DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

ঈদের পর মাঠ দখলে নামবেন বেগম খালেদা জিয়াঃ বিএনপিতে প্রকট হচ্ছে দ্বন্দ্ব আর অবিশ্বাস

BNP ঈদের পর সরকার পতন আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দল গুছিয়ে রাজপথে কঠোর আন্দোলনে নামার কথা বললেও বিএনপি সাংগঠনিকভাবে ‘জীর্ণ শীর্ণ’। সেই সঙ্গে দলটির নেতাদের মধ্যে দিন দিন প্রকট হচ্ছে অবিশ্বাস আর দ্বন্দ্ব।

আর এ কারণেই গত ২ জুলাই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষে কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ অন্তত ৫ জন আহত হয়। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে। এর আগেও রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শ্রমিক দলের কমিটি গঠনের সময় বিক্ষুব্ধরা শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর করে।

এখানেই শেষ নয়, পহেলা মে শ্রমিক দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শ্রমিক নেতারা। পরে খালেদা জিয়া প্রকাশ্যেই তাদের ভৎসনা করেন। তিনি বলেন, ‘দলে বেঈমান ঢুকেছে। এদের চ্যাপ্টা করতে হবে।’

অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, শীর্ষ কোনো এক নেতাকে আবাসন সুবিধা দিয়ে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ‘কেউ’ এসেছেন। অন্যান্য সুবিধাতো আছেই। ফলে এ সংগঠনটিও আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত নয়।

এদিকে গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করার কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সাংগঠনিকভাবে অনেকটা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে বিএনপির মিত্র সংগঠনগুলো। তারপর থেকে দল গোছানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। দল পুনর্গঠনের খবরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ মনে করেন দল পুনর্গঠন হলে সুবিধাবাদী, আঁতাতী, কমিটি ব্যবসায়ী, ষড়যন্ত্রকারী, গাটস-পার্টসহীন নেতারা বাদ পড়বে। আবার কেউ কেউ ধারণা করেন, বিএনপিতে যে জটিলতা তাতে সহসা দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হবে না।

সূত্র মতে, দল গোছানো যে প্রক্রিয়ায় শুরু হয়েছিল তাও আর শেষ হয়নি। ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। একমাত্র নড়াইলে সন্তুষ্ট হলেও অন্য জেলাগুলোতে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেন তিনি। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা থাকলেও তার ধারাবাহিকতা নেই। এ নিয়ে দপ্তরের নেতাদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে।

বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কথা বলা সমিচীন হবে না।’ তিনি যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বা রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে এ দু’জনের মুঠোফোনে কল করে তাদের পাওয়া যায়নি।

এদিকে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের নিয়ে দলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা থাকলেও কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের খবর নেই। কাউন্সিলের উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন কারণে তা আর হচ্ছে না। ‘অগণতান্ত্রিক’ পন্থায় চলছে বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক কার্যক্রম।

বিএনপির অন্যতম শক্তি তাদের ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ সংগঠনটিও বর্তমানে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে বলে মনে করে অনেকে। বেগম খালেদা জিয়া সংগঠনটিতে নতুন নেতৃত্ব দিতেও চেয়েছেন। তবে এ নিয়েও অনেক কালক্ষেপন হচ্ছে বলে ছাত্রদল নেতারা অনুযোগ করেন।

এছাড়া দলের আরেক শক্তি জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এখন ব্যস্ত টিভি টকশো আর জাতীয় প্রেসক্লাবভিত্তিক ‘ভূঁইফোঁড়’ সংগঠনগুলোর অনুষ্ঠান নিয়ে। তিনি সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর দ্বিতীয় দফা যুবদল পুনর্গঠন হয়। প্রতিবারেই তার বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, যারা যুবদলের পদ কিনেছে তাদের সঙ্গেই এখন আর আলাল পেরে উঠছেন না। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব তো সরবই হতে পারেননি।

বিএনপির মধ্যে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলও আগের মতো গোছালো নেই। সংগঠনটির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলকে নিয়ে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে কানাঘুষা হচ্ছে। জানা গেছে, সোহেলের অনেক দিনের ইচ্ছা তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন। তার এই খায়েশের প্রভাব এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের মধ্যে পড়েছে।

বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) শীর্ষ নেতাদের নিয়েও অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তারপরও এ সংঠনটি বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছে। তবে আন্দোলনে মাঠে নামার মতো তাদের কেউ নেই।

রমজান মাসের ইফতার পার্টি উপলক্ষে জাতীয়তাদী ওলামা দল বিশেষ গুরুত্ব পেলেও পরিচিত দুয়েক মুখ ছাড়া তেমন কাউকে দেখা যায় না। অন্যান্য সংগঠনের উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। এছাড়া বিএনপির কূটনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে বেশ সমন্বয়হীনতা।

এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বড়সড় আন্দোলনের জট পাকাতে চান খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসন ঈদের পর আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন হবে না।’

এদিকে আবার একধাপ এগিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ইতোমধ্যে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন। ফখরুল শনিবার সকালে মিরপুরের ডেল্টা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদারকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন তীব্রতর করবো। ঈদের পর আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হবে। আন্দোলন, নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সংগঠন গোছানোর কাজ একই সঙ্গে চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে ঈদের পর দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেছেন।’

সংগঠন গোছানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘সংগঠনের কার্যক্রম ও কমিটি পুনর্গঠন চলমান একটি প্রক্রিয়া। এটি চলছে। আমরা সংগঠন গোছানোর কাজ করছি। নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছি। সামনে আন্দোলনের সর্বাত্মক প্রস্তুতিও চলছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথ দখলে রাখতে বিএনপি চেয়ারপারসন একাধিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন।

অবশ্য দলটির নেতারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা স্বীকার না করলেও অধিকাংশ কর্মী মনে করেন, বিএনপির সামনে ইস্যু আসছে আর যাচ্ছে। দলের ভেতর কোন্দল থাকায় কোনো ইস্যুকেই কাজে লাগাতে পারছে না। বিগত সময়গুলোতে যে ইস্যুগুলো পাওয়া গেছে তাতে আন্দোলন চাঙ্গা করতে না পারায় কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ভর করেছে।

দল গোছানো এবং আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলামেইলকে বলেন, ‘দল গোছানো আর আন্দোলন কর্মসূচি একসঙ্গে চলবে।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!