DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনের নীলনকশা করছে: বিএনপি

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের একটি নীলনকশা তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির তরফে বলা হয়েছে, একনায়কতান্ত্রিক রাজনীতির কারণে সময়ের পালাবদলে আওয়ামী লীগকে একদিন চরম মূল্য দিতে হবে। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে রোববার দেয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে ও বিএনপির বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই বলে যে দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিএনপি’র রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নেয়া হবে, এমন সম্ভাব্য ষড়যন্ত্রে জাতি স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ।

বিবৃতিতে বলা হয়, যে দলের প্রায় ৫০ লক্ষ সক্রিয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শুধু মিথ্যা মামলা রয়েছে, যে দলের অকুন্ঠ সমর্থনে রয়েছে সমাজের প্রতিটি শ্রেণি ও পেশার কোটি-কোটি গণতন্ত্রকামী মানুষ যে দলের দিকে ভোটাধিকার ও স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষায় তাকিয়ে আছে দেশের জনগণ, বর্তমান বাংলাদেশের বৃহত্তম সেই রাজনৈতিক দল বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক এসব ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য তাদেরকেই প্রতিনিয়ত একটি জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত করছে। তাঁদের এই বয়ানের লক্ষ্য, ৭ জানুয়ারির তথাকথিত ‘ডামি ইলেকশন’ আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশে পুনরায় একটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার ঘৃণ্য উদ্যোগের প্রধান বাধা, তথা জনগণের আকাঙ্ক্ষা গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গণসমর্থিত বিরোধী দল, বিএনপির অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করা যায়।  

বিবৃতিতে বলা হয়, সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও রাজনৈতিক জিঘাংসার মাধ্যমে, আওয়ামী লীগ বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করছে, যেন বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া যায়। কিন্তু এতো গুম, এতো খুন, এতো মামলা, এতো অত্যাচার, এতো মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ফ্যাসিবাদের নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতা নিষ্পেষণে ও বিএনপিকে একবিন্দু দমানো সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগের মনে রাখতে হবে, বিএনপি নিছক একটি রাজনৈতিক দল নয়। বিএনপি পুরো বাংলাদেশ জুড়ে বিস্তৃত একটি মহীরুহ সংগঠন, যার সমর্থন রয়েছে দেশের প্রতিটি মহল্লায়, সমাজের প্রতিটি স্তরে, রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামোতে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ থেকে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি, বহুমুখী কর্মসংস্থান থেকে কৃষি বিপ্লব, শিক্ষার প্রসার থেকে নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশকে একটি সুদৃঢ় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভিত্তি এনে দিয়েছে বিএনপি, যাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ আওয়ামী লীগের অনুধাবন করা উচিত যে, রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রাখার মোহে, আপাতদৃষ্টিতে চরমপন্থি চিন্তায় তারা নিজেদের বিজয়ী ভাবলেও দীর্ঘমেয়াদে এমন অপরিণামদর্শী ও একনায়কতান্ত্রিক রাজনীতির পরিণাম ভালো হবে না-হয় না কখনো। বিভাজিত রাজনীতির ধারাবাহিকতায়, সময়ের পালাবদলে, আওয়ামী লীগকেই একদিন এর চরম মূল্য দিতে হবে। সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করে, দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি নিরঙ্কুশ ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকে, আমরা একটি শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলন পরিচালনা করছি। বিএনপি প্রত্যাশা করে, শিগগিরই আওয়ামী লীগের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা দেশকে সহিংসতার দিকে না ঠেলে, শান্তির দিকে নিয়ে আসবে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ যখন ফ্যাসিবাদী চক্রান্তে হুমকির মুখে গণতন্ত্রের পক্ষের সকল শক্তি, দল ও ব্যক্তি যখন ডামি নির্বাচনকে বর্জন করে বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়েছে দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখন এই নির্বাচনকে যৌক্তিকভাবেই একটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসেবে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে ঠিক তখন বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্যসমূহের উদ্দেশ্য জনগণের কাছে স্পষ্ট।


বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপিকে ভাঙনের ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর, ফ্যাসিবাদকে দৃঢ় করবার নতুন ফন্দি-ফিকির খুঁজছে আওয়ামী লীগ। গণভবনে এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী দলগুলো কর্তৃক সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি তাঁর নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন, দলীয়ভাবে সেই সহিংসতাকে মোকাবিলা করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে। এর পরপরই রাষ্ট্রীয় মদদে সহিংসতার ঘটনা বাড়তে থাকে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাসে-ট্রেনে আগুনসহ অগ্নিসন্ত্রাস ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলতে থাকে। আওয়ামী লীগের দলীয় অঙ্গসংগঠনে পরিণত হওয়া রাষ্ট্রযন্ত্রের একাংশকে ন্যাক্কারজনকভাবে কাজে লাগিয়ে, রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে, ক্ষেত্রবিশেষে জোরপূর্বক ভুয়া স্বীকারোক্তি আদায় করে বেআইনিভাবে তা প্রচার করা হয় জনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য।

আওয়ামী লীগ যেমন একদিকে সরকার হিসেবে, গণতন্ত্রকামী হাজার-হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের মিথ্যা অজুহাত তৈরি করতে চাচ্ছে; অন্যদিকে তেমনি দল হিসেবে, বিএনপির জনকল্যানমুখী ও গণতন্ত্রের পক্ষের অবস্থানকে বিতর্কিত করার প্রোপাগান্ডায় লিপ্ত হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, সহিংসতার এই রাজনীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আগুন নিয়ে খেলছে। তারা নিরীহ মানুষদের হত্যা করে, আগুনে পুড়িয়ে, জনগণের লাশের উপর বসে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের অতীত নাশকতার ইতিহাস ও এসব সহিংসতাকে ব্যবহার করে দমন-পীড়নের কৌশল বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট যে, বিএনপিকে তথাকথিত সন্ত্রাসী দল হিসেবে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে, আওয়ামী অপশক্তি বাংলাদেশে গণতন্ত্র হত্যা ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের একটি নীলনকশা তৈরি করছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র আশার প্রদীপ বিএনপিকে নিভিয়ে দেয়ার যে কুচক্রী প্রকল্প তারা হাতে নিয়েছে, তা অচিরেই দু:স্বপ্ন হয়ে দাঁড়াবে। বিএনপি গণতন্ত্রকামী কোটি-কোটি মানুষকে সাথে নিয়ে আওয়ামী বাকশালীদের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে ইনশাআল্লাহ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!