DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের জমজমাট বিয়ে

1414773829পঞ্জিকার হিসাবে কেটেছে ৬৭টি বসন্ত, তবু যেন তারুণ্য ধরে রেখেছিলেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব। তার ভাষ্য মতে, ২৭ বছরে আটকে আছেন তিনি। মনের এই বয়সটাকে সঙ্গী করে ‘মনের মানুষ’ হনুফা আক্তার রিক্তাকে শুক্রবার হেমন্তের মিষ্টি বিকালে লাজুক কণ্ঠে বলে দিলেন ‘কবুল’। অপর প্রান্তের জবাবটিও ছিল একই। যার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো বাংলাদেশে স্মরণকালের সব থেকে আলোচিত বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।

পাঁচ লাখ এক টাকার দেনমোহরে শুক্রবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কুমিল্লার চিরকুমার সমিতির প্রধান উপদেষ্টা। অবশ্য শুক্রবারই তিনি হারিয়েছেন চিরকুমার সমিতির প্রধান উপদেষ্টার পদ। বিয়ের মণ্ডপে দেনমোহরের পুরো টাকাই পরিশোধ করে দেন তিনি। বিকালে ‘শাহ নজর’ (বর-কনের পরস্পরকে আনুষ্ঠানিক দেখা) শেষ করে শাশুড়ি জোছনা বেগমের কাছ থেকে স্ত্রী রিক্তাকে নিয়ে আসেন ঢাকার মন্ত্রীপাড়ায়। আগামী ৬ নভেম্বর রেলমন্ত্রীর গ্রামের বাড়িতে ও ১৪ নভেম্বর সংসদ ভবনে তার বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে।



শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকার মন্ত্রীপাড়া থেকে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক কনের বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে দোয়া চান। প্রধানমন্ত্রী তার সুখী দাম্পত্য জীবন কামনা করে তাকে আশীর্বাদ করেন। সাত শতাধিক বরযাত্রীর এ বহর কুমিল্লার দাউদকান্দি ঈদগাহ সংলগ্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে কনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন। বিকাল ৩টা ৬ মিনিটে রেলমন্ত্রীর কনের পিতৃালয় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মিরখালা পৌঁছান। রুপালি রঙের জাতীয় পতাকা সংবলিত গাড়িটিকে সাজানো হয় হরেক রকমের ফুল দিয়ে। প্রাধান্য ছিল প্রেমের প্রতীক লাল গোলাপের। পথে পথে রেলমন্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করে একাধিক তোরণ নির্মাণ করে এলাকাবাসী। শুধু বরবাহী গাড়িটি কনে বাড়ির বিয়ের গেটে পৌঁছে। এ সময় বরকে দেখতে আসা উত্সুক জনতার ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

বর মন্ত্রী, তাই বলে কি বিয়ের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্ব ‘গেট ধরা’ বাদ থাকবে, তা তো হতেই পারে না! বরং মন্ত্রী বর বলে চাহিদা ছিল বেশ বেশি। প্রথমেই এক ঝাঁক শিশু বাদ সাধে তার প্রবেশে। তাদের পাঁচ হাজার এক টাকা নজরানা দিয়ে ছাড়া পেলেও শ্যালিকারা এত কমে ছাড়েননি। বুঝে নিয়েছেন এক লাখ এক টাকার বকশিশ।



এরপর তিনি বসেন বরের আসনে। সেখান থেকে বিকাল সাড়ে ৪টায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে পড়ান স্থানীয় মসজিদের ইমাম কারি আবদুল লতিফ। নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেন গল্লাই ইউনিয়নের কাজী মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান। পাঁচ লাখ এক টাকা মূল্যের কাবিনে বর ও কনে স্বাক্ষর করেন। এ বিয়েতে উকিল করা হয় মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাসেমকে। বিয়ের কাবিনে বরপক্ষে সাক্ষী রাখা হয় মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া, চৌদ্দগ্রামের ৪নং শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদার, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান এবং কনেপক্ষে গল্লাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল করিমকে। এ সময় কনের পরনে ছিল সোনালি রঙের শাড়ির ওপর পুঁতির কাজ করা লেহেঙ্গা। তার সঙ্গে সীতাহার ও কণ্ঠহারসহ প্রায় ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার জড়িয়েছিলেন মন্ত্রী-বধূ।



রিক্তার বড়ভাই আলাউদ্দিন মুন্সী বলেন, ‘সীতাহার, কণ্ঠহার, কানের দুল, আংটি, টিকলি, চুড়ি, নোলক ও ব্রেসলেট পাঠিয়েছেন হবু জামাই রেলমন্ত্রী। সোনা সব মিলিয়ে ১৫ ভরির মতো হবে। এ ছাড়া সাজের অন্যান্য সামগ্রীও পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়াও কনেপক্ষের জন্য পাঠিয়েছেন ৩৫টি শাড়ি, যা আত্মীয়-স্বজনকে দেয়া হয়েছে। কনের জন্য বেনারসী ও কাতানসহ মোট ৫টি শাড়িও পাঠানো হয়েছে। কনের শাড়ি জামাই নিজেই ভারত থেকে কিনে এনেছেন।’



বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে খাওয়া-দাওয়া করেন মন্ত্রী। তার জন্য ছিল আস্ত খাসি। ১৬ কেজি ওজনের আস্ত খাসির রোস্টটি করেন এলাকার নামকরা বাবুর্চি কুমিল্লা ক্লাবের মিল্টন রোজারিও। স্থানীয়ভাবে এটিকে বলা হয় ‘দরুজ’। বিশাল আকারের পাত্রে জামাইয়ের খাবার পরিবেশন করা হয়। আস্ত খাসির রোস্টের চারপাশে ছিল ১০টি ইলিশ মাছ, ১০টি আস্ত মুরগির রোস্ট। নানান পদের মিষ্টিও ছিল সেখানে। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব এ আয়োজনে অংশ নেন।



খাওয়া-দাওয়া পর্ব শেষে তিনি যান কনের মঞ্চে। সেখানে মালাবদলের পর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন নতুন জামাই। পরে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে নতুন বউকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন মন্ত্রী মুজিবুল হক। নতুন বউকে তুলে দেয়ার সময় আশপাশে অন্যদের সঙ্গে তার বোনদের দেখা যায়। পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন মন্ত্রীর সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করতে যাওয়া নববধূ রিক্তা। এক পর্যায়ে মূর্ছা গেলে দুই ভাই ধরে তাকে গাড়িতে বরের পাশে বসান।



রেলমন্ত্রীর বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশ্রাফ, তাজুল ইসলাম, সাবেক এমপি নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আফজল খান অ্যাডভোকেট, জেলা পরিষদ প্রশাসক ওমর ফারুক, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি সফিকুর রহমান, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. তফাজ্জল হোসেন, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীসহ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

 

জমিয়ে খানাপিনা!

আলোচিত এ বিয়েতে দুপুরের খানাপিনাটাও ছিল জম্পেশ! অতিথিদের জন্য দুপুরের খাবারের মেন্যুতে ছিল খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট, কোমল পানীয়, মিষ্টান্ন জর্দা আর বোরহানি। আর খাওয়া শেষে অতিথিদের জন্য ঢাকা থেকে আনা মুখরোচক শাহী পানের ব্যবস্থাও ছিল। রান্নার কাজ তদারক করেন এলাকার নামকরা বাবুর্চি কুমিল্লা ক্লাবের মিল্টন রোজারিও। আর মন্ত্রীর পাতের খাবারের বর্ণনা তো আগেই দেয়া হয়েছে।



এদিকে সব সময় মানুষের কাছাকাছি থাকা মুজিবুল হক বিয়ের দিনেও নিজের দায়িত্ব ভোলেননি বিন্দুমাত্র। বরের বেশে অতিথিদের ঠিকমতো আপ্যায়ন করা হচ্ছে কি না, কারো কোনো সমস্যা আছে কি না— এসব বিষয়ে খোঁজ নিতে বিয়ের স্টেজ থেকে হঠাত্ ছুটে যান খাবার প্যান্ডেলে। উপস্থিত মন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সব অতিথির খোঁজখবর নেন তিনি।

বরযাত্রীদের আপ্যায়নের জন্য ছিলেন কনের নিকট আত্মীয়দের ৮০ জন। বরপক্ষের ৭০০ এবং কনেপক্ষের প্রায় ১৫শ অতিথিকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয় এ বিয়ে অনুষ্ঠানে।



পথে পথে শুভেচ্ছা

ঢাকা থেকে কনের গ্রাম মিরখালা যেতে পথে পথে তোরণে তোরণে শুভেচ্ছা জানানো হয় রেলমন্ত্রীকে। তাকে স্বাগত জানাতে কুটুম্বপুর থেকে কনের বাড়ি পর্যন্ত ১১টি তোরণ তৈরি করা হয়। যার মধ্যে ৯টি তোরণই স্থানীয় গ্রামবাসীদের উদ্যোগে করা হয়। তোরণ নির্মাণকারীরা জানান, এ বিয়ে ইতিহাস হয়ে থাকবে, যে ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে থাকতেই গ্রামবাসীর সঙ্গে তারা ৫-৬ জন বন্ধু্ মিলে একটি তোরণ তৈরি করেছেন।

চান্দিনার কুটুম্বপুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে কনের বাড়িতে আসার সময় রাস্তার দুপাশে ছিল সব বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। একটি বারের জন্য বরের হাত ছুঁতে রাস্তা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল শত শত লোক। যাদের অধিকাংশই ব্যস্ত ছিলেন মোবাইল ফোনে ছবি ও ভিডিও করতে। কেউবা বর ও যাত্রীদের গাড়িতে ছিটিয়ে দেন ফুলের পাপড়ি। কৃষি আর সবজি জমিতে চাষরত শ্রমিকরাও রাস্তার পাশে দাঁড়ান বরকে দেখার জন্য।



বিবাহোত্তর সংবর্ধনা

আগামী ১৪ নভেম্বর সংসদ ভবনের এলডি হলে রেলমন্ত্রীর বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। ৬ ডিসেম্বর রেলমন্ত্রীর গ্রামের বাড়ি চৌদ্দগ্রামের বসুয়ারায় আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সংসদ ভবনের অনুষ্ঠানে সাড়ে তিন হাজার এবং চৌদ্দগ্রামের অনুষ্ঠানে ত্রিশ হাজার মানুষকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!