DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

প্রতিহিংসামূলক বৈরী আচরন সত্বেও হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছিঃআদালতে খালেদা জিয়া

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃআজ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিশেষ আদালতে তুলে ধরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।এর মধ্যে রয়েছে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমা, প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার দাবি, জাতীয় ইতিহাসের প্রভাবশালী নির্মাতা শেখ মুজিবুর রহমান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নামে বিশাল দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রীর প্রবাসীপুত্রের সন্দেহভাজন একাউন্ট, সুইস ব্যাংকের একাউন্টগুলোতে টাকার স্তুপসস ইত্যাদি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আলিয়া মাদ্রাসায় অবস্থিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে চতুর্থ দিনের অসমাপ্ত বক্তব্যে দেন খালেদা জিয়া। আদালতে বলেন, প্রতিহিংসার বিপরীতে সংযম ও সহিষ্ণুতার পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা আমরা বারবার করে এসেছি। কিছুদিন আগেও আমি সংবাদ সম্মেলনে অতীতের তিক্ততার কথা তুলে ধরেছি। আমার ও শহীদ জিয়ার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ক্রমাগত অশোভন উক্তি, প্রতিহিংসামূলক বৈরী আচরণ সত্ত্বেও আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি তার প্রতি কোনও প্রতিহিংসামূলক আচরণ করবো না।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টা ৩৯ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে যান। ১১টা ৫৮ থেকে ১টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য দেন। আজানের জন্য কিছু সময়ের বিরতির পর খালেদা জিয়া আবারো বক্তব্য দেন।

প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার দাবি :
খালেদা জিয়া বলেন, শাসক মহলের ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের বিরুদ্ধে কোনো একটা রায় দেওয়া হবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, আপনি সাহস ও সততার সঙ্গে সরকারের প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার করবেন। আমাদের বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন দাবি করা হলেও সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদাহরণ সেই দাবিকে প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই স্বাধীনতার দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা বর্তমান মামলাতেও অনেকখানি বোধগম্য হবে। প্রমাণিত হবে, বিচারকগণ স্বাধীনভাবে, বিবেকশাসিত হয়ে এবং আইনসম্মতভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে সক্ষম কিনা।

জাতীয় ইতিহাসের প্রভাবশালী নির্মাতা শেখ মুজিবুর রহমান :

খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের এই দেশে ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে বিচারের নামে অবিচারের বিভিন্ন নমুনা আমরা দেখেছি। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের একজন প্রভাবশালী নির্মাতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান। তাকেও দুর্নীতির মামলার বিচারে কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও অলি আহাদের মতো জাতীয় নেতৃবৃন্দকেও কারাদ- ভোগ করেতে হয়েছে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে কবিতা রচনার দায়ে রাষ্ট্রদ্রোহী সাব্যস্ত করে কারাদ- দেয়া হয়েছিল। এই উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী, মওলানা শওকত আলী-মোহাম্মদ আলী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাস ও জওহর লাল নেহেরুর মতো নেতাদেরকেও কোনো না কোনো আদালতের রায়েই কারাদ- ভোগ করতে হয়েছে। নেলসন ম্যা-েলা, মার্টিন লুথার কিং, বার্ট্রান্ড রাসেল এবং বেনিগনো আকিনোর মতো মানুষদেরকেও কোনো না কোনো বিচারেই সাজা দেওয়া হয়েছে। তথাকথিত সেইসব রায়ের পিছনেও কোনো না কোনো যুক্তি, অজুহাত ও আইন দেখানো হয়েছিলো। হযরত ইমাম আবু হানিফা ও সক্রেটিসের মতো মহামানবদেরকেও তো বিচারের নামেই সাজা দেয়া হয়েছিল। সেই সব বিচারকে কি বিশ্ববাসী ন্যায়বিচার বলে মেনে নিয়েছে? ইতিহাসের ধোপে সে সব রায় কি টিকেছে? যাদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়া হয়েছিল, বিশ্বমানবতা ও ইতিহাস তাদেরকেই দিয়েছে অপরিমেয় মহিমা। ইতিহাস রায় দিচ্ছে, নিরপরাধকে অপরাধী সাব্যস্ত করে যারা রায় দিয়েছিলেন তারাই প্রকৃত অপরাধী। তাদের জন্য পারলৌকিক সাজা তো নির্ধারিত আছেই। এই পৃথিবীতেও তাদের নাম ও স্মৃতি যুগ যুগ ধরে অগণিত মানুষের ঘৃণা ও ধিক্কার কুড়াচ্ছে। এ জগত যতদিন থাকবে, মানুষ যতদিন থাকবে, ইতিহাস যতদিন পাঠ করা হবে এবং যতদিন মানুষের স্মৃতি থাকবে, ততদিনই তাদের প্রতি চলতে থাকবে এই ঘৃণা ও ধিক্কার।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নামে বিশাল দুর্নীতি :

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নামে আইটি খাতে বিশাল দুর্নীতি চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত রিজার্ভের অর্থ থেকে ৮শ’ কোটি টাকা কারসাজি করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রবাসীপুত্রের সন্দেহভাজন একাউন্ট :

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সম্পন্ন বিচারের নথিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রবাসীপুত্রের সন্দেহভাজন একটি একাউন্টেই প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থের কথা এসেছে। সে ব্যাপারে কোনো উচ্চবাচ্য না করে অপ্রমাণিত অভিযোগে মামলা করে সাংবাদিকদের গ্রেফতার ও হেনস্তা করা হচ্ছে। অপপ্রচার করা হচ্ছে বিএনপির বিরুদ্ধে।

সুইস ব্যাংকের একাউন্টগুলোতে টাকার স্তুপ :

বাংলাদেশের গরীব মনুষের অর্থ চুষে সুইস ব্যাংকের একাউন্টগুলোতে জমানো টাকার স্তুপ ফুলে ফেঁপে উঠছে। ২০১৫ সালে শুধু এক বছরেই এই সব একাউন্টে বেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। গত ১০ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতায় নেই। এই দশ বছরে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গবেষনা সংস্থা ‘জিএফআই’-এর হিসাবে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার হয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!