DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

হাসিনা সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি সহ ৩৫দল

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃহাসিনা সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ‘যুগপৎ’ আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপিসহ ৩৫টি রাজনৈতিক দল। এরমধ্যে সরকারবিরোধী ২২ দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপ করছে বিএনপি। এর বাইরে অনানুষ্ঠানিকভাবে আরও ১৩টি দলের সঙ্গেও আলোচনা করেছে।

‘কৌশলগত’ কারণে সব দলের নাম এখনই প্রকাশ করতে চায় না বিএনপি। তৃতীয় দফার সংলাপ শেষ করে একটি রূপরেখা তুলে ধরবেন দলের নেতারা। সে অনুযায়ী একযোগে আলাদাভাবে দলগুলো কর্মসূচি পালন করবে। সুশৃঙ্খলভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য একটি লিয়াজোঁ কমিটি করারও চেষ্টা চলছে। এতে সব দলের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হবে। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রথম দফায় আমরা ২২টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছি। দ্বিতীয় দফার সংলাপ চলছে। ৩৫টি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেবে বলে আশা করছি। আমরা একমত হয়েছি এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলব এবং পদত্যাগ করতে বাধ্য করব। একক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন শুরু হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দাবিনামার মধ্যে যেটা কমন তা হচ্ছে এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বাতিল করতে হবে এবং একটা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তর্র্র্বর্তীকালীন সরকারের হাতে তাদের ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তার অধীনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। এসব দাবি নিয়েই অন্যান্য দলের সঙ্গে সংলাপ হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে তাদের অন্যান্য দাবি নিয়ে একক দাবিনামা তৈরি করা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য  জানান, ২২ দলের বাইরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও বিএনপির অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে ইসলামী, বাম ও আরও কয়েকটি দলের সঙ্গেও একই আলোচনা হয়েছে। একই দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চসহ আরও একটি জোট ও বিএনপিসহ বাকি রাজনৈতিক দল সবাই পৃথকভাবে যুগপৎ আন্দোলনে রাজি আছে। এখন বিএনপির পক্ষ থেকে একটি রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে।

ওই নীতিনির্ধারক আরও জানান, পরিস্থিতি বুঝে শুধু বিএনপির সংসদ-সদস্যরা নন, আরও কয়েকটি দলের সংসদ-সদস্যরা পদত্যাগ করতে পারেন। কিন্তু তা এখনই নয়। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এখনই পদত্যাগ করলে নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের সুযোগ পাবে। এমন সময় পদত্যাগ করা হবে যখন উপনির্বাচন করারও সময় থাকবে না। এতে করে সরকার আরও বেশি বেকায়দায় পড়বে।

বিএনপি এককভাবে এখন দশ সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ শুরু করেছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ কর্মসূচি। দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এসব সমাবেশে সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী কর্মসূচি কেমন হবে। সরকার কঠোর হলে বিএনপির কর্মসূচিও কঠোর হবে।

‘যুগপৎ’ আন্দোলনে রাজি ২২ দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ করেছে বিএনপি। দলগুলো হলো-লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, মুসলিম লীগ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাগপা, ন্যাশনাল পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি, এনডিপি, পিপলস লীগ, বাংলাদেশ জাতীয় দল ও গণফোরাম (মন্টু)।

জানতে চাইলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ  বলেন, ‘সরকার পতনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন হবে। বিএনপি আগে থেকেই মাঠে- ময়দানে কাজ করছে। মাঠে সে রকম এলডিপির কর্মকাণ্ড ছিল না। কিন্তু ৮ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে আমরা বিএনপির সঙ্গে যে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলেছি, তার সূচনা করেছি।’

এদিকে সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। সোমবার রাজধানীর কাওরান বাজারে সমাবেশ করেছে। ২১ অক্টোবর মিরপুরে ও ২৭ অক্টোবরে উত্তরায় সমাবেশ হবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকার বিভিন্ন থানা, বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি  বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের জন্য প্রথম দফায় আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই দ্বিতীয় দফায় বৈঠক হবে। আশা করি আমরা যুগপৎ আন্দোলনের একটা রূপরেখা তৈরি করতে পারব। আন্দোলনের জন্য একটা সাধারণ লক্ষ্য থাকতে হবে।’

অপরদিকে, আটটি ইসলামি দল নিয়ে জোট করার চেষ্টা করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম যুগান্তরকে বলেন, ‘দেশে সুন্দর ও স্বচ্ছ একটি নির্বাচন চাই। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সম্পূর্ণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়-তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। সুতরাং এ দাবিসহ দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি, বর্তমান শিক্ষানীতির মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ঐচ্ছিক রাখার প্রতিবাদসহ নানা দাবিতে আমরা রাজপথে আছি, ভবিষ্যতে থাকব।’

ছয় দলীয় বাম জোট ২২ অক্টোবর ঢাকাসহ দেশব্যাপী গণপদযাত্রা এবং নভেম্বরজুড়ে বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন জেলায় জনসভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভের কর্মসূচিও দিয়েছে।

যদিও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমাদের মূল রাজনীতি হচ্ছে আওয়ামী ও বিএনপি বলয়ের বাইরে বিকল্প শক্তি চাই। নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার নিয়ে শনিবার (আজ) রাজধানীর মৈত্রী মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা আছে। দেশের সমাজ ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বামপন্থিরা আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। এই লড়াই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই। আমরা একটি ভালো নির্বাচন চাই। কিন্তু এটা শেষ কথা নয়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!