DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ফের জি বাংলায় অবন্তির বাজিমাত

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ কণ্ঠশিল্পী অবন্তি দেব সিঁথির প্রতিভায় মুগ্ধ সবাই। বাংলাদেশের জামালপুরে বড় হয়েছেন তিনি। নিজের গানের সঙ্গে নিজেই ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন দেখিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছেন।

অবন্তি ক্লোজআপ-ওয়ান দিয়ে দেশের দর্শকের মন পেয়েছেন অনেক আগেই। মিষ্টি শিস বাজানো ও ‘কাপ সং নিয়ে এবার ভারতে, জি বাংলার ‘সা-রে-গা-মা-পা-’ অনুষ্ঠানে অতিথি শিল্পী হিসেবে গান করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন নতুন করে।

সেই প্রতিযোগিতার বিচারক-উপস্থাপক-দর্শক সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অবন্তির সেই পারফরম্যান্সের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

জি বাংলায় অনুষ্ঠানটি প্রচারের পর থেকেই প্রশংসায় ভাসছেন অবন্তি। সা-রে-গা-মা-পা-র সেই এপিসোডে কিশোর কুমারের ‘আকাশ কেন ডাকে’ গানটি পরিবেশন করেছিলেন অবন্তি। গানের সঙ্গে দু’টি কাপের তালে ও শিস বাজিয়ে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছিলেন তিনি।

প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও বাজিমাত করেছেন তিনি। গতকাল রোববার রাতে প্রচার হওয়া পর্বে দেখা যায় কোনো রকম ভারী যন্ত্রপাতি ছাড়াই একটি চায়ের কাপ, দুটি চামচ, একটি হারমোনিয়ামের খোল আর শিস বাজিয়ে তিনি পরিবেশন করেন শ্যামল মিত্রের বিখ্যাত গান ‘আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন’ গানটি।

তার গান শুনে বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন শ্রীকান্ত আচার্য, শান্তনু মৈত্র, কৌশিকী চক্রবর্তী, মোনালী ঠাকুর ও পণ্ডিত তন্ময় বোস। তারা সবাই অবন্তির পারফরম্যান্সের পর দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। শান্তনু মৈত্র্য অবন্তিকে ‘বিস্ময়কর’ গানের প্রতিভা বলেও সম্বোধন করেন।

আর এই পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ‘সা-রে-গা-মা-পা-’ র ২য় রাউন্ড পেরিয়ে মূল পর্বে চলে গেলেন অবন্তি। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি প্রতিযোগী যিনি প্রথমবারের মতো এই অনুষ্ঠানের মূল পর্বে লড়াই করার যোগ্যতা অর্জন করলেন। অবন্তির এই সাফল্যে তাকে শুভেচ্ছায় ভাসাচ্ছে সবাই। বাংলাদেশে তার গানের ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে সবাই অবন্তির সাফল্য কামনা করছেন।

জি বাংলার এই অনুষ্ঠানে আগের পর্বে তাকে ‘শিস প্রিয়া’ উপাধি দেয়া হয়। অবন্তি, স্কুলে পড়ার সময়ই শিসের আওয়াজ শুনতে ভালো লাগত তার। ক্লোজআপ ওয়ানের মঞ্চে এসে শিষ বাজিয়ে বুঝেছিলেন এটাও একটা শিল্প। গানের সঙ্গে কাপ বাজিয়ে সেই সময়ই মুগ্ধ করেছিলেন সবাইকে। সেই সময় কুমার বিশ্বজিতের ‘যেখানেই সীমান্ত তোমার’ গানটি অবন্তি গেয়েছিলেন নিজের মতো করে। বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন কাপ, ফয়েল পেপার আর পয়সা। তার কাপ সং তাকে জনপ্রিয়তা দেয়।

ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ভালোবাসা অবন্তির। বড় বোন গান শিখতেন, ছোট্ট অবন্তি পাশে বসে থাকতেন তখন। পরে ওস্তাদের উৎসাহে নিজেও গানের তালিম নিতে শুরু করেন। গানের জন্যে অসংখ্য পুরস্কারও পেয়েছেন। ২০০৬ সালে ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিলেন, তবে বেশিদূর যেতে পারেননি।

২০১২ সালে আবারও একই মঞ্চে ফিরেছিলেন অবন্তি, ক্লোজআপ ওয়ানের সেই আসরে সেরা দশ প্রতিযোগীর একজন ছিলেন তিনি। সেই প্রতিযোগিতাতেই ‘হুইসেল কুইন’ খেতাব পেয়েছিলেন অবন্তি। মুখ দিয়ে নানা রকমের শব্দ করতে পারেন তিনি, সেটারই কিছু ঝলক সেই আসরে দেখিয়েছিলেন। আইয়ুব বাচ্চুর ‘সেই তুমি’ গানের সঙ্গে নিজস্ব ধাঁচে তার দারুণ সংগীতায়োজন মন কেড়ে নিয়েছিল বিচারকদের। পার্থ বড়ুয়া তো তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন।

ক্লোজআপ ওয়ান দিয়ে খানিকটা পরচিতি পেয়েছিলেন। এরপরে দুটি সিনেমায় তিনি প্লেব্যাকও করেছেন। এরপরেই এলো এখন পর্যন্ত অবন্তির জীবনের সবচেয়ে আলোচিত অর্জন- কাপ সং।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করা অবন্তি গত বছরের জানুয়ারিতেও অংশ নিয়েছিলেন সা-রে-গা-মা-পা-’র একটা পর্বে। ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়া তার কাপ গানগুলো দেখেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন সা-রে-গা-মা-পা- অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষক রথিজিত ভট্টাচার্য।

প্রথমে খানিকটা নার্ভাস থাকলেও, পরে ওই বাংলার এই প্রতিযোগিতায় অতিথি প্রতিযোগী হিসেবে অংশগ্রহণে রাজী হয়েছিলেন অবন্তি। তার পারফরম্যান্সে সেবারের বিচারক কুমার শানু খুব প্রশংসা করেছিলেন।

২০১২ সালে ক্লোজআপ ওয়ানের শীর্ষ দশ প্রতিযোগীর একজন হয়েছিলেন অবন্তি। এরপরে অর্ধযুগ কেটে গেছে, আমাদের রুগ্ন এই সংগীত জগত অবন্তির মতো প্রতিভাকে ব্যবহার করতেই পারেনি সেভাবে। দুইটা সিনেমাতে প্লেব্যাক করা ছাড়া আর কোথাও দেখা যায়নি তাকে। কোনো অ্যালবামও রিলিজ পায়নি তার। অবন্তি নিজেই বলেছেন, গত ছয় বছরে তার অর্জন প্রায় শূন্য।

জি বাংলার সারেগামাপা অনুষ্ঠানে অবন্তীর অংশগ্রহণের এই ভিডিওটা ভাইরাল হওয়ার পরে অবন্তীর পরিচিতি আরও একটু বেড়েছে, সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, কেন আমরা নিজেদের প্রতিভাগুলোকে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারছি না? যারা প্রশ্নটা তুলেছেন, তাদের অনেকেই হয়তো জানেন না, ক্লোজআপ ওয়ানের পর থেকে পথচলার এই সময়টায় যেটুকু দূরত্ব অবন্তি পেরিয়ে এসেছেন, সবটাই নিজের চেষ্টায়, একক কৃতিত্বে।

অবন্তির পথ চলা কিন্তু থেমে নেই। এভাবেই নিরবে নীরবে একদিন বিশ্ব জয় করে ফেলে অবন্তিরা। আর অবহেলায় এড়িয়ে যাওয়া অবন্তিদের তখন ঘরের মেয়ে বলে হাত বুলিয়ে ঘরে ঘরে মাতামাতি হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করে দিই না কেউ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!