DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

আওয়ামী লীগে অস্থিরতা বাড়ছে!

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে অস্থিরতা। দলের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড ও সিনিয়র নেতাদের বেফাঁস মন্তব্যের কারণে দিন দিন এ অস্থিরতা আরো বাড়ছে। দেশের সার্বিক অবস্থার অবনতি এবং আগামী দিনে রাজনৈতিক সংঘাতের আশংকায় চরম অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বেফাঁস মন্তব্যের কারণে ইতোমধ্যে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও দীর্ঘদিন পর সারাদেশে চলছে দলীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এদিকে আন্দোলন সংগ্রামের সুতিকাগার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগেও চলছে দ্বন্দ-সংঘাত। সব মিলিয়ে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।


গত ১২ নভেম্বর (বুধবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ছাত্রলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এইচ টি ইমাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে বলেছেন, ‘নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ পুলিশ ও প্রশাসনের যে ভূমিকা, নির্বাচনের সময় আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে।গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে একটা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগের কিছু শীর্ষ নেতারা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের মেয়ে শারমিন আহমেদ আর এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১ ভেতরে-বাইরে' বই বিস্ফোরণের পর ধর্ম নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আরেক বিতর্কের জম্ম দিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

গত ১৪ নভেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বক্তব্যের কারণে সরকার ও দল বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এছড়াও বৈঠকে উপস্থিত দলের সিনিয়র নেতারাও তার এ বক্তব্যে বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গত ১৭ নভেম্বর মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকে প্রভাবশালী কয়েকজন মন্ত্রী এইচ টি ইমামের অপসারণের দাবি তুলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে কোন কথা বলেন নি। তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি ভালো কাজ করার জন্য। যখন একটা ভালো কাজ নিয়ে এগোই তখন আপনারা সেটা সম্পর্কে বলবেন। তা না করে নতুন কিছু বলে বিতর্ক সৃষ্টি করা ঠিক নয়। যার যার দ্বায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হবে।'

এদিকে গত ৮ নভেম্বর (শনিবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকের বলেছেন, দুই ভাগে বিভক্ত করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হবে। এরপর নগর আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী অংশ দুই ভাগে বিভক্ত কমিটি ঠেকাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এ নিয়ে গত ১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এতে ১০ কর্মী আহত হয়। মূলত ঢাকা মহানগর কমিটি এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই ঘোষণা করা হচ্ছে না বলে নগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা টাইমনিউজবিডি.কমকে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে ১৮ বছর পর গত ১৪ নভেম্বর পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের শুরুতে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ শাহজাহান মিয়া গ্রুপ এবং পৌর মেয়র ডা. শফিকুল ইসলাম গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় শতাধিক চেয়ার। এ সময় উভয় গ্রুপের অন্তত ২৫ জন আহত হয়।

এছাড়াও ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেয়াখালী, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

গত ১৮ নভেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন- আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থাকবেন। তবে মার্চের বেশি এ সরকার টিকবে না। দেশের সর্বত্র জনগণের মাঝে এই জল্পনা কাজ করছে। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও একাধিক বার বলেছেন- সময় মত আন্দোলন করে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন  বলেন, সবকিছুই ঠিকমত চলছে। দলের নিয়ম-শৃঙ্খলার অনুযায়ীই চলছে। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন, অপ্রয়োজনীয় কথা বলার কারণে দলের নিয়ম অনুযায়ী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর এইচ টি ইমাম যা বলেছেন- সেটা তো তিনি নিজে সংবাদ সম্মেলন করে পরিষ্কার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সঠিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

আগামী মার্চের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানো হবে বিএনপি নেতাদের এমন হুমকি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম হুমকি তো তারা বার বার দিয়েই যাচ্ছে। ক্ষমতা থাকলে করে দেখাক। খালি কলসি বাজে বেশি। দেখি মার্চে ওনারা কি করতে পারেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!