DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ভারত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তার অংশে করছে না কেনো??????

rampalseminar-copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ   ‘রামপালে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের প্রয়োজনীয়তা : হুমকির মুখে সুন্দরবন’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ, আন্তর্জাতিক গর্ব। এই বনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে রামপালে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আত্মবিনাশী ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। প্রতিবেশী দেশ ভারত নিজ দেশে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পেরে বাংলাদেশের উপর তা চাপিয়ে দিয়েছে। এটি একটি চক্রান্ত।

বক্তরা অবিলম্বে এই প্রকল্প বাগেরহাটের রামপাল থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার আহবান জানান। এক্ষেত্রে ‘স্বার্থপর ও দুর্নীতিপরায়নদের’ পরামর্শ না নিয়ে জনগনের কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যোগী হওয়ার উপর গুরুত্বরোপ করেন তারা।

আজ শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘শত নাগরিক’ নামের বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন এ সেমিনারের আয়োজন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো ভিসি প্রফেসর আ ফ ম ইউসুফ হায়দার প্রমুখ।

কবি আব্দুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার মো: আশরাফ উদ্দিন বকুল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মিত হলে এক কথায় বাতাস, জমিন ও পানি দূষিত হবে। রামপালে যাতে এই প্রকল্প না হয় সেটিই আমাদের দাবি। কারণ এতে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যে সুন্দরবন আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ।

তিনি বলেন, যদি এই প্রকল্পের ফলে কোনো ক্ষতিই না হবে, তা হলে ভারত কেন নিজ দেশে এ ধরনের প্রকল্প বাতিল করেছে।

তিনি বলেন, ইউনেস্কোতো কারো ক্ষতি চায় না। তাদের উদ্দেশ্য ঐতিহ্য রক্ষা করা। তারা এই প্রকল্পের ব্যাপক ক্ষতির বিষয়ে সতর্ক করার পরেও আমলে নেয়া হচ্ছে না। যা দু:খজনক ও বেদনাদায়ক।

তিনি বলেন, সুন্দরবনের একটি বড় অংশ রয়েছে ভারতে। তারা সেখানে এই তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করেছে। এখন প্রধানমন্ত্রীকে উদারমনে স্বার্থপর ও দুর্নীতিপরায়নদের পরামর্শ না নিয়ে জনগনের কথা বুঝে রামপালে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরে আসতে হবে। তা না হলে শতবর্ষ পরেও এর জন্য জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পরে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, সুন্দরবন জাতীয় সম্পদ। এখানে রয়েছে ৩৩৪ প্রকারের গাছপালা-লতা-গুল্ম, ৪০০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ ধরনের জীবজন্তু, রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল-নদী। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে দক্ষিণের জনগণকে রক্ষায় এই বন জাতীয় প্রহরীর ভূমিকা পালন করে আসছে। সেই সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা কেউই চায় না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ তথ্য পৌঁছানো উচিত। কেন তিনি স্বার্থবিরোধী এ প্রকল্প নির্মাণ করবেন।

তিনি জানান, শত নাগরিক রামপালে এই প্রকল্পের প্রতিবাদে সবাইকে নিয়ে সেখানে যাবে।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ভারতের আজকের অগ্রগতি, বহির্বিশ্বে তাদের মর্যাদার চাবিকাঠি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা। বাংলাদেশের জনগণের পা ধুয়ে পানি খেলেও এ ঋণ তারা শোধ করতে পারবে না।

তিনি বলেন, আজকে আমরা ছোট হয়ে আছি, আর শেখ হাসিনার চেলারা বড় হয়েছে। রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমরা চাই না। অন্যখানে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করুন। সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া হবে না। আমরা প্রয়োজনে অন্ধকারে থাকবো, কিন্তু সুন্দরবনের ক্ষতি চাই না।

তিনি বলেন, প্রকল্প নির্মাণে কমিশন নিন, কিন্তু রামপাল থেকে সরিয়ে নিন। ভারতে এ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে, তাহলে বাংলাদেশ কেন উচ্ছিষ্ট ভোগ করবে। কোনো দেশের উচ্ছিষ্ট ভোগের জন্য বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। ভারতের কাছে আমরা ঋণী তাই বলে সব কিছু উজাড় করে দিতে রাজি নই। এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভারতে ছোটখাটো তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রও করতে দেয়া হয়নি। রামপালে সুন্দরবনের কাছে এ প্রকল্প তারা চাপিয়ে দিয়েছে। এর উদ্দেশ্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, ভিন্ন চক্রান্তও রয়েছে।

তিনি বলেন, রামপালের পরিবর্তে এই প্রকল্প বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের দিকে করা যেতে পারে। এতে করে ভারতের ওই পাশের রাজ্যগুলোতেও উন্নয়নের জোয়ার বইতে পারে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী, তিনি যেভাবেই নির্বাচিত হোন না কেন, তিনি অবশ্যই দেশের মঙ্গল চান। কিন্তু তার চারিদিকে একটি চক্র গড়ে উঠেছে, রয়েছে চর ও নিজের দল। তা না হলে তিনি এই প্রকল্পের বিষয়ে এতো শক্ত হবেন কেন। তিনি এই প্রকল্প নির্মাণের পক্ষে জনগণের মতামত নেয়ার জন্য গণভোটের আয়োজন করার পরামর্শ দেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভারত হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশকে সিকিমের দিকে ঠেলে দিতে চায়।

তিনি বলেন, রামপাল প্রকল্পের ক্ষতির বিষয়ে স্থানীয় জনগণকেও বুঝাতে হবে। তাদের বলতে হবে দু’দিনের কোরমা-পোলাও খাবা, নাকি অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের ছুড়ির নিচে যাবা।

প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেন বলেন, রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প কারিগরী, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিপত্তি তৈরি করবে। ভারতের গরীব জনগণের টাকায় বাংলাদেশের ক্ষতি করা হচ্ছে, এটি ভারতের জনগণকেও জানানো প্রয়োজন। ভারত সরকার যেহেতু নিজ দেশেই এ ধরনের প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে, তাদেরই উচিত রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া।

আ ফ ম ইউসুফ হায়দার বলেন, আমরা ভারত কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছি না, যে স্থানে এই বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে, তা সবার জন্য বিপদজনক। এর ফলে সুন্দরবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এই প্রকল্প অন্যত্র নিতে হবে। রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সঠিক তথ্য না দিয়ে জনগনকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!