দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ সরকার মুখে যতো বড় বড় কথাই বলুক না কেনো প্রবল ‘নিরাপত্তা সঙ্কটে’ বিপদে পড়েছে বিদ্যুৎ খাত তথা সরকারি প্রতিষ্ঠান ইলেক্টিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি)।
কোম্পানিটির সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ৪১ কর্মী প্রত্যাহার নিয়ে এ সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। এ প্রকল্পটির ঠিকাদার স্পেনের আইসোলাক্স ইঞ্জিনিয়ার ‘নিরাপত্তাহীনতা’র কথা বলে তাদের কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে।
ফলে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ। এতে ৯০ শতাংশ কাজ সম্পাদনের পরও এ কেন্দ্র সময়মতো উৎপাদনে আসা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে গ্যাস সরবরাহ (জিএসএ) ও বিদ্যুৎ বিক্রির (পিপিএ) চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
চুক্তি অনুসারে গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেলের এ কেন্দ্রটির সিম্পল সাইকেল ইউনিটটির চলতি মাসের ৮ নভেম্বর উৎপাদনে আসার কথা ছিল। গত ৫ অক্টোবর চিঠি দিয়ে আইসোলাক্স সরকারি তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত তাদের ৪১ বিদেশি কর্মীকে প্রত্যাহার করে নেয় ৷
যার মধ্যে ৩৮ জনই সিদ্ধিরগঞ্জ প্রকল্পে কাজ করতো। সরকার ৫ নভেম্বরের মধ্যে আইসোলাক্স কর্মীদের কাজে যোগ দিতে বলা হলেও এখনও তারা দেশেই আসেনি। এসব কর্মী আদৌ কাজে যোগ দেবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
এদিকে মঙ্গলবার আইসোলাক্সের জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য শক্তি বিভাগের মহাপরিচালক হোসি দাগো’র নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে সচিবালয়ে কার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাদের (আইসোলাক্স কর্মীদের) দ্রুত কাজে যোগ দিতে হবে।
নয়তো চুক্তি অনুসারে জরিমানা করা হবে। বিপরীতে আইসোলাক্সের পক্ষ থেকে আবারো নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ৯ দশমিক ২৪ একর জমির ওপর নির্মিতব্য এ কেন্দ্রটির জন্য ঠিকাদার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১২ সালের ২৮ মে। ঠিকাদার হলো যৌথভাবে স্পেনের আইসোলাক্স ইঞ্জিনিয়ার ও স্যামসাং সি অ্যান্ড টি করপোরেশন। বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য চলতি বছরের ১৮ আগস্ট তিতাস গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ইজিসিবি। আর বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে এ বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর চুক্তি হয়েছে।
উল্লেখ্য, পরপর দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের জেরে গত ৩ অক্টোবর নিজেদের নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে স্পেন। এরপর ৫ অক্টোবর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), ইজিসিবি, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও বিদ্যুৎ বিভাগকে নিজেদের কর্মীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কে চিঠি দিয়ে অবহিত করে আইসোলাক্স। এরপর ৪১ কর্মীকে সাময়িকভাবে সরিয়ে নেয় কোম্পানিটি। এর মধ্যে ইজিসিবির সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৩৮ জন, পিডিবির বিবিয়ানা-৪৫০ মেগাওয়াটের ১ নম্বর ইউনিট থেকে দুজন এবং নর্থ ওয়েস্টের খুলনা-১৫০ মেগাওয়াট থেকে একজনকে প্রত্যাহার করা হয় ৷
স্পেন ব্যাতিত আর্জেন্টিনা ও বুলগেরিয়ার নাগরিকও ছিল। নিরাপত্তা চেয়েছে অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও সৃষ্ট পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্য বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোতেও নিরাপত্তা বাড়াতে বলেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ভোলার বোরহাউদ্দির উপজেলায় সদ্য নির্মিত ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫৬ জন বিদেশির জন্য নিরাপত্তা চেয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
গত ৮ নভেম্বর লেখা চিঠিতে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) অর্থায়নে ভোলায় ২২৬ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখান থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডেও যাচ্ছে। প্রকল্পটির টার্নকি ঠিকাদার চীনের চেংদা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির ৫৫ জন প্রকৌশলী কেন্দ্রটির পরিচালনা ও অন্যান্য কাজে নিয়োজিত আছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন প্রকল্প এলাকার ভেতরে আর বাকিরা প্রকল্প এলাকার নিকটে অবস্থান করছেন। প্রকল্পের পরামর্শ দাতা প্রতিষ্ঠান জেভিসিএ অব ডিসিপিএল এন্ড কেপি এর একজন ভারতীয় প্রকৌশলীও প্রকল্পের ভেতরে রয়েছেন।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন।’ এছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার নিরাপত্তা জোরদার করতে পিডিবি’র পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছে। গত রোববার পিডিবির কোম্পানি সচিব জহুরুল হক এ চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনটি নির্দেশন দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবারহ ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চত করতে স্থানীয় প্রশাসন (জেরা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার) এর সঙ্গে যোগাযোগ করে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীদের আরও সর্তক করতে হবে। যেসব স্থানে এখনও সিসিটিভি বসানো হয়নি, তা দ্রুত স্থাপন করতে হবে।