DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

নির্বাচনে ব্যপক অনিয়ম এবং ভোট কারচুপির তথ্য-প্রমান সংগ্রহ করছে বিএনপি।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যপক ‘অনিয়ম’ ও ‘ভোট কারচুপির’ তথ্য নিয়ে তৈরি প্রতিবেদন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। সাত দিনের সময় দিয়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৮টি বিষয়ে প্রার্থীদের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছিল বিএনপি।

 

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৮৩ আসনের প্রার্থীরা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে নির্বাচনের আগে ও পরে এবং ভোটের দিন যেসব নেতাকর্মী গ্রেফতার, সহিংসতায় আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগের রাতে এবং ভোটের দিন যেসব ভোট কেন্দ্রে ‘অনিয়ম’ ও ‘ভোট কারচুপি’ হয়েছে তার ভিডিও এবং লিখিত বর্ণনাও রয়েছে প্রতিবেদনে।

তবে ঢাকার বেশিরভাগ আসনের প্রার্থীরা এখনও প্রতিবেদন জমা দেননি। এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা-মামলা-লুটপাটের তথ্য সংগ্রহে আলাদা ৩টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী  বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৮৩ প্রার্থী প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। ডাকযোগে চিঠি পাঠানোর কারণে অনেক প্রার্থী দেরিতে চিঠি পেয়েছেন। এ কারণে সব প্রার্থী এখনও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি। আশা করি, দু-এক দিনের মধ্যে সবাই জমা দেবেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব প্রতিবেদন জমা হলে তার ওপর ভিত্তি করে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এ ছাড়া যেসব ভিডিওচিত্র জমা পড়েছে তা একসঙ্গে করে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করা হবে। এরপর সংবাদ সম্মেলনে করে তা গণমাধ্যমে তুলে ধরা হবে। ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছেও তুলে ধরা হবে বিষয়গুলো। দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোকেও জানানো হবে।

সূত্র জানায়, নির্বাচনে ‘অনিয়মের’ বিষয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। মামলার সময় প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনের ‘অনিয়ম’ ও ‘কারচুপির’ তথ্য-প্রমাণের প্রতিবেদন দেবেন। পাশাপাশি সব আসন নিয়ে তৈরি করা ভোটের সামগ্রিক চিত্র নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও জমা দেবেন।

জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের নেতা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী  বলেন, সব আসনেই ধানের শীষের প্রার্থীরা মামলা করবেন। যেসব আসনে আমাদের প্রার্থীরা জিতেছেন সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরেও মামলা করা হবে। নির্বাচন প্রহসনের কথা, কারচুপির কথা সবাই জানেন। আগামী ১৮ দিনের মধ্যে মামলা করা হবে।

৩ জানুয়ারি রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ধানের শীষের প্রার্থীদের নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেয়া হয় প্রার্থীদের। ৮টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচনে ‘অনিয়মের’ তথ্য সাত দিনের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ইতিমধ্যে বেঁধে দেয়া সময় শেষ হয়েছে।

বিএনপির দফতর সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৮৩ আসনের প্রার্থীরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। ঢাকার ২০ আসনের মধ্যে ১৮টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এসব আসনের মধ্যে মাত্র তিনটির প্রতিবেদন জমা পড়েছে।

ঢাকা-৭ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু। তিনি  বলেন, প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এতে নির্বাচনে অনিয়ম, ভোট কারচুপির তথ্য-প্রমাণসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের তালিকা রয়েছে।

ঢাকা-১২ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, এখনও প্রতিবেদন জমা দেইনি। তথ্য সংগ্রহ করছি। দু-এক দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেব।

ঢাকা-৪ আসনের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর আহমেদ রবিন বলেন, নির্বাচনের দিন বাবার (সালাহউদ্দিন আহমেদ) ওপর হামলা হয়েছিল। তিনি হাসপাতাল থেকে দুদিন আগে বাসায় ফিরেছেন। এখনও তিনি ঠিকভাবে হাঁটতে পারছেন না। কেন্দ্র আমাদের কাছে যে তথ্য চেয়েছে তা সংগ্রহ করেছি। কাল (আজ) প্রতিবেদন জমা দেব।

ঢাকার বাইরে বেশিরভাগ আসনের প্রার্থীরাই নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঠাকুরগাঁও-১ ও বগুড়া-৬), স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ (নোয়াখালী-৫)-সহ অনেক সিনিয়র নেতার আসনও রয়েছে।

বরিশাল-১ আসনের প্রার্থী জহিরউদ্দিন স্বপন বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম, ভোট কারচুপির তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।

চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করেছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তিনি বলেন, ৮ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।

খুলনা-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, আমার আসনে ভোট কারচুপির তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছি।

৮ বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন : ৮টি বিষয়ের তথ্য দিয়ে প্রার্থীদের প্রতিবেদন তৈরি করতে বলে বিএনপি। এগুলো হল : ১. ভোটের পূর্ব রাত ও ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে সংঘটিত ভোট জালিয়াতি। ২. প্রার্থীর নিজের/পরিবারের অবরুদ্ধতা কিংবা হামলায় আহত ও সহায়-সম্পদের ক্ষতিগ্রস্ততার তথ্য ও ছবি।

৩. বির্বাচনের দিন ধানের শীষের দায়িত্বপ্রাপ্ত পোলিং এজেন্ট, প্রার্থীর সমন্বকারী, সমর্থক ও নেতাকর্মীরকে সরকারি বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী কর্তৃক ভীতি প্রদর্শন, অন্যায় আচরণ, মারধর ও কেন্দ্র থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া এবং গ্রেফতার। ৪. ভোট কেন্দ্রে প্রকৃত ভোট সংখ্যার চেয়ে প্রদর্শিত ভোট সংখ্যার অধিক বা প্রায় সমসংখ্যক হয়ে থাকলে কেন্দ্রের নামসহ প্রকৃত হিসাব।

৫. নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সহিংসতায় সরকারি বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের আক্রমণে ধানের শীষের নেতাকর্মী, সমর্থকসহ যারা নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের নাম, পরিচয়, ঠিকানা এবং আক্রান্তের ছবিসহ ঘটনার বিবরণ। ৬. নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যে কোনো প্রকার অপরাধের আইনানুগ প্রতিকার লাভের জন্য থানা বা আদালতে জিডি/মামলা করা হয়ে থাকলে অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জিডি/মামলা গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যাত হয়ে থাকলে তার কপি।

৭. তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গ্রেফতার অভিযানে দলের নেতাকর্মী সমর্থকসহ গ্রেফতারকৃতদের নাম-ঠিকানা ও পরিচয়। ৮. নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন বা অন্য যে কোনো প্রকার অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার/আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে থাকলে তার ফটোকপি।

‘হামলা-মামলা-লুটপাটের’ তথ্য সংগ্রহে আলাদা ৩ কমিটি : সূত্র জানায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা-মামলা-লুটপাটের তথ্য সংগ্রহে আলাদা ৩টি কমিটি করেছে বিএনপি। দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে মামলা-হামলার সংখ্যা ও গ্রেফতারের তালিকা সংগ্রহ করবে। একই সঙ্গে আইনগত সুবিধার বিষয়টি দেখবে কমিটি।

দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যের আরেকটি কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, আহত-নিহতের সংখ্যা, বাড়িঘর ভাংচুর ও আগুন, দলের কার্যালয় ভাংচুরের তথ্য সংগ্রহ করছে।

এ ছাড়া স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরীন সুলতানাকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করেছে। এ কমিটি নারী প্রার্থী ও নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা-মামলার তথ্য সংগ্রহসহ আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী  বলেন, প্রত্যেক কমিটি পৃথক বিষয় নিয়ে কাজ করছে। আমাকেও একটি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ২৮১ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিএনপি ছাড়াও এর মধ্যে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলের প্রার্থীও ছিলেন। ধানের শীষ নিয়ে ৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করেন। যদিও বিজয়ীরা শপথগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!