DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে চিত্র নায়ক সালমান শাহ হত্যা মামলা

salman-shahবাংলা চলচ্চিত্রের ক্ষণজন্মা নায়ক চৌধুরী মোহাম্মাদ ইমন ওরফে সালমান শাহ (২৫) হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে।

দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ঢাকা সিএমএম আদালতে ডিপফ্রিজে থাকা মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলেছে। সুদীর্ঘ তদন্তের পর সম্প্রতি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এমদাদুল হক অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে গত ৮ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নিলুফার চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে ২১ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হতে নোটিশ দেয়া হয়। ওই নোটিশ পেয়েই রোববার তিনি আদালতে হাজির হন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার দে আদালতে নীলা চৌধুরী ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজি দাখিল করবেন বলে সময় প্রার্থনা করেন।

শুনানি শেষে বিচারক আগামী ২১ জানুয়ারি নারাজি দাখিলের জন্য সময় মঞ্জুর করেন। বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত সময় আবেদনের শুনানি করেন।

এদিকে মামলাটির শুনানির সময় সালমান শাহ ফ্যান ক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন পিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক রিপনের নেতৃত্বে বেশ কয়েক জন ভক্ত আদালতের সামনে সালমান শাহের মৃত্যুর বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেন। ওই সময় সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীও তাদের সঙ্গে যোগ দেন।

সালমান শাহ হত্যা সম্পর্কে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলে আত্মহত্যা করেনি। আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। অজ্ঞাতকারণে প্রকৃত সত্য আড়ালে থেকে যাচ্ছে। জুডিশিয়াল তদন্ত আমরা বিশ্বাস করি না। নারাজি দাখিল করবো।’

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ১১/বি নিউস্কাটন রোডের ইস্কাটন প্লাজার বাসার নিজ কক্ষে সালমান শাহকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে প্রথমে হলি ফ্যামিলি ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিংসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

এ নিয়ে সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। মামলা প্রথমে রমনা থানা পুলিশ পরে ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির তদন্ত করেন। তদন্তকালে সালমান শাহর মরদেহের প্রথম ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

প্রতিবেদনে তারা সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে বর্ণনা করে। পরে সালমান শাহর পরিবার ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আপত্তি দিলে মরদেহ কবর থেকে তুলে ফের ময়নাতদন্ত করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

তাদের প্রতিবেদনে, মরদেহ অত্যধিক পচে যাওয়ার কারণে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় কারা সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়।

ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ওই প্রতিদেনের বিরুদ্ধে বাদী পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে নারাজি দেন। নারাজিতে তিনি সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা হক, জনৈক আবুল হোসেন খান, গৃহপরিচারিকা ডলি, মনোয়ারা বেগম, সিকিউরিটি গার্ড আব্দুল খালেক, সামিরার আত্মীয় রুবি, এফডিসির সহকারী নৃত্য পরিচালক নজরুল শেখ ও ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত মর্মে উল্লেখ করেন।

নারাজীর পর আদালত ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মজিবুর রহমানের কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়। এ তদন্ত কর্মকর্তাও অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ার এক পর্যায়ে ১৯৯৭ সালের ১৯ জুলাই সালমানের বাবার ডিওএইচএসের (জোয়ার সাহারা) বাসায় রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ নামীয় জনৈক যুবকের আগমন ঘটে।

মিথ্যা পরিচয়ে ওই যুবকের বাসায় প্রবেশের অভিযোগে তাকে ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশের কাছে সোপৎর্দ করে একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় রিজভীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি সালমান শাহ হত্যার কথা স্বীকার করে তার সহযোগী হিসেবে ডন, ডেভিড, ফারুক, ব্যবসায়ী (বর্তমানে প্রবাসী) আজিজ মোহাম্মাদ ভাই, সাত্তার, সাজু, সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা, সামিরার মা লতিফা হক লুসি ও জনৈক রুবির নাম প্রকাশ করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ২২ জুলাই আদালতে তার স্বীকারোক্তিও রেকর্ড করা হয়।

এরপর বাদী সালমানের বাবা কমর উদ্দিন অপমৃত্যুর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করেন। এরপর আদালত ১৯৯৭ সালের ২৭ জুলাই অপমৃত্যুর মামলা এবং ক্যান্টনমেন্ট থানার মামলা একত্রে তদন্তের জন্য সিআইডির ওপর তদন্তভার হস্তান্তর করেন।

সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খালেকুজ্জামান প্রায় সাড়ে ৩ মাস তদন্তের পর ১৯৯৭ সালের ২ নভেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, বাদীপক্ষ মামলাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করেছে। জনৈক রিজভী হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু রিজভীকে পরে তিনি জেলখানায় জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বলেন, সালমান শাহ হত্যার বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই।

এতে প্রমাণিত হয় যে তার স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছা প্রদত্ত ছিল না। মূলত সালমান শাহর সঙ্গে নায়িকা শাবনূরের অতিরিক্ত ঘনিষ্টতার কারণে তার স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহের সূচনা হয়। দাম্পত্য কলহের কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেন। যা ময়না তদন্ত রিপোর্ট সমর্থন করে। তাই সালমান শাহর মৃত্যু আত্মহত্যাই।

আদালতে ওই প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার পর ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ফের নারাজি দাখিল করা হয়। যার ভিত্তিতে আদালত ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।

প্রায় ১৫ বছর ধরে চলমান বিচার বিভাগীয় তদন্তে সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিন ও মা নিলুফার চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীসহ ৫ জন সাক্ষ্য দেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!