জুলাই মাসেই জাতীয় সনদ: আলী রীয়াজ

ক্যাপ্টেন (অবঃ) মারুফ রাজুঃ জাতীয় ঐকমত্য সনদ প্রস্তুতের লক্ষ্যে আগামী মাসের মধ্যেই একটি খসড়া প্রণয়ন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, “আমরা বহুবার যে লক্ষ্যটির কথা বলেছি, সেটিই আমাদের উদ্দেশ্য—জুলাই মাসের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য সনদ তৈরি করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”

তিনি আরও বলেন, “এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর যে অংশগ্রহণ এবং সহায়তা আমরা পাচ্ছি, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি বিশ্বাস করি, এ সহযোগিতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।”

মঙ্গলবার সকালে কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপ শুরু হয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। সংলাপের সূচনায় আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি অবস্থানে পৌঁছাতে চাই যেখানে সবাই একমত না হলেও অন্তত জাতীয় স্বার্থে কিছুটা ছাড় দিয়ে সমঝোতায় আসা সম্ভব হবে। সব বিষয়ে একমত হওয়া হয়তো সম্ভব নয়, তবে আলোচনা করে একটা সমন্বিত অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।”

এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে, সকাল সাড়ে ১১টায়।

আলোচনায় অংশ নিয়েছেন বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ ও ইসমাইল জবিহউল্লাহ, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এনসিপির তাসনিম জারা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এবং বাংলাদেশ জাসদের মোস্তাক হোসেনসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। তবে জামায়াতে ইসলামী থেকে কেউ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।

সংলাপে সভাপতিত্ব করছেন সহসভাপতি আলী রীয়াজ। উপস্থিত রয়েছেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংলাপ চলবে ধাপে ধাপে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

এই আলোচনায় সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন, নারী প্রতিনিধিত্ব, সংসদের স্থায়ী কমিটির নেতৃত্ব ও প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত মতানৈক্যগুলো নিরসনের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

ঈদুল আজহার আগে প্রথম ধাপের সংলাপ শেষে দ্বিতীয় দফার আলোচনার অংশ হিসেবে ২ জুন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে ঐকমত্য কমিশন। ওই সভায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত ছিলেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়, যাদের সুপারিশ কমিশনের হাতে আসে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এসব সুপারিশের ভিত্তিতে ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

এই কমিশন সংবিধান, নির্বাচন, বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন ও প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার বিষয়ে মোট ১৬৬টি প্রস্তাব তুলে ধরে। ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত জানতে চাওয়া হলে, তার মধ্যে ৩৩টি পক্ষ মতামত দেয়।

এরপর ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৫টি বৈঠকের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা সম্পন্ন হয়। কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও আলোচনা হয়। কমিশনের মতে, অনেকগুলো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পূর্ণ কিংবা আংশিক ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।

Share this post

scroll to top