DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

মার্কিন পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের পুলিশঃকৌতুহলউদ্দিপক অভিজ্ঞতা

Mike+Rowe+beaverton+bangladesh+web-300x168বাংলাদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা কোনকালেই ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের বেভারটনের পুলিশ কর্মকর্তা মাইক রোয়ারের। মার্কিন এই পুলিশ কর্মকর্তাকে যদি কখনো জিজ্ঞাসা করা হত তিনি কোন দেশ ভ্রমণে উৎসাহী? তবে সেটা কোনভাবেই বাংলাদেশ হতো না। হতো জ্যামাইকা বা মেক্সিকো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের অর্থায়নে বাংলাদেশের পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে আসতে হয় মাইককে।

৮ই মে এক মাসের প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশে আসেন তিনি। মাইক রোয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেভারটন শহরের পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতেন। তিনি বাংলাদেশে আসার আগে অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে জেনে আসেন। কিন্তু বাংলাদেশে আসার পরে তিনি বিস্মিত হন।

মূলত বাংলাদেশের বিশাল জনসংখ্যা তাকে বিস্মিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের সমান আয়তনের হওয়ার পরেও বাংলাদেশের জনসংখ্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক। বাংলাদেশের সর্বত্রই কেবল মানুষ আর মানুষ। এত বেশি মানুষ দেখে বেশ ভড়কেও যান মাইক। এছাড়া বাংলাদেশের অনুন্নত তথ্য-প্রযুক্তি মাইকের কাছে অপরিচিত মনে হয়েছে। বিমান বন্দরে নামার পরে অভিবাসন কর্মকর্তার তার নাম লেজার বইতে নিবন্ধিত করার বিষয়টি তার নজরে পরে। তবে তিনি দ্রুতই এই সব বিষয় কাটিয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের মানুষের আচরণে মুগ্ধ হন ও বাংলাদেশের প্রেমে পড়েন।

বাংলাদেশ পুলিশকে প্রশিক্ষণ:

বাংলাদেশের পুলিশের শেখার প্রচুর আগ্রহ আছে বলে মনে করেন মাইক। মাইক ও তার সঙ্গীর কর্মস্থল ছিল পদ্মার তীরে অবস্থিত রাজশাহীর বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ট্রেনিং এসিস্ট্যান্স কর্মসূচীর আওতায় বাংলাদেশের পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে আসেন মাইক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ড পুলিশ ব্যুরো তিন বছর ধরে বাংলাদেশে এই সহায়তামূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনা করে আসছে। এই কর্মসূচীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা অংশ নিয়েছেন।

মাইকের আগে বেভারটন পুলিশের আরো দুই কর্মকর্তা এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন। রাষ্ট্রজনদের নৈতিকতা ও মানবিক অধিকার রক্ষা করে কিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করে তা তুলে ধরাই ছিল এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর অংশ। এছাড়া অপরাধীদেরকে কিভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ও কিভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে হয় তা বাংলাদেশ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়াই এই কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য। মাইকরা বাংলাদেশের পুলিশকে জনগণের কাছে বিশস্ত ও আস্থাভাজন করে তোলার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। যদিও মার্কিন পুলিশকে মার্কিনীরা বিশ্বাস করে না বলে মন্তব্য করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ পুলিশ সম্পর্কে মাইকের অদ্ভূত অনূভূতি হয়েছে। তারমতে, বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা ৫ জনের একটি দলে বিভক্ত হয়ে পায়ে হেঁটে দায়িত্ব পালন করে। তবে তার মতে, বাংলাদেশের পুলিশ কেবল নিজের এলাকার দায়িত্ব নিয়েই চিন্তিত, অন্য এলাকা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। এমনকি নিজের এলাকার বাইরে কোন অপরাধ তাদের সামনে সংগঠিত হলেও তারা সেখানে বাধা দেয় না।

এছাড়া বাংলাদেশের পুলিশের গুলির অনুমিত না থাকলেও তারা আসল রাইফেল বহন করে। দায়িত্ব পালনের সময় বাংলাদেশের পুলিশ বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর মাত্র এক মাসের প্রশিক্ষণে বাংলাদেশের পুলিশের এই পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন মাইক রোয়া। তবে বাংলাদেশ পুলিশের চলমান পদ্ধতির সংস্কারে বিশেষ আগ্রহী তিনি।

বাংলাদেশের পুলিশ নিজেদের উন্নয়নে খুবই আগ্রহী বলে মন্তব্য করেন এই মার্কিন পুলিশ কর্মকর্তা। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যদের সম্পর্কে মাইক বলেন, বাংলাদেশের পুলিশকে কোন কিছু শেখানর পর তারা হাত মেলাতে আসেন। আর যদি মনে হয়, শিক্ষাটি তাদের জন্য যথাযথ হয়েছে, তাহলে তারা নিজেদের হ্নদয় দিয়ে প্রশিক্ষকের সাথে হাত মেলাতে আসেন। আর এটা যেকোন প্রশিক্ষকের জন্য বিশেষ গৌরবের। কারণ শিক্ষার্থীরা নিজের বুকে হাত রেখে প্রশিক্ষককে সম্মান দিয়ে জানায়, প্রশিক্ষণটি তার খুবই ভাল লেগেছে। যা যে কোন প্রশিক্ষকের কাজকে প্রভাবিত করতে পারে।

বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে আবিষ্কার:

বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে মাইক জানান, আমি এমন কোন মানুষের সাথে পরিচিত হয়নি, যে আমাকে হাসিমুখে সম্ভাষণ জানায়নি। বাংলাদেশীদের অতিথি বরণ করে নেওয়ার প্রবণতায় মুগ্ধ হয়েছেন মাইক। এছাড়া নিজেদের সবচেয়ে ভাল খাবার দিয়ে অতিথিকে বরণ করার বিষয়টিও মাইককে মুগ্ধ করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের তুলনায় সম্পদ কম থাকলেও বাংলাদেশীরা অতিথিকে বরণে কখনো পিছপা হয় না। মাইকের মতে, বাংলাদেশীদের সম্পদ খুব কম থাকলেও তারা বাড়িতে থাকা শেষ বিস্কুট ও চা দিয়ে অতিথিকে আপ্যায়ন করে। বাংলাদেশে থাকার সময় বাংলাদেশী একটি বিয়েতে হাজির হয়েছিলেন মাইক ও তার সঙ্গী। বিয়ে বাড়িতে পরিবারের একজন সদস্যের মতই সম্ভাষণ পেয়েছিলেন মাইক।

জুন মাসে বাংলাদেশ ছেড়ে বেভারটনে ফিরে যান মাইক ও তার সঙ্গী। কিন্তু সাথে করে নিয়ে যান এমন কিছু স্মৃতি, যা তিনি কোনদিনও ভুলতে পারবেন না। বাংলাদেশে থাকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি জানান, কিভাবে নিজের যা আছে, তা যত কমই হোক না কেন, তাই নিয়ে সুখী হতে হয় তা আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকেই শিখেছি। যদি জীবনে কখনো সুযোগ হয় তবে তিনি অবশ্যই আবারো বাংলাদেশে আসবেন বলেও মন্তব্য করেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!