DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

যুবলীগ নেতা কাজী আনিস ও তার স্ত্রী সুমির নামে শত শত কোটি টাকার সম্পদ !!!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বহিষ্কৃত যুবলীগ কেন্দ্রীয় অফিসের পিয়ন থেকে দফতর সম্পাদকে পরিনত হওয়া যুবলীগ নেতা কাজী আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমানের দেশে-বিদেশে থাকা শত কোটি টাকার সম্পদের তথ্য মিলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে।  গত বছর ২৯ অক্টোবর আনিস-সুমি দম্পতির বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ থাকার অভিযোগ এনে আলাদা দুটি মামলা করে দুদক। ওই মামলাগুলোর তদন্তে নেমে দেশে-বিদেশে আনিস-সুমি দম্পতির বিপুল সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

এদিকে আনিস ও সুমির বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ বলে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন। শিগগিরই তাদের মামলার অভিযোগপত্র কমিশনে উপস্থাপন করা হবে।  এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।

দুদকের এক পরিচালক  জানান, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বাউলিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফায়েক কাজীর ছেলে কাজী আনিস।  তার বাবা ১৯৯২ সালে অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের টাকা দিয়ে সংসার চালাতেন। অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে কাজী আনিস ঢাকায় এসে মাসে মাত্র ৫ হাজার টাকা বেতনে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। গার্মেন্টেসের চাকরি ছেড়ে তিনি ২০০৫ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পিয়ন হিসেবে যোগ দেন। এই আনিসই মাত্র সাত বছরের মাথায় হয়ে যান যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক। যুবলীগে পদ পেয়ে ক্যাসিনো কারবারে সম্পৃক্ত করেন নিজেকে। রূপকথার গল্পের মতো একসময়ের গার্মেন্টসকর্মী ও পিয়ন কাজী আনিস দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান। গত বছর ৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট গ্রেপ্তার হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান কাজী আনিস ও তার স্ত্রী।  আত্মগোপনে যাওয়ার আগে আনিস তৎকালীন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ছাড়া সংগঠনের অন্য কোনো নেতাকে পাত্তা দিতেন না বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

দুদক কর্মকর্তারা বলেন, কাজী আনিসের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তকালে তার নামে অর্ধশত ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। যেগুলোতে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এসব হিসাবে বর্তমানে জমা রয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। যেগুলো দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে জব্দ রয়েছে।  আর আনিসের স্ত্রী সুমি রহমানের নামে আছে ২০টির বেশি ব্যাংক হিসাব।  সেগুলোতেও লেনদেন হয়েছে কোটি কোটি টাকা।

কাজী আনিসের বিষয়ে তদন্তকালে তথ্য পেতে ৭৬টি দপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুদক। ওইসব দপ্তর থেকে জবাব পাওয়ার পর তার কিছু সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জব্দ করা হয়েছে এ দম্পতির আয়কর নথি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যার ওমর ফারুক চৌধুরীর ‘ডানহাত’ ও তার ‘ক্যাশিয়ার’ হয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান আনিস।  ক্যাসিনো কারবার ও চাঁদাবাজিসহ নানা উপায়ে শতকোটি টাকা উপার্জন করেন।

দুদকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আনিসের গ্রামের বাড়ি মুকসুদপুরের বাউলিয়া ও অন্যান্য মৌজায় ২৫টি দলিলে প্রায় ২০ কোটি টাকা দামের জমি পাওয়া গেছে। যা ইতিমধ্যে কমিশন জব্দ করেছে। যুবলীগ কার্যালয়ে পিয়নের চাকরি নেওয়ার মাত্র চার বছরের মাথায় নিজ গ্রামে বিশাল পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করেন কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন রাজকীয় বাড়ি।

কাজী আনিসের বাবা ফায়েক কাজী নিজেই দুদকের তদন্ত দলের কাছে স্বীকার করেছেন যে বাড়ি করার মতো কোনো টাকা-পয়সা তার ছিল না। ছেলে কাজী আনিস বিভিন্ন সময়ে ফায়েক কাজীর নামে অগ্রণী ব্যাংক মুকসুদপুর শাখায় টাকা পাঠাতেন। ওই টাকা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। নবনির্মিত সেই বাড়িতে তৈরি করেন দৃষ্টিনন্দন ফটক।

কাজী আনিস তার বাবা ফায়েক কাজীর নামে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে মুকসুদপুরের দাসেরহাটে পেট্রল পাম্প কেনেন। পেট্রল পাম্পটি প্রথমে ফায়েক কাজীর নামে ছিল। বছর দুয়েক পর তিনি ওই পেট্রল পাম্প ছেলেকে দানপত্র (হেবা) করে দেন। ফায়েক কাজী তখন দুদকের তদন্ত দলকে বলেন, ‘কাজী আনিসের টাকায় পেট্রল পাম্প করেছি। আবার সেটা তাকে হেবা করে দিয়েছি।’

তদন্তে ঢাকার শহরতলী কেরানীগঞ্জে কমপক্ষে আটটি দলিলে কাজী আনিসের জমি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। যা দুদক জব্দ করেছে। ওই জমির বর্তমান বাজারমূল্য ১২-১৩ কোটি টাকা। তার নামে ধানম-ির ১০/এ সড়কে ৪ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই ফ্ল্যাটের সঙ্গে কেনা হয় তিনটি গ্যারেজ। ঢাকার ওয়ারীতে চারটি ফ্ল্যাট থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ফ্ল্যাটের প্রকৃত মূল্য রেজিস্ট্রি মূল্য থেকে কয়েকগুণ বেশি বলে তদন্তকালে দুদক কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে তিনটি দোকান এবং সামনের অংশে ১৩০০ বর্গফুটের জায়গা কেনেন কাজী আনিস। যার বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া গুলশানের ২৮, ল্যান্ডভিউ কমার্শিয়াল সেন্টার ভবনের দ্বিতীয় তলায় দুটি বিশাল দোকান কেনেন তিনি। যার বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা। স্ত্রী সুমি রহমানের নামে ধানমন্ডির শুক্রাবাদে একটি বিলাসবহুল বাড়ি কেনা হয়েছে। যার বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকার বেশি। তার ব্যাংক হিসাবে রয়েছে কোটি টাকার বেশি।

কাজী আনিস ও তার স্ত্রী সুমি রহমান বর্তমানে বিদেশে পলাতক। ভারত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতে তাদের নামে বাড়ি-গাড়ি থাকার তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা এমএলএআর পাঠিয়ে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য  বলেন, ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কাজী আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমানের বিরুদ্ধে গত বছর ৬ নভেম্বর দুটি আলাদা মামলা করা হয়েছে। মামলায় আনিসের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং সুমি রহমানের ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার পর দুজনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় দুদক।’

এদিকে বিদেশে আত্মগোপনে থাকা কাজী আনিস ও সুমি রহমান দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার এড়াতে ও হয়রানি ছাড়াই নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। তবে আদালত গত ২০ ফেব্রুয়ারি এ রিট উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয়।

সূত্রঃ আরিফ আলাউদ্দীন,দৈনিক দেশ রুপান্তর।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!