DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার শুরু করছে আজঃ ভারতীয় পন্য কি বেশী গুরুত্ব পাবে?

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের  বন্দর ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির প্রথম ভারতীয় পণ্যের চালান নিয়ে আসা জাহাজটি আজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে।  এই জাহাজে থাকা চারটি কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের পর কাভার্ড ভ্যানে সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম প্রদেশে যাবে।

রোববার ভারতের হলদিয়া বন্দর থেকে ছেড়ে আসা এমভি সেঁজুতি নামের জাহাজটি মোট ২২১টি কন্টেইনার রয়েছে। তার মধ্যে ২১৭টি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের। অপর চারটি কন্টেইনার পরীক্ষামূলকভাবে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে।

ট্রান্সশিপমেন্ট হচ্ছে তৃতীয় একটি দেশের বন্দর ও পরিবহন ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে প্রতিবেশী বা অন্য কোন দেশের পণ্য পরিবহন করা। এর ফলে কোন একটি দেশ তাদের পণ্য তৃতীয় একটি দেশের বন্দর, সড়ক বা রেল অর্থাৎ যানবাহন ব্যবহার করে নিজের দেশের আরেক অংশে বা অন্য কোন দেশে পাঠিয়ে থাকে। এজন্য তাদের সব খরচ বহন করতে হয়।

কী রয়েছে চালানে?

পরীক্ষামূলকভাবে নিয়ে আসা প্রথম চালানের দুই কন্টেইনারে রয়েছে লোহার বার (টিএমটি বার) এবং দুই কন্টেইনারে ডালজাতীয় পণ্য রয়েছে। লোহার বার যাবে ভারতের ত্রিপুরায় আর ডালবাহী কন্টেইনার যাবে আসামে। সব মিলিয়ে এসব কন্টেইনারে ১০০ টনের মতো পণ্য রয়েছে বলে জানিয়েছে এমভি সেঁজুতির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ম্যাঙ্গোলাইন।

যে চুক্তির আওতায় পণ্য পরিবহনঃ

২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে 'এগ্রিমেন্ট অন দি ইউজ অফ চট্টগ্রাম এন্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অফ গুডস টু এন্ড ফ্রম ইন্ডিয়া' চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে ভারত তার পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোয় মালামাল পরিবহন করার সুযোগ পাবে। এজন্য তারা বন্দর ও পরিবহন ব্যবহারের খরচ বহন করবে।

চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় পণ্য ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাত ধরনের মাশুল আদায় করবে। সব মিলিয়ে কন্টেইনার প্রতি মাসুলের পরিমাণ ৪৮ ডলারের মতো।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, চুক্তির আওতায় পণ্যবাহী চারটি কন্টেইনারের ট্রায়াল রান উপলক্ষে বন্দরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ভারতীয় পণ্য কি বেশি গুরুত্ব পাবে?

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য মোঃ জাফর আলম বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বার্থিংয়ের বর্তমান যে নিয়ম রয়েছে, সেই অনুযায়ীই এসব জাহাজের বার্থিং হবে। অর্থাৎ যে জাহাজটি আগে আসবে, সেটি আগে জেটিতে ভিড়বে।
বাংলাদেশ-ভারতের চুক্তির আর্টিকেল ফাইভের পোর্ট অ্যান্ড আদার ফ্যাসিটিলিজ অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য আমদানি রপ্তানির তুলনায় ভারতীয় পণ্যকে কম সুযোগ-সুবিধা দেয়া যাবে না এবং বন্দরে জায়গা থাকলে পরিবহনের পণ্য রাখার জন্য প্রায়োরিটি ভিত্তিতে সুযোগ দিতে হবে।

কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের কোন কোন দৈনিকে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের জাহাজ একসঙ্গে এলে মাল খালাসের ক্ষেত্রে ভারতীয় জাহাজের পণ্য আগে গুরুত্ব পাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মি. আলম বলছেন, সেরকম কোন বিষয় নেই। ফিডার জাহাজের ক্ষেত্রে যেই জাহাজ আগে আসবে, তারাই আগে বার্থিং করবে। চুক্তিতে ভারতীয় জাহাজের প্রায়োরিটি বার্থিংয়ের কোন ইস্যু নেই। এক্ষেত্রে ভারতীয় জাহাজ আলাদা বাড়তি কোন সুবিধা পাবে না বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি জানান, কোন জাহাজ যখন আসে, তখন শিপিং এজেন্টদের সঙ্গে মিলে প্রতিদিন মিটিং হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় কোন জাহাজটা আগে বার্থিং পাবে। সেখানে অনেক দিনের প্রতিষ্ঠিত কতগুলো নিয়ম আছে। সেখানে যেমন বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ হলে গুরুত্ব পায়, খাদ্যবাহী জাহাজ গুরুত্ব পায়। কিন্তু এই চুক্তির আওতায় জাহাজের গুরুত্ব পাওয়ার বিষয়য়ে কোন কিছু বলা নেই।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক বলছেন, ''তবে চুক্তিতে একটা বিষয় বলা আছে যে, আমাদের যদি পর্যাপ্ত জায়গা খালি থাকে, তাহলে তারা তাদের কার্গো রাখার জন্য প্রায়োরিটি ভিত্তিতে সুবিধা পাবে। কিন্তু জাহাজের মালামাল খালাসের ক্ষেত্রে আলাদা কোন সুবিধা পাওয়ার বিষয় নেই।''

সুবিধা নাকি অসুবিধা?

ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় পণ্য পরিবহন হলে বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে সুবিধা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কারণ ট্রান্সশিপমেন্টের ফলে একদিকে যেমন চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে কন্টেইনারের পরিবহন বাড়বে, ফলে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও রাজস্ব বিভাগ বাড়তি অর্থ আয় করতে পারবে। পাশাপাশি এসব কন্টেইনার বাংলাদেশের যানবাহন ব্যবহার করে সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ফলে পরিবহন ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। তারাও বাড়তি অর্থ আয়ের সুযোগ পাবেন। ফলে রেমিট্যান্সও বাড়বে। এমনটাই বলছেন অনেকে।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলছেন, ''চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য আনা-নেয়া করা হলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ টাকা পাবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবহৃত হওয়ায় সেখানেও আয় বাড়বে। কিন্তু বন্দরের জন্য প্রয়োজন সাপেক্ষে অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।''

তবে বাংলাদেশের কোন কোন ব্যবসায়ীর আশঙ্কা, পুরোদমে ভারতীয় ট্রানজিট পণ্যের চলাচল শুরু হয়ে গেলে বন্দর ব্যবহারকারী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সাবেক সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলছেন, ''এমনিতেই এই বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্য বুঝে পেতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অনেক সময় লাগে। ঈদ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বন্দরে জাহাজ জট লেগে যায়, যা কাটাতে কয়েকমাস সময় লেগে যায়।"

"সেখানে যদি ভারতীয় জাহাজ কোন অগ্রাধিকার পায়, তখন সেটা আমাদের দেশীয় আমদানি বা রপ্তানিকারকদের মালামাল খালাসে সময় বেশি লাগবে, যার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবো আমরা।''

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!