ক্যাপ্টেন (অবঃ) মারুফ রাজুঃ মানবতাবিরোধী অপরাধসংক্রান্ত একটি মামলায় ক্ষমতা হারানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আদালতে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি ছাপানোর নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানায়, অভিযুক্ত এই দুইজনকে এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি। তখন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আইনি প্রক্রিয়া অনুসারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন।
চলতি বছরের ১ জুন ট্রাইব্যুনাল পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। বলা হয়, ২৪ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান প্রতিরোধের নামে সংঘটিত ঘটনাসমূহের সাথে তারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
এ মামলায় গ্রেপ্তারের বিষয়ে অগ্রগতির প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ১৬ জুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এই মামলায় আরেক অভিযুক্ত, তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে সোমবার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “পুলিশ অভিযুক্তদের ঠিকানায় গিয়ে তাদের খুঁজে পায়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তারা দেশত্যাগ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী তাদের নাম সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে হবে।”
এর প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল একটি বাংলা এবং একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়, যাতে সাত দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের আদালতে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
পরবর্তী শুনানির জন্য আদালত ২৪ জুন দিন নির্ধারণ করেছে। তখন যদি তারা হাজির না হন, তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের অনুপস্থিত দেখিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
গত ১ জুন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম প্রায় সাড়ে আট হাজার পৃষ্ঠার বিশদ অভিযোগনামা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। এই বিচারিক কার্যক্রম বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়, যাতে আন্তর্জাতিক মহল তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল ১২ মে তদন্ত শেষে যে প্রতিবেদন জমা দেয়, তাতে শেখ হাসিনাকে ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট মাসে সংঘটিত নিপীড়নের মূল পরিকল্পনাকারী, আদেশদাতা এবং সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর, অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে।
গত ১৭ অক্টোবর আদালত প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে গ্রেপ্তারি আদেশ জারি করে। তিনি দেশ ত্যাগ করে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।
জুলাই-অগাস্ট মাসের সহিংস নিপীড়নের ঘটনায় আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে দায়ী—এমন অভিমত তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকার আইনে সংশোধনী এনে দলগত বিচারের পথও উন্মুক্ত করেছে।
জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে যে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিচারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
এদিকে, সংবিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আসিফ নজরুল সম্প্রতি এক সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালেই এই বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।