DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

স্বদেশে শান্তি অবহেলিত হলেও বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ এখন রোল মডেলঃ জাতিসংঘ

santi copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস রোববার (২৯ মে)। ‘অনারিং দ্য হিরোজ (বীরদের সম্মানে)’ এ স্লোগানে এবছর বিশ্বজুড়ে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দিবসটি। জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত ‘ব্লু  হেলম্যাট’ বাহিনীর ৩ হাজার ৪০০ প্রয়াত সদস্যকে এ দিনে শ্রদ্ধা জানানো হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শান্তিরক্ষী বাহিনীর এ সদস্যরা প্রাণ হারিয়েছেন।

তবে বিশ্ব ব্যাপি বিভিন্ন দেশে প্রভুত সুনাম অর্জন করলেও স্বদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে বাংলাদেশের স্বশস্ত্র বাহিনীর অনাগ্রহ এবং নির্লাপ্ততা দেশের সর্বস্তরের জনগনের মাঝে ব্যপক অসন্তোষের কারন হয়ে দেখা দিয়েছে।

এই দিবসটিতে বাণী দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। বাণীতে তিনি বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন বিপজ্জনক পরিবেশে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা রাখছেন তারা।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জাতিসংঘ আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারে। বলেছেন, ‘শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ  বিশ্বে এখন একটি ব্র্যান্ড নেম (রোল মডেল)।’

শান্তিরক্ষী হিসেবে বাংলাদেশি নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে একটি মাইলফলক। বর্তমানে ২০৭ নারী সদস্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী হিসেবে বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করছেন। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর ২৪, বিমান ৯, নৌবাহিনী ৩ এবং পুলিশের ১৭১ জন সদস্য রয়েছেন। তবে শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৭ নারী সদস্য বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনী ২২১, নৌ ৬, বিমান ৪৬ এবং পুলিশ বাহিনীর ৭৭৪ জন সদস্য।

শান্তিরক্ষী হিসেবে বাংলাদেশের নারী সদস্যদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন মিশনের প্রধান সমন্বয়ক হার্ভে ল্যাডসাউ।আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর বিবদমান সীমান্তে শান্তিসেনা মোতায়েনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৮ সালের মে মাসে শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রতিষ্ঠা। ওই সময় এ বাহিনীর নাম দেয়া হয় ‘ইউএন ট্রুস সুপারভিশন অরগানাইজেশন’ (জাতিসংঘ সমঝোতা তদারকি সংস্থা)। ২০০২ সালের ১১ ডিসেম্বর সর্বসম্মত এক প্রস্তাবে ২৯ মে’কে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস হিসেবে অনুমোদন করে জাতিসংঘ।

প্রতিষ্ঠার গত ৬৮ বছরে জটিল পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্বজুড়ে ৭১বার শান্তিমিশন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জাতিসংঘ। এসব শান্তি মিশনে বিভিন্ন দেশের ১০ লাখেরও বেশি শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করেছে।

বিশ্বের চার মহাদেশের ১৬ গোলযোগপূর্ণ এলাকায় শান্তিরক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে ১ লাখ ২৪ হাজারেরও বেশি শান্তিরক্ষী। জাতিসংঘের ৪৬ সদস্য দেশ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সৈন্য দিয়ে সহায়তা দিয়েছে। এদের অন্যতম বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৪ দেশে শান্তিরক্ষার এ কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর ৭ হাজারের কিছু বেশি সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ৪ হাজার ৯২৬,  নৌবাহিনীর ৫২৪, বিমান বাহিনীর ৬৩৯ এবং পুলিশের ১ হাজার ১১১ জন সদস্য রয়েছে। 

দেশগুলো হচ্ছে- কঙ্গো, আইভরিকোস্ট, সোমালিয়া, লাইবেরিয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, লেবানন, হাইতি, দক্ষিণ সুদান, সুদান (দারফুর), পশ্চিম সাহারা, মালি, নেপাল, আফগানিস্তান এবং জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন।

ইরাক-ইরান যুদ্ধ বন্ধে শান্তি মিশনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের এ কার্যক্রম শুরু। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে প্রথমে অংশ নেয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা শান্তিরক্ষা মিশনে প্রথম অংশ নেয় ১৯৯৩ সালে। নামিবিয়ায় ১৯৮৯ সালে অংশ নিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুলিশ।

ওইসব দেশে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা মিশন এলাকায় বিবদমান দলকে নিরস্ত্রীকরণ, মাইন অপসারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা, সড়ক ও জনপথ এবং স্থাপনা তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। 

এদিকে, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘ পরিচালিত ৬৮ মিশনের মধ্যে ৫৪টিতে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৯ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্য অংশ নিয়েছে। বিশ্বের ৪০ দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের সদস্যরা। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৪২, নৌবাহিনীর ৩ হাজার ৮৭৫, বিমান বাহিনীর ৫ হাজার ২১৮ এবং পুলিশের ১৬ হাজার ১৯৪ সদস্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বছরে গড়ে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার মতো বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, (গত ১২ মে, ২০১৬) জাতিসংঘ শান্তি মিশনে স্থলসেনা, নৌ, বিমান এবং পুলিশ বাহিনীর মোট ১২৮ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সেনা বাহিনীর ১০৩, নৌ ৩, বিমান বাহিনী ৪ এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্য ১৮। এছাড়া আহত হয়েছেন ২শ। এর মধ্যে সেনা ১৮৪, নৌ ১, বিমান বাহিনী ১ এবং পুলিশের  ১০ জন সদস্য রয়েছেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!