DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৫৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে হাসিনা সরকার!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৮ হাজার কোটি ৫০৮ টাকার সমপরিমাণ ঋণ অনুমোদন দিয়েছে হাসিনা সরকার। এতে ডলারে ৬২০ কোটি বা স্থানীয় মুদ্রায় ৫৩ হাজার ৩২০ কোটি টাকা।

আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক মুদ্রায় ৫২ কোটি ৪০ লাখ ইউরো বা স্থানীয় মুদ্রায় ৫ হাজার ১৬৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এখান থেকে কারেন্সি সোয়াপ বা সাময়িক বিনিয়োগ হিসাবে ২০ কোটি ডলার বা ১৭২০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে শ্রীলংকাকে।

বাকি অর্থের মধ্যে পায়রা বন্দরকে ৫২ কোটি ৪০ লাখ ইউরো এবং রপ্তানি ঋণ তহবিলে (ইডিএফ) ৬০০ কোটি ডলার বা ৫১৬০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তিন খাতে এ ঋণের অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন দেশের শির্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া-নেওয়ার জন্য পুঁজিবাজারও একটি ভালো জায়গা। সুতরাং রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়া মোটেও উচিত হবে না।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন  জানান, বলা হচ্ছে রিজার্ভ অনেক বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত রিজার্ভ থেকে ঋণ দেবে। সম্প্রতি আমদানি ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া মুদ্রা বিনিময় হার ঠিক রাখতে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিনিময় হার ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত ডলার হাতে রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন খাতে যেসব অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেগুলো মূল হিসাব থেকে বাদ দিতে হবে। সেগুলো বাদ দিলে অতিরিক্ত ডলার থাকে না। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতেও পর্যাপ্ত রিজার্ভ লাগবে। এরপরও রিজার্ভ থেকে ঋণ দিলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে রপ্তানিকারকদের ঋণ দিতে ইডিএফে দেওয়া হয়েছে ৬০০ কোটি ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি। এর পুরোটাই ওই তহবিলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এখন থেকে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে রপ্তানিকারকদের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেওয়া হচ্ছে। পায়রা বন্দরের জন্য ৫২ কোটি ৪০ লাখ ইউরো বা ৫ হাজার ১৬৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছাড় করা হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ইউরো বা ২৬৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বাকি অর্থ এখনো ছাড় হয়নি।

এছাড়া শ্রীলংকার অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে শ্রীলংকাকে কারেন্সি সোয়াপের (জরুরি প্রয়োজনে সাময়িকভাবে বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া) ২০ কোটি ডলার বা ১৭২০ কোটি টাকা। যার পুরোটাই ইতোমধ্যে ছাড় করা হয়েছে।

জানা যায়, করোনা মহামারির মধ্যেও কয়েক বছর ধরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একের পর এক রেকর্ড গড়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক ঋণ ছাড়ের ওপর ভর করে গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮০০ কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে।

এ রিজার্ভ দিয়ে ৭ থেকে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) নিরাপদ মান অনুযায়ী কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই তাকে নিরাপদ ধরা হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেই।

এ কারণেই সরকার রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছে। এর আওতায় উৎপাদনশীল খাতে রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়। যার নাম বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (বিআইডিএফ)।

জানা যায়, রিজার্ভের অর্থ দিয়ে প্রথম উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেনটেইনেন্স ড্রেজিং প্রকল্প। সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ১০ বছর মেয়াদি এই ঋণের অর্থে বন্দরের ড্রেজিংসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে সুদের হার হবে ২ শতাংশ। সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে দেবে ১ শতাংশ সুদ।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৫১৪ কোটি ডলার। এ মাসের শুরুর দিকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের শোধ করার পর রিজার্ভ কিছুটা কমেছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!