DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সভ্যতার সঙ্কট ও ধর্মনিরপেক্ষ জঙ্গিবাদ – আবু রুশদ।

আবু রুশদঃ  দশ মাস ধরে একটি ধূর্ত ও অদৃশ্য শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে একুশ শতকের যাবতীয় প্রযুক্তি, জ্ঞান নিয়ে যুদ্ধ করে মানবসভ্যতা যখন ক্লান্ত, শ্রান্ত, দিশেহারা ও অর্থনীতির ধারাবাহিক নিম্নমুখীনতায় আতঙ্কিত ঠিক তখনি নতুন একটি যুদ্ধের ফ্রন্ট উন্মুক্ত করেছে কয়েকটি বিকৃত রুচির কার্টুন। কার্টুন সমাজের, শাসনব্যবস্থার অসঙ্গতিকে ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে উপস্থাপন করে মানুষকে সচেতন করে তোলে, যা মিডিয়া ও সাহিত্যের একটি শক্তিশালী অনুষঙ্গও বটে। কিন্তু ফরাসি শার্লি এবদোর কার্টুনগুলো সমাজ পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আসেনি, এসেছে একটি বিশাল ধর্মীয় গোষ্ঠীর নবীর সম্মানে বিদ্বিষ্ট নেতিবাচক কেরিকেচার নিয়ে। এটি কার্টুন বিপ্লব নয়, নৈরাজ্যের অনুঘটক।
যে ধর্মের অনুসারীদের কাছে তাদের ও অন্য সব নবীর কোনো ছবি আঁকা বিশালতম অপরাধ ঠিক সেই স্পর্শকাতর বিষয়টিকেই টার্গেট করেছে শার্লি এবদোর কার্টুনিস্টরা। অবশ্য ইসলামের নবীকে নিয়ে এটাই তাদের প্রথম কার্টুন নয়। গত কয়েক বছর আধুনিক গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আড়াল নিয়েই তারা এসব করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এখন কেন? এতে করোনাভাইরাসে কুপোকাত মানবসভ্যতার কি এমন লাভ? গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কিইবা যায় আসে? কেনইবা কয়েকজন প্যাথোজেনিক ও মনোজাগতিক ক্রিমিনাল ও অতি কট্টর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কার্টুনিস্টের বিকৃতিকে এই সময়ই রাষ্ট্রীয়ভাবে সমর্থন দিতে হলো ফরাসিদের মতো একটি মর্যাদাবান জাতিকে?
এই কার্টুনগুলো কি এমন উপকার করবে করোনার বিরুদ্ধে চলমান সর্বাত্মক যুদ্ধের? যখন দরকার সব জাতির একসাথে কোভিড যুদ্ধ লড়ার ও জয়ী হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়ার, ঠিক তখনি সেই মহতি যুদ্ধ থেকে মানুষকে নিয়ে যাওয়া হলো সভ্যতার সঙ্কটের লড়াইয়ের ময়দানে! কিন্তু এই কথিত যুদ্ধ কি এমন পথ দেখাবে মানবসভ্যতাকে আদর্শের সাথে ধর্মের সঙ্ঘাত ডেকে এনে? এই সঙ্ঘাতটি কি এতই প্রয়োজন ধর্মনিরপেক্ষতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য? সব কিছু দেখে কি শার্লি এবদো ও ফরাসি সরকারের কর্মকাণ্ডকে ধর্মনিরপেক্ষ জঙ্গিবাদ বলা খুব একটা অনুচিত হবে? ফরাসি বিপ্লব, চার্লস দ্য গল, ভিক্টোর হুগো, জ্যু পল সাত্রের দেশটি কি এতই বালসুলভ আচরণ করবে পৃথিবীর এই ক্রান্তিকালে?
একটি ধর্ম হিসেবে নয়, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি পুরো সংস্কৃতিকেই তো আঘাত করেছে আধুনিক ফ্রান্স। একটি বিশ্ব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের মৌলিক একটি উপাদানকে দাঁড় করিয়ে পুরো গণতন্ত্রকেই লজ্জায় ফেলছে ফ্রান্স যেই গণতন্ত্রের জন্য মুসলিম জাতিও কঠোর সংগ্রামে রত। আইএস বা ইসলামিক স্টেটের ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে যদি ঘৃণা করতে হয়, যা সমগ্র মুসলিম বিশ্বই করেছে আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তা হলে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে এই চক্ষুলজ্জাহীন অ্যারোগেন্সিকেও সভ্য মানুষকে ঘৃণা করতে হবে যতটা না ধর্মীয় কারণে তার চেয়ে বেশি নৈতিকতার স্বার্থে। করোনার ময়দানে হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া এই কার্টুনযুদ্ধকে তাই যেন স্যামুয়েল পি হান্টিংটনের সেই কুখ্যাত মতবাদকেন্দ্রিক বই ‘দ্য ক্লাস অব সিভিলাইজেশনস অ্যান্ড দ্য রিমেকিং অব দ্য ওয়ার্ল্ড অর্ডার’- এ প্রকাশিত সভ্যতার সঙ্কট সম্পর্কিত সর্বশেষ প্রায়োগিক রূপ বলেই চিহ্নিত করা হয়। তা না হলে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ কেন একটি জাতির হয়ে আরেক জাতির বিরুদ্ধে সরাসরি ধনুকে তীর লাগালেন?
ব্যক্তিগতভাবে বা কোনো একটি সংবাদমাধ্যমে কোনো কিছু প্রকাশ করা এক জিনিস, আর রাষ্ট্রীয়ভাবে তা এনডোর্স করা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। শার্লি এবদোর মতো প্রতিষ্ঠান কার্টুন এঁকে মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে যদিও তা অনাকাক্সিক্ষত ও অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু রাষ্ট্র ফ্রান্স তা করতে পারে না। আর শার্লি এবদো কে? বামপন্থী হারিয়ে যাওয়া কমিউনিস্ট দেশের রয়ে যাওয়া প্রেতাত্মা। যদিও একসময় ধরে নেয়া হয়েছিল যে কার্যকর কমিউনিজমের পতন হলে এর তাত্ত্বিক সাইকোপ্যাথরাও হারিয়ে যাবে, নিদেনপক্ষে বদ্ধ দুয়ারে আবদ্ধ মানবতা, গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চাপা পাপের প্রায়শ্চিত্ত তাদের সুপথে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
ব্ল্যাকহোলে সমাজতন্ত্র হারিয়ে গেলেও এই হতাশাগ্রস্ত তান্ত্রিকরা তাদের বন্দুকের নলটি ঘুরিয়ে দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুসলমানদের যাবতীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। নাৎসি বিজ্ঞানীরা যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরিচয় গোপন করে আধিপত্যবাদের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন যাবতীয় অপরাধ আড়াল করার লক্ষ্যে, তেমনি এই সমাজতান্ত্রিকরাও লাফ দিয়ে চলে এসেছে অবারিত মতপ্রকাশের ছায়াতলে। গ্রহণ করেছে ডিভাইসিভ ভিন্ন মাত্রার কৌশল। গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে এর পর থেকেই চলছে তাদের উপস্থিতির অকস্মাৎ প্রবৃদ্ধি। তাদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে মিডিয়া, এনজিও ও থিঙ্কট্যাংকগুলো। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। চিরায়ত ‘শত্রুর’ কফিনের ওপর দাঁড়িয়ে ‘নতুন শত্রুর’ খোঁজে ব্যস্ত গণতান্ত্রিক দেশগুলোও ওই সব অবসরপ্রাপ্ত কমিউনিস্টকে সাদরে গ্রহণ করেছে ইনটেলেকচুয়াল হাতিয়ার হিসেবে। এর দায় এসে পড়ে নবী ইবরাহিমের সন্তানদের অনুসৃত প্রধান তিন ধর্মÑ ইসলাম, ক্রিশ্চিয়ানিটি ও জুডাইজমের ওপর। কিন্তু কেন?
১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে প্রফেসর হান্টিংটন যে তত্ত্ব দাঁড় করান সেখানে সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছিল যে ‘ভবিষ্যৎ যুদ্ধ হবে রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের নয়, সঙ্ঘাত হবে সংস্কৃতির সাথে সংস্কৃতির’ যেখানে সংস্কৃতির অর্থ ছিল ধর্ম নিঃসৃত আচার, ব্যবহার ও সভ্যতা। মহাপরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তাই যেখানে সবার হাফ ছেড়ে বাঁচার কথা ছিল সেখানে দেখা দেয় এক নতুন সঙ্কটের। এক মেরু বিশ্বের অর্থাৎ গণতন্ত্রের বিকাশের বিপরীতে তাই পাশ্চাত্যকে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপের এক যুদ্ধের ময়দানে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীকে পরাভূত করতে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানকে যখন ঈশ্বরে বিশ্বাসী মুসলমানদের সহায়তার আহ্বান জানাতে হয়েছিল, সেখানে সেই মুসলমানরাই হয়ে ওঠে তাদের সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক যুদ্ধের লক্ষ্য। সৌদি বাদশাহ আফগান যুদ্ধে মার্কিন অনুরোধে সমগ্র মুসলিম জাতিকে জিহাদে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হয়তো তাই ভুল করেছিলেন।
ওই ‘ভুলের’ কারণেই পৃথিবীর সব মুসলিম দেশ থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা সিআইএ, এমআই সিক্স, মোসাদের পরিকল্পনার সহযাত্রী হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করে ঈশ্বরে অবিশ্বাসী সোভিয়েত কমিউনিস্টদের পরাজিত করতে জড়ো হয়েছিল। ভুল করেছিল মুসলমানরা। ভুল করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান। জিহাদের ডাক দিয়ে একই ‘অপরাধ’ করেছিলেন সৌদি বাদশাহ। ভুল না হলে একসময় মুক্ত বিশ্বের কাছে আফগান রণাঙ্গনে পরিচালিত জিহাদ শব্দটিই পরে কথায় কথায় অপমাণিত হয়েছে। সর্ব প্রকার অব দ্য লাইন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকেই তাই চিহ্নিত করা হয়েছে ‘জিহাদি তৎপরতা’ হিসেবে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।
এ দেশেও কোনো জঙ্গির বাড়িতে থাকা বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ বুখারিকে জিহাদি বই হিসেবে প্রচার করা হয়েছে মিডিয়ায়। সেই মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণে কারা তা বলাবাহুল্য। তারা প্রায় সবাই জ্ঞাতসারে বা অবচেতন মনের সেই এক্স সমাজতান্ত্রিক। তারা শুধু তাদের বন্দুকের নলটি ঘুরিয়ে দিয়ে গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে মুসলিমদের সামনে প্রতিপক্ষ হিসেবেই দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। এ এক অদ্ভুত প্রতিশোধ। এক সুচতুর কৌশল। পাশ্চাত্য সেই কৌশলের নিগড়ে বাঁধা পড়ে আছে সমাজতন্ত্রের পতনের মাহেন্দ্রক্ষণ থেকে। আজকের ফ্রান্সও তাই।
গত শতকের নব্বই দশক থেকে পাশ্চাত্য লড়ছে মুসলিম দেশগুলোয় কথিত জিহাদি শক্তির বিরুদ্ধে। ইরাক, আফগানিস্তান হয়েছে ক্ষতবিক্ষত। লড়াইয়ে সম্মুখ সারিতে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাদের ডলারে এখনো লেখা হয় ‘ইন গড উই ট্রাস্ট’ অর্থাৎ আমরা আল্লাহতে বিশ্বাস করি সেই যুক্তরাষ্ট্রও ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খুইয়েছে এই সভ্যতার সঙ্কটে। হয়তো তারা এত দিনে এসে সেই বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। তাই সৈন্য সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইরাক, আফগানিস্তান থেকে। তারা এ-ও বুঝতে পারছে হান্টিংটন ও ঘাপটি মেরে থাকা অন্দর মহলের অবসরপ্রাপ্ত কমিউনিস্টরা তাদের যা ক্ষতি করার করে ফেলেছে। হঠাৎ করেই তারা দেখছে তাদের সামনে বিশাল সমরসজ্জা ও সলিড অর্থনীতি নিয়ে চীন-রাশিয়া অক্ষের নতুন প্রতিপক্ষ হাজির। মার্কিন নৌবাহিনীর ধারণাতীত ক্ষমতাশালী ফ্লিটগুলো তাই আটলান্টিক ছেড়ে প্রশান্ত মহাসাগরে, দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থান নিয়েছে।
ন্যাটো জোটের দেশগুলোও ঘুম থেকে জেগে দেখতে পাচ্ছে তাদের ন্যূনতম কোনো সমর শক্তি নেই চীন-রাশিয়ার শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার। এখন তারা ক্ষয়ে যাওয়া, মরচে ধরা বন্দুকের নলটি আবারো তাই ঘুরিয়ে দিতে চাচ্ছে নবী ইবরাহিমের সন্তান মুসলমানদের বিরুদ্ধে; তাদেরই আরেক ভাইয়ের দিকে। প্রত্যক্ষ যুদ্ধ তাদের জন্য এখন আর সম্ভব নয়। মুসলমানদের হাতে অ্যাটম ও হাইড্রোজেন বোমাসহ আন্তঃমহাদেশীয় মিসাইলই শুধু নয়, প্রায় সব সমর প্রযুক্তিও আয়ত্তে এসে গেছে। তাই সহজ পথ প্রফেসর হান্টিংটনকে গুরু মানা। কিন্তু তারা আবারো সেই চিরচেনা ফাঁদেই যেন পড়তে যাচ্ছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের আদর্শ কবরে চলে গেলেও রয়ে গেছে কতগুলো অপচ্ছায়া, কতগুলো প্রেতাত্মা। তাদের প্রতিশোধের সহজ হাতিয়ার হলো আবার সভ্যতার সঙ্কট সৃষ্টি করা। আবারো সংস্কৃতির সাথে সংস্কৃতির যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়া। তারা এখনো স্বপ্ন দেখে এনার্কি সৃষ্টি করে তাদের সেই হারিয়ে যাওয়া ইউটোপিয়ান সমাজব্যবস্থা আবারো কায়েম করতে পারবে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ অজান্তেই পাশ্চাত্যের মহতি আদর্শ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আড়াল নেয়া সেই প্রেতাত্মাদের খেলাটাই খেলছেন। এ যে আদর্শিক জঙ্গিবাদ তা হয়তো তিনি ভাবতেই পারছেন না। ধর্মীয় জঙ্গিবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষ জঙ্গিবাদ যে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ তা তার চিন্তায় এখনো ভাবনার রেখা সৃষ্টি করছে না। চুপিসারে ঘাপটি মেরে থাকা এক্স কমিউনিস্টদের পাতা ফাঁদেই তিনি বন্দুক উঁচু করে ধরেছেন। এটাই ভয়ের, মারাত্মক ভয়ের বিষয়, বিশেষ করে পৃথিবীর এই ক্রান্তিকালে। তিনি হয়তো এটাও ভুলে গেছেন রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ করা যায়, সংস্কৃতি ও ধর্মের সাথে যায় না।

লেখকঃ সাবেক সেনা কর্মকর্তা,সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!