ক্যাপ্টেন (অবঃ) মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ত্বরান্বিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, দেশের জনগণ দ্রুত অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে। একসময় যাদের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল ছিল, তাদের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পারে।
বিশ্ব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বুধবার (২১ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স সোসাইটি ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় শহীদ জিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মঈন খান বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। আমরা আশা করি সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।’
দেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার চেষ্টা না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন।
তিনি বলেন, ‘আমি সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ আবেগপ্রবণ ও খুব দ্রুত অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। কারণ তারা কঠিন পরিস্থিতিতে বাস করে। জনগণের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ও মনস্তত্ত্ব এমন যে, তারা আজ যাদের খুব প্রশংসা করে, তারা আগামীকাল তাদের পায়ের তলায় পিষে ফেলতে দ্বিধা করবে না। যারা এই সত্য বুঝতে ব্যর্থ হবে, তারা ইতিহাসের পাতায় পরাজিত হয়ে থাকবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, তার দলও মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার চায়, তবে রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের নামে নির্বাচন বিলম্বিত করা উচিত নয়। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যতদিন পৃথিবী থাকবে, সংস্কার অব্যাহত থাকবে। কিন্তু সংস্কার এবং গণতন্ত্র পারস্পরিকভাবে একচেটিয়া বা ধারাবাহিক নয়—তারা একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারে। এটি মানব সভ্যতার ইতিহাস। আমি আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সত্যটি বুঝতে পারবে।
ড. মঈন বলেন, বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো দেশের কল্যাণের জন্য ঐক্য। ‘আমাদের জাতির কল্যাণের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কিন্তু আমি বাকশালের পক্ষে কথা বলছি না—ঐক্যের মধ্যে বৈচিত্র্য থাকতে হবে।’
তিনি অভিযোগ করেন, একটি মহল মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা দাবি করছে যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে স্বৈরাচার ফিরে আসবে। এই ধরনের মিথ্যা বর্ণনা দিয়ে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে বিভ্রান্ত করা সম্ভব হবে না। ‘বিএনপি অতীতে স্বৈরাচারী শক্তি হিসেবে কাজ করেছে—এমন উদাহরণ কেউ দিতে পারবে না।’
তিনি বলেন, যারা দলের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য, বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার ছড়াচ্ছে—তাদের যথাযথ জবাব বিএনপিকে দিতে হবে।
ড. মঈন ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান। বলেন, তারা গর্বের এক নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে। ‘কিন্তু আমি তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, বাংলাদেশে এই ধরনের সম্মান বজায় রাখা কঠিন।’
বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন উল্লেখ করে তিনি সতর্ক করে বলেন, একটি মাত্র অপকর্ম জনগণের চোখে শত শত ভালো কাজকে ম্লান করে দিতে পারে।
বিএনপি নেতা বলেন, জাতির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। ‘যদি তারা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি বা যোগ্যতা ছাড়াই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে—তাহলে জাতির ধ্বংস অনিবার্য।’