DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

স্বজন হারাদের আহাজারীতে উপস্থিত সকলে অশ্রূ সিক্তঃসবার অভিযোগ র‌্যাবের বিরুদ্ধে, অশ্রুসিক্ত বেগম খালেদা জিয়াও

image_92381_0সাম্প্রতিক সময়ে যারা গুম, খুনের শিকার হয়েছেন তাদের স্বজনরা র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেযারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যারা বক্তব্য দিয়েছেন তারা সবাই র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। এই বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে তাদের স্বজনদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তারা আর ফেরত আসেনি। নিখোঁজদের স্বজনরা বলেছেন, শুধুমাত্র বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে তাদের তুলে নেয়া হয়েছে।

নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা পিন্টুর বোন রেহানা পারভীন অশ্রুসিক্ত হয়ে বলেন, ‘চারমাস যাবৎ আমার ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা বাসায় কেউ খেতে পারি না। খেতে গেলেই তার কথা মনে পড়ে। আমার মা দীর্ঘদিন যাবৎ ছেলের শোকে মুখে ভাত তুলতে পারেন না। খেতে গেলেই চোখের পানিতে ভাত ভিজে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা থানা-পুলিশ, র‌্যাব-ডিবিসহ সমস্ত জায়গায় খোঁজ নিয়েছি তারা কেউ খোঁজ দিতে পারিনি। জিডি করতে গেলে জিডিও নেয়া হয়নি।’

বেসরকারি সংস্থা বেলার নির্বাহী পরিচালক রিজওয়ানা হাসানের স্বামী এবি সিদ্দিকির প্রসঙ্গ টেনে রেহেনা পারভীন বলেন, ‘আমরা যদি তার মতো ক্ষমতাবান হতাম তাহলে আমার ভাইকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করতে পারতাম। আমরা সাধারণ মানুষ বলে তাকে ফেরত পাইনি।’

বংশাল থানা ছাত্রদল নেতা নিখোঁজ সোহেলের বাবা শামসুর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলের নামে কোনো দিন কোনো মামাল বা জিডি ছিল না। শুধু বিএনপি করার কারণে র‌্যাব তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছে।’

এসময় সোহেরের স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আকূল আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দুইটি ছেলে সব সময় বাবাকে পেতে চায়। কিন্তু আমি তাদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, আমার দুটি ছেলের দিকে তাকিয়ে আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিন।’

নিখোঁজ বিএনপি নেতা জহিরের ভাই সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ভাইসহ ৬ জনকে র‌্যাবের পরিচয়ে কিছু লোক তুলে নিয়ে গেছে। দুই জনকে ফেরত দেয়া হলেও এ পর্যন্ত ৪ জনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, আমার ভাইসহ সবাইকে ফিরিয়ে দিন।’

নিখোঁজ ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম বলেন, ‘গত ৪ ডিসেম্বর র‌্যাব-১ এর সদস্যরা আমরা ভাইকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আমার বাসার হাসি বন্ধ হয়ে গেছে। বাচ্চারা খেতে পারে না, হাসতে পারে না। আমরা মা র‌্যাবের বিভিন্ন অফিসে গিয়ে একাধিকবার আমার ভাইয়ের প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছে। কিন্তু তারা কোনো সাহায্য করেনি।’

নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা আদনান চৌধুরীর বাবা রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, ‘৪ ডিসেম্বর র‌্যাব সদস্যরা আদনানকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে আর কোনো খোঁজ নেই। আমি সবহারা হয়ে আল্লাহর কাছে এর বিচার চাই। পাশাপাশি দেশে যেভাবে তরুণরা খুন, গুমের শিকার হচ্ছে এইটা নিয়ে সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ। তদন্ত কমিটি করা উচিৎ। এরা কোথায় যাচ্ছে? এভাবে দেশ চলতে পারে না।’

নিখোঁজ মুন্নার বাবা বলেন, ‘আমার সামনে থেকে ছেলেকে তুলে নেয়া হয়েছে। আমি বাবা হয়ে কিছুই করতে পারিনি। এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কিছুই নেই। বড় কষ্ট করে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছিলাম। তার ফলাফল এটিই পেতে হলো।’

তরিকুল ইসলাম মিন্টুর মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে র‌্যাবের সদস্যরা বাসা থেকে নিয়ে গেছে। তারপর আর কোনো খোঁজ নেই।’ কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি পৃথিবীতে আর কিছু চাই না, শুধু আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। প্রধানমন্ত্রীকে বলি আপনি একজন মা, আপনারও ছেলে-মেয়ে আছে। সেই দিক তাকিয়ে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন।’

নিখোঁজ মাহাবুব হাসান সুজনের বাবা আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো দিন কোনো অপরাধের সাথে জড়িত ছিল না। শুধু বিএনপি করার কারণে র‌্যাব তাকে তুলে নিয়ে গেছে।’

নিখোঁজ স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়। এ সময় কান্না ধরে রাখতে পারেননি বেগম খালেদা জিয়াও।

গুম, খুনের শিকার হওয়া স্বজনদের এ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, এম তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা পরিষদের এমএ মান্নান, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, খোন্দকার গোলাম আকবর, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদীন ফারুক, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূইয়া, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, শিক্ষাবিদ ড. পিয়াস করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!