DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

এইচ টি ইমামের বক্তব্য নিয়ে তোলপাড়

98345_1বিসিএসে তোমরা লিখিত পরীক্ষাটা ভালো করে দাও। বাকি ভাইভা পরীক্ষাটা আমরা দেখব। আমরা তোমাদের পাশে দাঁড়াব

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, 'বিসিএসে তোমরা লিখিত পরীক্ষাটা ভালো করে দাও। বাকি ভাইভা পরীক্ষাটা আমরা দেখব। আমরা তোমাদের পাশে দাঁড়াব।'

 

 

 

 

 

 

 

 

এখানে উল্লেখ্য  ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারী খন্দকার মোশতাক সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন তৎকালীন মোশতাকের অতি বিশ্বস্ত সচিব এই এইচ টি ইমাম।অথচ তিনি কোন যাদু বলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম নীতি নির্ধারক হলেন তা জনগনের বোধগম্য নয়।


বিসিএস পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে এইচ টি ইমাম বলেন, 'মেধাবীরাই ছাত্র রাজনীতি করে এবং তারাই দেশকে নেতৃত্ব দেয়। তোমাদের হাতেই রয়েছে দেশের ভবিষ্যৎ। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে তোমাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের উচিত।'বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জেল হত্যাদিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'শুধু লেখাপড়াতে নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সেক্টরে যতটুকু পারো ছড়িয়ে পড়। এর জন্য যত সহযোগিতা লাগে আমরা করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা তোমাদের সঙ্গে আগেও ছিলাম, এখনো আছি।'

এইচ টি ইমাম আরো বলেন, 'যখনই প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো বায়োডাটা নিয়ে যাই তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন_ এরা কি সত্যিই ছাত্রলীগ করেছে? এরা কোথায় ছিল? অনেকেই চাকরির কথা বলে। তোমরা কি মনে কর আমার চেয়ে কিংবা নেত্রীর চেয়ে অন্য কারোর দরদ বেশি আছে? তোমাদের চাকরির জন্য আমরা তো জান পরাণ দিয়ে চেষ্টা করি।'

তিনি বলেন, 'তোমাদের সিনিয়র যারা তাদের বিষয়ে আমরা চিন্তা করছি। ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বের আগে যারা বেরিয়ে গেছে তাদের এখন প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার। তাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে তোমাদেরই দেশের ভবিষ্যৎ সরকারি চাকরি, ব্যবসাসহ সব ক্ষেত্রে সেরা হতে হবে।'

উপদেষ্টা বলেন, যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে পাকিস্তান একের পর এক যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে, তাতে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যায় না। এটা প্রমাণিত অপরাধ। এ নিয়ে কারো কথা বলার সুযোগ নেই।

এইচ টি ইমাম বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানিদের পুনর্বাসন করে সর্বপ্রথম দেশদ্রোহী কাজ শুরু করেছিলেন। যেদিন থেকে তারা এ দেশে প্রবেশ করল, সেদিন থেকে মুক্তিযোদ্ধা নিধন শুরু হলো। যে ষড়যন্ত্রের মূলহোতা ছিলেন জিয়া। তিনি কালুর ঘাট থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ঘোষণার পর অনুসারীদের নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছিলেন। জিয়া সত্যিকার অর্থে কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি।

তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রচুর সময় দেয়া হয়েছে। সব দল আলোচনা করার জন্য সাড়া দিলেও তিনি সাড়া দেননি। তিনি দেশে শান্তি চান না। পেছনের দরজা দিয়ে খুন-খারাবি করে ক্ষমতায় আসাই তার মূল উদ্দেশ্য।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের সঞ্চালনায় সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক ক্যাপ্টেন এবিএম তাজুল ইসলাম, বিশিষ্ট কলামিস্ট প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন পাটোওয়ারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এদিকে এইচ টি ইমামের প্রকাশ্য এই বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই বিব্রত হয়েছেন। ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকেই। সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেলিন  বলেন, 'তিনি এ ধরনের বক্তব্য কেন দিয়েছেন- তাকেই জিজ্ঞাসা করুন। আমার চেয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।'

এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। তিনি বলেন, 'কী উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি এই কথা বলেছেন, সেটা আগে জানতে হবে। তাছাড়া এই নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।' এইচ টি ইমামের এই বক্তব্য ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে এমন তথ্য জানালে কোনো কথা না বলে ফোন রেখে দেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ  বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখে এ ধরনের বক্তব্য আসা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তারা দেশের প্রতিটি সেক্টরে দলীয়করণ শেষে এখন প্রশাসন ও শিক্ষায় হাত দিয়েছেন। কোনো সুস্থ-মস্তিষ্কের মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারে না। তিনি বলেন, এইচ টি ইমাম তো প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা, অনেক মন্ত্রী-এমপিরাও এ ধরনের কথা বলেছেন। তাদের মতো একতরফা নীতিতে চলমান রাজনৈতিক দল এ ধরনের বক্তব্য ছাড়া আর কী দিতে পারে?

এ বক্তব্যে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদরাও। এ ধরনের বক্তব্য চাকরিপ্রার্থী লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের মনে হতাশা তৈরি করবে বলে তারা মনে করছেন। একইসঙ্গে এর মাধ্যমে শিক্ষিত বেকাররা হাল ছেড়ে দেবে বলে মন্তব্য তাদের। 

বাংলা একাডেমির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এ ধরনের কথা বলে অন্যায় করেছেন। তিনি বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিভিন্ন পরীক্ষাগুলো প্রতিযোগিতামূলক। সুতরাং এখানে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তাদের কর্মীদের উত্তীর্ণ করার দায়িত্ব নিলে সেটা ন্যায়নীতি এবং গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যবিরোধী বলে গণ্য হবে।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার এ বক্তব্যকে 'অবাঞ্ছিত প্রস্তাব' আখ্যা দিয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, পরীক্ষায় পাস-ফেল করা রাজনৈতিক কোনো ব্যাপার নয়। বিসিএসসহ যে কোনো ধরনের পরীক্ষাই প্রতিযোগিতামূলক। এখানে রাজনৈতিক সংগঠন উত্তীর্ণ করাতে পারে না। সুতরাং রাজনৈতিক নেতাদের মুখ এ ধরনের প্রস্তাবনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অবাঞ্ছিত। এর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশে গভীর হতাশা তৈরি হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, ছাত্রত্বের প্রধান যোগ্যতা হচ্ছে তাকে লেখাপড়া করতে হবে। এবার নতুন পরিমাপক সংযোজন হলো তাকে 'ছাত্রলীগ' করলেই হবে। তাহলেই চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে মেধা নির্বাসনে যাচ্ছে। এ ধরনের বক্তব্যে প্রকৃত মেধাবীরা আরো হতাশ ও অনুৎসাহিত হবেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, চাকরি পেলে পদোন্নতির মানদ- কী হবে? এক্ষেত্রে কি যুবলীগ কিংবা আওয়ামী লীগ করতে হবে?

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!