DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

টক অব দি কান্ট্রিঃ কে হচ্ছেন ঢাকা উত্তরে ২০ দলীয় জোট সমর্থীত মেয়র প্রার্থী???

bnpcityঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় সেখানে উপযুক্ত প্রার্থী কে হতে পারেন, তা নিয়ে ভাবছে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব।

 

tabithঢাকা উত্তর সিটিতে কাকে সমর্থন দেয়া হবে, এ নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে চলছে আলোচনা। রয়েছে গুঞ্জনও , বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী উত্তর সিটিতে বিএনপি জোটের সমর্থন পেতে পারেন,এমনটিও শোনা যাচ্ছে, যদিও মিন্টুর ছেলের প্রার্থিতা বহাল রয়েছে।

 

এদিকে মাহীকে সমর্থন দেয়ার বিষয়ে জোটের শরিক দলগুলোসহ বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলো জোর আপত্তি জানিয়েছে। তারা বলছে, আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথের বিকল্প যদি কাউকে ভাবা হয়, সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা ববি হাজ্জাজকে বেছে নেয়া যেতে পারে। কারণ তিনি এখন জাতীয় পার্টির কেউ নন। মাহীকে সমর্থন দেয়া হলে ভবিষ্যতে বিএনপির জন্য ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সামপ্রতিক সময়ে বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়ার পাশে বারবার দাঁড়িয়েছেন বি. চৌধুরী। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবাষির্কীসহ দলের অনেক অনুষ্ঠানেই যোগ দিচ্ছেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। মাহী যোগ্য সম্মান পেলে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপিতে ফিরতে চান এমন গুঞ্জনও রয়েছে।

 

mahiসেক্ষেত্রে মাহীই হতে পারে বিএনপির ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চূড়ান্ত প্রার্থী। জানা গেছে, দলের একটি বড় অংশ মাহী বি চৌধুরীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ করছে। আরেকটি পক্ষ আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালের পক্ষে কাজ করছে।

 

তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কাকে সমর্থন দেয়া হবে- এ বিষয়ে এখনো স্পষ্ট করা হয়নি। এদিকে মিন্টুর ছেলের চেয়ে মাহী বি. চৌধুরীর পরিচিতি অনেক বেশি। বিএনপির বড় অংশটিই চাচ্ছেন মাহীকে। এক্ষেত্রে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে নতুন করে আলোচনা হতে পারে। অপরদিকে তাবিথ আউয়াল রাজনীতির মাঠে একেবারেই নতুন। তিনি বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের কাছে পরিচিত নন। চলমান সরকার পতন আন্দোলন বেগবান করতে হলে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে জয়ী হতে হবে বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

 

অপর দিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে শুনানী শেষে তাবিথ আউয়ালের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন কমিশনার মো: জিল্লার রহমান। তিনি বলেন, গত ২৯ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন পর্যন্ত তাবিথ আউয়াল ঋণখেলাপী ছিলেন না। অতএব তার বিরুদ্ধে সোনালী ব্যংকের আপীল অগ্রাহ্য করা হলো। ঋণ খেলাপীর অভিযোগে তাবিথ আউয়ালের মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করেছিল সোনালী ব্যাংক। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৭ টায় এর উপর শুনানী হয়। তাবিথের পক্ষে শুনানীতে অংশ নেন আইনজীবী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ, মাহবুব উদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, এহসানুর রহমান প্রমুখ।

 

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর থেকে ছেলে তাবিথ আউয়ালকে বিএনপির পক্ষ থেকে উত্তরের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভেবে রাখা হয়। গত সোমবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা করেছেন আবদুল আউয়াল মিন্টুর স্ত্রী নাসরিন আউয়াল ও ছেলে তাবিথ আউয়াল।

 

রাত সোয়া ১০টার দিকে তাঁরা গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসায় যান। এ বিষয় জানতে চাইলে তাবিথ আউয়াল বলেন, তাঁর মা ও অন্য ভাইয়েরা মিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেছেন। এটি ছিল একটি পারিবারিক সৌজন্য সাক্ষাৎ। এর বাইরে কিছু না। যদিও অন্য একটি সুত্র থেকে জানায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এসময় তাবিথ আউয়ালকে পুরোদমে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন।

 

ছাত্রদলের সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় তারেক রহমান যখন গ্রেফতার হন তখন মাহী বি চৌধুরী কটাক্ষ করে কথা বলেছিলেন। বিএনপিকে নিয়ে বাপ-ছেলে ষড়যন্ত্র করেছেন। এ কথা কি নেতারা ভুলে গেছেন। যদি মাহীকে বিএনপি সমর্থন দেয়, তাহলে রাজনীতিতে আরো একটি ভুল করবে বিএনপি।

 

ওই নেতা বলেন, তাবিথকে সমর্থন না দিলে বিকল্প হিসেবে ববি হাজ্জাজকে সমর্থন দিতে পারে। কারণ উত্তরে এখন যারা আছেন, তাদের মধ্যে ববিই সার্বিকভাবে যোগ্য। লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টির (এলডিপির) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “জোটের বাইরে কাউকে ঢাকা উত্তর সিটিতে সমর্থন দিলে আমাদের আপত্তি থাকবে। মাহীর ক্ষেত্রে তো থাকবেই। কারণ মাহী জোটের কেউ নন, তার আগের ভূমিকা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।”

 

শাহাদাত হোসেন বলেন, “অনেকবার বিকল্পধারাকে জোটভুক্ত হতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে আসেনি।” মাহীকে সমর্থন না দিতে ইতিমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন জোটের শরিক ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি।

 

সাইফুদ্দিন বলেন, “আমি তাকে আমার দলের আপত্তির কথা জানিয়েছি। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে টেলিফোনে না পেয়ে এসএমএস করে বিষয়টি জানিয়েছি।”

 

জোটের আরেক নেতা বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বলেন, “যুদ্ধাপরাধী আছে বলে বিকল্পধারা বিএনপি জোটে আসেনি। কিন্তু এখন মেয়র হওয়ার জন্য তাদের যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন লাগে? এটা অনৈতিকতা ও সুবিধাবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।” এ বিষয়ে আপত্তি রয়েছে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের।

 

মিরপুর থানা যুবদলের এক নেতা বলেন, “মাহীদের পেছনের কথা কি সিনিয়র নেতারা ভুলে গেছেন? আমরা কিন্তু ভুলি নাই।” তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে সফু ভাইদের বলেছি, মাহীকে সমর্থ দিলে আমরা কিন্তু তার পক্ষে কাজ করব না।” স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রের একজন সহসভাপতি, যিনি পেশায় আইনজীবী বলেন, “চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাহী বি চৌধুরী কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। টিভি টকশোতে যা দেশের সবাই দেখেছে। এরা একধরনের সুযোগসন্ধানী লোক। তাদের সমর্থ করলে দল আবারো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।”

 

স্বেচ্ছাসেবক দলের ওই নেতা কেন্দ্রের সিনিয়র নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যদি তাবিথের বিকল্প কাউকে ভাবা হয় সেক্ষেত্রে ববি হাজ্জাজকে বিএনপিতে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে। কারণ ববি কোয়ালিফাইড। তাছাড়া তিনি এখন জাতীয় পার্টিরও কেউ নন।” জামায়াতে ইসলামীর রমনা থানা জামায়াতের দায়িত্বশীল ও সাবেক শিবিরের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক হতে বিকল্পধারাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তখন বি চৌধুরী একমত হলেও মাহী বি চৌধুরীর কারণে জোট করতে ব্যর্থ হয়। তখন জামায়াতে ইসলামী জোটে থাকায় মাহী জোট করেননি। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। আমরা বিএনপিকে বিষয়টি জানিয়েছি।”

 

জোটের শরিকদের আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এ বিষয়ে দল ও জোটের শরিক অনেকেই আমাকে বলেছে। তাদের আপত্তির যৌক্তিকতা আছে। কিন্তু এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন খালেদা জিয়া। তবে সুযোগ থাকলে জোটের শরিকদের আপত্তির বিষয়টি তাকে ( বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ) অবহিত করব।”

 

'আদর্শ ঢাকা আন্দোলন'এর আত্মপ্রকাশঃ

এদিকে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিপন্থী নাগরিকদের মোর্চা ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই ব্যানারেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাবেন তারা। এ কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমেদকে আহ্বায়ক এবং বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।

 

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এমাজউদ্দীন আহমেদ কমিটির গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র আহ্বায়ক কমিটিতে রয়েছেন ১০০১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। আগামীকাল ১০০১ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি আরো বলেন, ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের স্নোগান হবে -নিরাপদ ঢাকা চাই, পরিচ্ছন্ন ঢাকা চাই‘। বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক ড. আ ফ ম. ইউসুফ হায়াদার, সদরুল আমীন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী এ কমিটিতে রয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

 

আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। যদিও বিএনপি-সমর্থক বিশিষ্টজনদের সংগঠন ‘শত নাগরিক’-এর ব্যানারে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীদের ঢাকায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ নিয়ে বিএনপিপন্থী পেশাজীবীদের একটি অংশ আপত্তি তোলে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এই কমিটি করা হয়।

 

এদিকে গত শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনায় শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, সিটিতে জিতলে না পারলে আরো দুর্ভোগ হবে। জিয়া কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনতে ২০দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী কাজে বাধা না দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।

 

প্রার্থীদের বিজয়ী করতে জোটের নেতাকর্মীদের আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই নির্বাচনে যদি বিজয় অর্জিত না হয়, বিজয় ছিনিয়ে আনতে না পারি তাহলে আমাদের আরো দুর্ভোগ পোহাতে হবে। বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারলে ফ্যাসিবাদ, নাৎসিবাদকে ধ্বংস করা অত্যন্ত সহজ হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!