DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

মালয়ী বিমান নিখোজঃ ভারতে ৯-১১-র ধাঁচে হামলার ছক ছিল?

image_80779মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বিমান অপহরণের পর ৯-১১-র ধাঁচে ভারতের কোনও শহরে হামলার ছক কষা হয়েছিল। বিমানের সক্ষমতা, জ্বালানি এবং অভিমুখ দেখে এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মার্কিন বিদেশ দফতরের কর্মকর্তা স্ট্রোব ট্যালবোট। হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি ভারতীয় গোয়েন্দারাও। সূত্রের খবর, ভারতে আগেই বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালে বিল ক্লিন্টনের সরকার থাকাকালীন আমেরিকার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ট্যালবোট। গত ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেজিং যাওয়ার পথে মাঝ আকাশ থেকে উধাও হয়ে যায় মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বিমান এমএইচ-৩৭০। বিমানটিতে পাঁচ ভারতীয়সহ ২৩৯ জন যাত্রী ছিলেন। বিমানটি অপহরণ করা হয়েছে বলে গতকাল জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রজক। আর তারপরই মার্কিন বিদেশ দফতরের আধিকারিক স্ট্রোব ট্যালবোটের এই আশঙ্কা প্রকাশ। 


ফৌজদারি তদন্ত শুরু


মালয়েশিয়া তাদের নিখোঁজ বিমানটি ইচ্ছাকৃতভাবে গতিপথ থেকে বিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানানোর পর রোববার বিমানটির খোঁজে বহুজাতিক অনুসন্ধানের মনোযোগ দুটি বিশাল ও ব্যাপকভাবে বিপরীতমুখী ক্ষেত্রের ওপর নিবদ্ধ করা হয়েছে। শুরু হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ ফৌজদারি তদন্তের। শনিবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক নিখোঁজ বোয়িং-৭৭৭-এর যোগাযোগ ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো বলে জানানোর পর বিমানটির ২৩৯ জন যাত্রী ও ক্রুদের ভাগ্য নতুন করে গভীর আশঙ্কাজনক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।


রোববার মালয়েশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত নিউ স্ট্রেইট টাইমসের প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম করা হয়, ‘কে? কেন? কোথায়?’


প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে ছিনতাই শব্দটি ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানান, তবে তিনি বলেন, নতুন তথ্যে প্রতীয়মান হয় যে, বিমানে থাকা কেউ একজন জেনে-বুঝেই যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন। এর ফলে তদন্তকারীরা নতুন করে তাদের তদন্তের মনোযোগ ক্রু ও যাত্রীদের ব্যাপারে নিবদ্ধ করেছেন। এদিকে অনুসন্ধানের আওতায় নতুন করে কাজাখস্থান থেকে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকায় সম্প্রসারিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে বোয়িং ৭৭৭ সম্পর্কে বিশেষায়িত জ্ঞান প্রয়োজন। এতে করে জাহাজের বিমানটির ক্যাপ্টেন জাহারি আহমদ শাহ ও তার ফার্স্ট অফিসার ফারিক আবদুল হামিদ সম্পর্কে অনুসন্ধান জোরদার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এয়ারোস্পেস কনসালটেন্সি লী হ্যাম কো-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্কট হ্যামিলটন বলেন, নাজিবের বিমানটি হাইজ্যাক হওয়ার কথা নিশ্চিত করতে অস্বীকার করার বিষয়টি অর্থপূর্ণ। 


হ্যামিলটন বলেন, ‘এতে আমার কাছে মনে হয়েছে পাইলটদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি নাকচ করা হচ্ছে না। তিনি (নাজিব) বলেন, তিনি কেবল হাইজ্যাকারদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবেন না। মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, শনিবার দুই পাইলটের বাড়িতেই তদন্তকারীরা গিয়েছেন। তবে পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করতে অস্বীকার করেছে। দুই পাইলটের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীরা তাদের সৎচরিত্রের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিমানটির ককপিট দখল করা হয়েছিলো বা পাইলটদের ওপর জোর খাটানো হয়েছিলো এমন আশংকার প্রেক্ষিতে কে কি উদ্দেশে এটি করেছে সে সম্পর্কে নানা সম্ভাবনার বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে।


উল্লেখ্য, ১৪টি দেশের ৪৩টি জাহাজ বিমানটির খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর শেষবার বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ করা গিয়েছিল। অপহরণের আগে ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানটির সঙ্গে স্যাটেলাইট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় বলেও জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। 


লুকিয়ে রাখার সন্দেহ নাকচ করল ইসলামাবাদ


রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী বিমানটিকে পাকিস্তানের কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে পশ্চিমা কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম যে খবর দিয়েছে তা নাকচ করে দিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল বিভাগের প্রধান শুজাত আজিম গত শনিবার বলেন, বিমানটি কখনোই পাকিস্তানের দিকে আসেনি। গত কয়েকদিন ধরে মালয়েশিয়ার কিছু গণমাধ্যম এ খবর দিচ্ছিল যে, নিখোঁজ বোয়িং ৭৭৭ বিমানটি হারিয়ে যায়নি বরং অক্ষত অবস্থায় ভূ-পৃষ্ঠের কোথাও অবতরণ করেছে। এরপর পশ্চিমা কিছু মিডিয়া দাবি করে, বিমানটি পাকিস্তানে অবতরণ করে থাকতে পারে। আর এর সূত্র ধরে আজিম এ প্রতিক্রিয়া জানালেন। 


শুজাত আজিম আরো বলেন, পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচলের কাজে নিয়োজিত রাডারগুলোতে এ বিমানের অস্তিত্বই ধরা পড়েনি। দেশটির আকাশসীমা থেকে অনেক দূরে বিমানটি নিখোঁজ হয়েছে, এ অবস্থায় বিমানটিকে কিভাবে পাকিস্তানে লুকিয়ে রাখা সম্ভব সে প্রশ্নও করেন পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় এ কর্মকর্তা। 


তল্লাশি স্থগিত করলো ভারত


মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের নিখোঁজ যাত্রীবাহী বিমানের সন্ধানে তল্লাশি স্থগিত করেছে ভারত। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী গত দু’দিন ধরে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জে ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী কমান্ডের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন কর্নেল হারমিত সিং। তিনি আরো জানান, গত শনিবার থেকে তল্লাশির কাজে অংশগ্রহণকারী ছয়টি জাহাজ ও পাঁচটি বিমানকে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের কামোরতায় ভারতীয় নৌঘাঁটিতে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। নতুন করে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে যে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে সেখান থেকে দিক-নির্দেশনার জন্য ভারত অপেক্ষা করবে বলে জানান কর্নেল সিং। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স, জিনিউজ ও বিবিসি।


বাংলাদেশের ৮টিসহ ৬৩৪টি রানওয়ে সন্দেহে


২৩৯ আরোহী নিয়ে নিখোঁজ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ ৩৭০ বিমানটি বাংলাদেশও নামতে পারে বলে সম্ভাবনা দেখা গেছে।


বাংলাদেশের আটটি স্থান কক্সবাজার, চট্টগ্রাম (পতেঙ্গা), ঢাকা (শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ক্যান্টনমেন্ট বিমানবন্দর), সিলেট, রাজশাহী, নীলফামারী (সৈয়দপুর) ও যশোরে অবতরণ করতে পারে বিমানটি।


নয়দিন ধরে নিখোঁজ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ ৩৭০ উড়োজাহাজটি ‘ছিনতাই’ হওয়ার আশঙ্কা করছে মালয়েশিয়া। তাদের সন্দেহের চোখে উড়োজাহাজের পাইলট, ক্রু ও যাত্রীরা রয়েছেন। ছিনতাইয়ের দিকে চোখ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্তকারীরা চোখ দিচ্ছেন উড়োজাহাজটির সম্ভাব্য অবতরণ স্থানের ওপরও।


ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম মিরর জানায়, পাকিস্তান থেকে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে উড়ে যাওয়ার পর্যাপ্ত জ্বালানি ছিল উড়োজাহাজটিতে। নিখোঁজ বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি বিশ্বের ৬৩৪টি রানওয়েতে অবতরণ করতে পারে বলে জানানো হয়েছে মিররের প্রতিবেদনে।


আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিভিত্তিক অলাভজনক ওয়েবসাইট ও অবাণিজ্যিক, সরকারি রেডিও ডব্লিউএনওয়াইসি (ডঘণঈ)-এর একটি মানচিত্রের বরাত দিয়ে এ দাবি করা হয়েছে।


ডব্লিউএনওয়াইস এর মতে, ২৬টি দেশের ৬৩৪টি রানওয়েতে নিখোঁজ উড়োজাহাজটি অবতরণ করতে পারে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ ২৬টি দেশের ৬৩৪টি স্থান অবতরণের সম্ভাব্য স্থান হিসেবে দেখছে ডব্লিউএনওয়াইসি।


ওই মানচিত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশের উল্লিখিত নয়টি স্থানে উড়োজাহাজটি অবতরণ করতে পারে।


ডব্লিউএনওয়াইসি জানিয়েছে, সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশ করে, উড়োজাহাজটি সবশেষ জ্ঞাত অবস্থান থেকে দুই হাজার ২০০ নটিক্যাল মাইল উড়তে পারে।


৮ মার্চ প্রথম প্রহরে দিনগত রাতে ২২৯ যাত্রী ও ১২ ক্রুবাহী মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ ৩৭০ ফ্লাইটি কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে মালয়েশীয় উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় উড়োজাহাজটির। বর্তমানে উধাও উড়োজাহাজটির খোঁজে ২৫টি দেশ অভিযানে অংশ নিয়েছে।



 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!