DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানালো ছাত্রদল

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)  এর ছাত্র রাজনীতি নিয়ে চলমান আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব হাসান এ ঘোষণা দেন।

রাকিব বলেন, ছাত্রদল একটি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি চর্চায় বিশ্বাসী। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উদ্ভূত পরিস্থিতি ছাত্রদল অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনে করে, ছাত্রলীগের প্রাণঘাতী নির্যাতন থেকে নিস্তার পেতেই বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সেখানে ছাত্রলীগের রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। শহীদ আবরার ফাহাদকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে খুন করার পরে মুষ্টিমেয় দুই-একজন বাদে বুয়েটের সকল শিক্ষার্থী সন্ত্রাসী  সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যদিও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে নিরাপত্তার অভাবে তারা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলেছে। ছাত্রদল মনে করে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আপাতদৃষ্টিতে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে যে অবস্থান তার একক দায়ভার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে খুনী, ধর্ষক, নারী নির্যাতনকারী, প্রশ্নফাঁসকারী, মাদকব্যবসায়ী এবং টেন্ডারবাজদের অভয়ারণ্য। দেশপ্রেমিক মেধাবী শিক্ষার্থী শহীদ আবরার ফাহাদকে হত্যা করে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। একইসাথে দেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। ছাত্রদলসহ কোনো গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের এই দুষ্কর্মের দায়ভার বহন করবে না।

রাকিব বলেন, বুয়েটে ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা স্বস্তি এবং নিরাপত্তা লাভ করেছে। কারণ বুয়েটসহ সারা দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ টর্চার সেল গড়ে তুলেছে। শহীদ আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পরে বুয়েটের টর্চার সেলগুলো বন্ধ হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি কলেজগুলোর হলে ছাত্রলীগের টর্চার সেলে নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুমে ছাত্রদের মারধর করার শতাধিক ঘটনা বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো হলে ছাত্রদলসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সমর্থক কোনো শিক্ষার্থী অবস্থান করতে পারে না। ছাত্রদল সমর্থন করার কারণে এযাবৎ পাঁচ শতাধিক ছাত্রকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে পাশবিক নির্যাতন করে বের করে দেওয়া হয়েছে। রড, স্ট্যাম্প, হকিস্টিক দিয়ে নির্যাতন করার পরে গুরুতর আহত অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রচণ্ড শীতের রাতে ছাত্রলীগের গেস্টরুম নির্যাতনের শিকার হয়ে এস এম হলের হাফিজুর মোল্লা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে এফ রহমান হলের আবু বকর খুন হয়েছে। শুধু বুয়েটের আবরার নয়, গত ১৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও ছাত্রলীগের কারণে দুজন নিরীহ শিক্ষার্থী খুন হয়েছে। এছাড়া নিজের ধার দেওয়া ক্যালকুলেটর ফেরত চাইতে গিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের আঘাতে চোখ হারিয়েছে এস এম হলের শিক্ষার্থী এহসান রফিক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে ছাত্রলীগের নেতারা। ছাত্রলীগের এমন পাশবিক  নির্যাতনের ফিরিস্তি বলে শেষ করা যাবে না।

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন ছাত্ররাজনীতির আতুর ঘর এবং গণতন্ত্র চর্চার তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত ছিল। কিন্তু ছাত্রলীগ গত ১৫ বছর ধরে এককভাবে মধুর ক্যান্টিন দখলে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতন্ত্র চর্চার কফিনে শেষ পেরেক মেরে দেয়। মধুর ক্যান্টিনে নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদ কায়েম করে বুয়েটে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে যাওয়া একটি প্রহসন। এর পেছনে রাজনীতি চর্চার কোনো উদ্দেশ্য নাই। বরং বুয়েটের ক্যান্টিন, মেস, দোকানপাট থেকে চাঁদাবাজি এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড থেকে টেন্ডারবাজি করতে না পারার হতাশা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাত্রলীগ সমর্থক নগণ্য সংখ্যক বিপথগামী বুয়েটের শিক্ষার্থীর সহায়তায় ক্যাম্পাসে পুনরায় লুটপাট এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করার ষড়যন্ত্র করেছে।

তিনি বলেন, বুয়েটে ছাত্রলীগের কার্যক্রম চালু করার পদক্ষেপ  বুয়েটের সাধারণ শিক্ষাার্থীদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা এখন শঙ্কিত এই কারণে যে,  ছাত্রলীগের কার্যক্রম পুনরায় চালু হলে তাদেরকে  পড়াশোনা এবং ক্লাস পরীক্ষা বাদ দিয়ে ছাত্রলীগের মিছিল – মিটিং, গেস্টরুমে হাজিরা দিতে হবে। তাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করলে শারিরীক নির্যাতনের শিকার হতে হবে। ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বিরাগভাজন হলে হল থেকে বিতাড়িত করা হতে পারে। বুয়েটের প্রতিটি শিক্ষার্থী আতঙ্কিত কারণ  যেকোনো মুহূর্তে তাদের যে কারো জীবনে ছাত্রলীগের নির্যাতনে শহীদ আবরারের মতো মর্মান্তিক পরিণতি নেমে আসতে পারে। ছাত্রলীগের উপস্থিতিতে  বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা এবং একাডেমিক পড়াশোনার ক্ষতির আশঙ্কাকে আমরা অত্যন্ত যৌক্তিক মনে করছি। এবিষয়ে  আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।

তিনি আরও বলেন, সাংবিধানিক অধিকারের কথা বলে ছাত্রলীগ বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার যে কথা বলেছে তা একটি নিষ্ঠুর প্রতারণা। ছাত্ররাজনীতির নামে তারা ক্যাম্পাসে একক দখলদারিত্ব এবং ছাত্র নির্যাতনের টর্চার সেল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস গুলোতে 'টোটালিটারিয়ান ভায়োলেন্ট এক্টিভিজম' করছে। ক্যাম্পাসে  ভায়োলেন্স এবং টর্চারকে  ছাত্ররাজনীতি বলা যায় না। ছাত্ররাজনীতি চালু করতে  হলে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এর সহাবস্থান নিশ্চিত করা আবশ্যক।   ক্যাম্পাসে এবং হলে সকল রাজনৈতিক সংগঠনকে অবাধে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দিতে হবে। সকল শিক্ষার্থীকে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু এসবের কোনো কিছু না করে ছাত্রলীগের সভাপতিসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে রাতের আঁধারে মিটিং করে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছে। ভবিষ্যতে বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হলে তার দায়দায়িত্ব ছাত্রলীগকে এবং বুয়েটের প্রশাসনকে বহন করতে হবে।

রাকিব বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান বাকশালের অধীনে জাতীয় ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করে দেশে প্রথম ফ্যাসিবাদী লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চালু করে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাসগুলোতে সকল রাজনৈতিক দলের সহাবস্থানের ভিত্তিতে সুস্থ  গণতান্ত্রিক চর্চায় বিশ্বাসী। আপোষহীন নেত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান  দেশনায়ক তারেক রহমান এর দিকনির্দেশনায় পরিচালিত ছাত্রদল এখন দেশের গণতন্ত্রকামী ছাত্রজনতার কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্রসংগঠন। আমরা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বুয়েটসহ  দেশের সকল ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং সহাবস্থান দাবী করছি।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, দেশ এখন গভীর সংকটে। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নিকৃষ্টতম হত্যা করেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ছাত্রলীগ আবারও আদালতের রায় নিয়ে ছাত্ররাজনীতি করার যে, অপচেষ্টা চালাচ্ছে তা ছাত্ররাজনীতির জন্য কলংকজনক ঘটনা। আমরা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আদালত বুয়েট প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মতের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।

নাছির উদ্দিন নাছিরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি) জাহাঙ্গীর প্রধান, প্রচার সম্পাদক শরীফ প্রধান শুভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন প্রমুখ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!