়ে তাদের একাধিক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকারও বেশি। 

পি কে হালদার ও তার পরিবারের সদস্যদের কর ফাইলের কাজ করতেন সুকুমার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের মালিক সুকুমার মৃধা। ওই অফিসের ঠিকানায় পি কে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। 

মৃধার মেয়ে অনিন্দিতার প্রতিষ্ঠান উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল এফএএস ফাইন্যান্স থেকে ৪০ কোটি টাকা ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ৬০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করেনি। অনিন্দিতার নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএফসির শেয়ারও কেনা হয়। 

পি কে হালদারের একই এলাকা পিরোজপুরের অবন্তিকা বড়াল এক সময় রিল্যায়েন্স ইন্স্যুরেন্সে রিসেপসনিস্টের চাকরি করতেন। একসময় তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে পি কে হালদারের। অবন্তিকা পরে পিপলস লিজিং, হালদারের মালিকানাধীন পিঅ্যান্ডএলসহ কয়েকটি কোম্পানিতে কাজ করেন। এক সময় পি কে হালদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সুখাদা প্রোপার্টিজ লিমিটেডসহ কয়েকটি কোম্পানির পরিচালক হন অবন্তিকা।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং আরো কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ঋণ না নিলেও সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি অবন্তিকার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়মিত বড় অংকের টাকা স্থানান্তর হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বে ছিলেন পি কে হালদার।

দুর্নীতি দমন কমিশন এরইমধ্যে অবন্তিকার নামে কেনা রাজধানীর ধানমন্ডির ১০/এ সাত মসজিদ রোডে ৩৯ নম্বর বাড়ির ১২/ই ফ্ল্যাটটি আদালতের আদেশের মাধ্যমে জব্দ করেছে। এটির বাজারমূল্য সাড়ে চার কোটি টাকারও বেশি। অবন্তিকাকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তারও করেছে দুদক।

ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা বলে রেপটাইল ফার্ম নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেয়া হয় ৬৫ কোটি টাকা ঋণ। এই টাকা নানা পর্যায়ে পি কে হালদার, উজ্জল কুমার নন্দীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। রেপটাইল ফার্মের এমডি রাজীব সোম, চেয়ারম্যান রাজীবের স্ত্রী শিমু রায় এবং পরিচালক মোস্তাইন বিল্লাহ। 

রেপটাইল ফার্মে শেয়ার আছে কাগুজে প্রতিষ্ঠান পিএন্ডএল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের। এর পরিচালক উজ্জ্বল কুমার নন্দী, অমিতাভ অধিকারী, উদ্ভব মল্লিক ও সোমা ঘোষ। তারা ব্যবসা সম্প্রসারনের জন্য ৬৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেন। 

পিকে হালদারের বন্ধু, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক একেএম শহীদ রেজার স্বার্থসংশ্লিষ্ট পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে ১০৪ কোটি টাকা বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করার তথ্য পাওয়া যায় দুদকের অনুসন্ধানে। শহীদ রেজা ও তার পরিবারের আরো তিন সদস্যের নাম আছে বিএফআইইউই তালিকায়। এরা হলেন শওকত রেজা, জোবেদা বেগম ও নাহিদ রেজা।

একইভাবে অস্তিত্বহীন কনিকা এন্টারপ্রাইজ, এমটিবি মেরিনসহ অস্তিত্বহীন ৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া ৭৪ কোটি টাকার ঋণ ঐসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা না করে ওয়ান ব্যাংকের চট্টগ্রাম স্টেশন রোড শাখায় জে কে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল একাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। 
প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইরফান আহমেদ খান। তিনি ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার নামও আছে আছে বিএফআইউর তালিকায়।

তালিকায় আরো যারা আছেন

বিএফআইইউ যে তালিকা আদালতে দিয়েছে, তা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পি কে হালদারের জন্মস্থান তার পিরোজপুর ও আশপাশের এলাকার অনেককে তিনি চক্রে যুক্ত করেছেন।

এদের মধ্যে আছেন পিরোজপুরের স্বপন কুমার মিস্ত্রি ও তার স্ত্রী পুর্ণিমা রাণী হালদার, স্বপনের ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রি, উত্তমের স্ত্রী অতসী মৃধা, রতন কুমার বিশ্বাস, শাহ আলম শেখ, অনঙ্গ মোহন রায়, গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলি, অমল কৃষ্ণ দাস, মশিউর রহমান, সাব্বির আহমেদ, মনিরুল ইসলাম ও আসমা সিদ্দিক।

ঝালকাঠির প্রশান্ত দেউরি, বাগেরহাটের ইনসান আলী শেখ ও হাফিজা খানম, বরিশালের অমল চন্দ্র দাস, যশোরের সুব্রত দাস ও তার স্ত্রী শুভ্রা রাণী দাস, মিলন কুমার দাস, মাগুরার রাম প্রসাদ রায়, ভোলার শাহাদাত হোসেন এবং সাতক্ষীরার কামরুজ্জামনকেও হালদারের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে তালিকায় তাদের নাম রেখেছে বিএফআইইউ।

তালিকায় আরো আছেন কাজী মমরেজ মাহমুদ ও তার স্ত্রী আফরোজ সুরাইয়া মজুমদার, সৈয়দা রুহী গজনভী, রুহীর দুই ভাই রেজাউর রহমান ও মিজানুর রহমান, এম নুরুল আলম, আশুতোষ চৌধুরী, উৎপল মজুমদার, মোস্তাফিজুর রহমান, ওমর শরীফ, সোমা ঘোষ, সুদেব কুমার ভৌমিক, শেখ মইনুল ইসলাম মিঠু, সঞ্জীব কুমার হাওলাদার, তোফাজ্জল হোসেন, আবু রাজিব মারুফ, ইরফান উদ্দীন আহমেদ, শাহনাজ বেগম, জামিল মাহমুদ, ইমাম হোসেন, একেএম হারুনুর রশীদ, মোশরফ হোসেন ভূইয়া ও জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

এছাড়াও পি কে হালদারের সহযোগী হিসেবে বিএফআইইউ রাম প্রসাদ, শাহ আবরার ফাইয়াজ, মো. দেলোয়ার হোসেন, কাজী মাহজাবিন মমতাজ, জাহাঙ্গীর আলম, সোলায়মান চৌধুরী, ইকবাল সাইদ, অরুণ কুমার কুন্ডু, সিদ্দিকুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী মাহফুজা রহমান বেবী, এন এম পারভেজ চৌধুরী এবং রেজাউল করিমের নাম তালিকাভুক্ত করেছে।

বুধবার আদালতে তালিকা উপস্থাপন হতে পারে

বিএফআইউ ও আদালত সূত্র জানিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএফআইইউ প্রতিবেদন তৈরি করে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দিয়েছে, যা আজ বুধবার আদালতে উপস্থপন করার কথা রয়েছে।  

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানিয়েছেন, বিএফআইইউ অর্থপাচারে পি কে হালদারের সহযোগীদের পূর্নাঙ্গ একটি তালিকা দিয়েছে।

তিনি বলেন, বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আত্মসাত করা অর্থ ভারত, কানাডা ও সিঙ্গাপুর, মালেশিয়াতে পাচার করে বাড়ি কেনাসহ নানা কাজে লাগিয়েছেন পি কে হালদার।

এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও নানাবিধ অনিয়মের মাধ্যমে নামসর্বস্ব ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ঋণের নামে লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে মোট ৩ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা আত্মসাত করেন পিকে হালদার। 

৪৩টি প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া এসব ঋণের অর্থের গতিপথসহ প্রকৃত সুবিধাভোগীদের তথ্য বিএফআইইউর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি দুদকেও পাঠানো হয়েছে।

দুদকের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, বিএফআইইউর প্রতিবেদন এবং দুদকের নিজস্ব অনুসন্ধানে পি কে হালদারের জালিয়াতির পুর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া গেছে। এসব জালিয়াতির সূত্র ধরে শিগগিরই দুদক সিরিজ মামলা করবে।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান করছে দুদক। তাদের অনুসন্ধানের তথ্য অনুযায়ী পি কে হালদার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ১১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। 

এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে তিনি আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকা। একই কৌশলে তিনি ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এফএএস ফাইন্যান্স থেকে প্রায় ২২০০ কোটি টাকা, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে ২৫০০ কোটি টাকা, পিপলস লিজিং থেকে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন। 

ঋণ হিসেবে এসব অর্থ নেয়া হয়। ঋণের বিপরীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে মর্টগেজ নেই বললেই চলে। দুদক বলছে, এতে ঋণ পরিশোধ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। 

পি কে হালদার সিংগাপুর, ভারত ও কানাডায় প্রায় হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন মর্মে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে দুদক। 

এদিকে, প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ৮ জানুয়ারি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দুদক যে মামলা করেছে তার তদন্ত চলমান রয়েছে।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত এরইমধ্যে পি কে হালদারের সব স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করারও আদেশ দিয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!