DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

আওয়ামী লীগের বেঈমানদের ষড়যন্ত্রে জাতির পিতাকে হারাই আমরাঃশেখ হাসিনা

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডের পেছনে দলের কিছু নেতার ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় সামরিক বাহিনীর কিছু বিপথগামী লোক এবং খন্দকার মোশতাকসহ দলের কিছু বেইমানদের ষড়যন্ত্রেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হারাই আমরা।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। জাতির পিতার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে একটা নতুন সমাজ গড়তে। উপনিবেশিক শাসকদের তৈরি করা প্রশাসনিক কাঠামো এবং শাসন প্রক্রিয়া, শোষণ, বঞ্চনার হাত থেকে দেশকে মুক্তি দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের ক্ষমতায়ন। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করাই ছিল তার লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে আমরা এমনভাবে গড়ে তুলবো যাতে বিশ্বের কাছে কোন বাঙালিকে আর মাথা নিচু করে চলতে না হয়। দেশের স¤প্রতিক উন্নয়ন অগ্রগতিকে আলোর পথের যাত্রা আখ্যায়িত করে একে অব্যাহত রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, সমগ্র জাতির কাছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে আমার আহবান থাকবে, অনুরোধ থাকবে, আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাধীন এদেশকে আমরা এমনভাবে সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলবো যাতে বাঙালি জাতিকে আর বিশ্বের কারো কাছে মাথা নত করে চলতে না হয়। আমরা উন্নত-সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে বিশে^র বুকে মাথা উঁচু করেই এগিয়ে যাব। আলোর পথের এই যাত্রা অব্যাহত থাক, বাংলাদেশের মানুষ সুখী সমৃদ্ধ এবং উন্নত জীবন লাভ করুক। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা ধরে রেখে এর সুফল প্রত্যেক ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব, এটাই আমাদের লক্ষ্য এবং সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কভিড-১৯ এর কারণে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাব এবং দেশে দেশে খাদ্য সংকট থাকলেও আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পারায় সরকারের সাফল্যেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

 

তিনি বলেন, দেশে বেসরকারি খাতে গণমাধ্যমকে ছেড়ে দেয়ায় এর অবাধ স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে অনেক ছোট খাটো বিষয়ও সামনে চলে আসে কিন্তু বিশে^র অনেক দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংকটের যে বিষয় রয়েছে তা তারা প্রচার করেন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রচার না করলেও আমরা জানি অনেক উন্নত দেশে ব্যাপকভাবে খাদ্যের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি যারা সারাবিশে^ মোড়লগিরি করে বেড়ায় তাদেরও অনেক মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে। কিন্তু সেদিক থেকে বিবেচনা করলেও করোনা মোকাবিলা করেও বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা আমরা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি লোকরা যেমন করেছে তেমনি আমার দলের লোকরাও আন্তরিকতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সহযোগিতা করেছে। তিনি ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আমাদের দেশের আনাচে কানাচে অনেক মানুষ ছড়িয়ে আছে যাঁরা মানুষের সেবা করেন নিজেদের উদ্যোগে। সেই ধরনের মানুষগুলোকেও আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদেরকেও পুরস্কৃত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মানুষের কল্যাণে এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছেন এমন অনেকেই রয়েছেন তারা কখনো প্রচারে আসেন না। তারা দৃষ্টি সীমার বাইরেই থাকেন। কিন্তু তাদেরকে খুঁজে বের করে আমাদের পুরস্কৃত করা উচিত এ করণে যে, তাদের দেখে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং অন্যরা শিক্ষা লাভ করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের সেবার এবং কল্যাণের মধ্যদিয়ে যে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় হাজার ধন সম্পদ বানালেও সেটা হয় না। কাজেই সেভাবেই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।

শেখ হাসিনা মঞ্চ থেকে নেমে এসে জীবিত দুই মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুদ্দীন আহমেদ ও আব্দুল জলিলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এ ছাড়া স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য এবার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (মরনোত্তর) শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা (বীর বিক্রম) (মরনোত্তর) ছাড়াও মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস এবং সিরাজুল হক (মরনোত্তর) ‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন। ‘চিকিৎসাবিদ্যায়’ পুরস্কার পেয়েছেন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া ও অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম এবং ‘স্থাপত্যে’ ক্যাটাগরিতে প্রয়াত স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেন স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।

এ ছাড়াও, ‘মুজিব বর্ষে’ বাংলাদেশকে শত ভাগ বিদ্যুতায়নে সাফলোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে এবং বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে ‘গবেষণা ও প্রশিক্ষণ’ বিভাগে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রত্যেক পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিকে একটি স্বর্ণপদক, একটি সার্টিফিকেট এবং একটি সম্মানী চেক প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক. ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এবং ‘স্বাধীনতা পুরস্কার পদক-২০২২’ বিজয়ীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী পড়ে শোনান। অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

গত ১৫ মার্চ জাতীয় পর্যায়ে গৌরবময় ও অসাধারণ অবদানের জন্য ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি¡ ও একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’-এর জন্য চূড়ান্ত করে সরকার। পরবর্তীতে সাহিত্য ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের জন্য মনোনীত আমির হামজার নাম বিতর্কের কারণে বাদ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনতে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য বুধবার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’-এর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের নাম মনোনীত করা হয়েছে। ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে সরকার।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!