DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

করোনায় অর্থনীতির বেহাল অবস্থার মধ্যে ৬৯টি বিলাসবহুল গাড়ী কেনার প্রস্তাব!!!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  করোনার মধ্যেও থেমে নেই গাড়ি কেনার মতো সরকারী বিলাসী ব্যয়। সম্প্রতি মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দফতরসহ ৩৮ জেলা প্রশাসকের জন্য ৬৯টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব গাড়ি কিনতে প্রায় ৫৩ কোটি টাকা চেয়েছে অর্থ বিভাগের কাছে।

এর মধ্যে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দফতরের প্রশাসনিক কাজের জন্য ৭টি মাইক্রোবাস এবং জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) জন্য ৪৫টি জিপগাড়ি ও ১৭টি মাইক্রোবাস রয়েছে। তবে গাড়ি কেনার এই প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়ে এ সংক্রান্ত নথি ফেরত দিয়েছে অর্থ বিভাগ। কারণ চলমান করোনা পরিস্থিতিতে কৃচ্ছ সাধনের অংশ হিসেবে গাড়ি কেন বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

সূত্র আরও জানায়, এর আগে করোনার মধ্যেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের জন্য ৫০টি জিপ গাড়ি প্রায় ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে অর্থ বিভাগ। কারণ এ প্রস্তাবটি গাড়ি ক্রয় বন্ধ সংক্রান্ত যে পরিপত্র জারি করা হয় তার আগেই অনুমোদন দেয়া ছিল।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অকারণে মন্ত্রণালয়গুলোয় যানবাহন কেনায় অর্থের অপব্যবহার বেশি হয়। এটি স্থগিত করা হয়েছে। সরকারের এমন পদক্ষেপকে আমি সমর্থন করি।

সূত্র মতে, গাড়ি কেনার প্রস্তাব বাতিল প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগ বলেছে, চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আলোকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় সব ধরনের নতুন ও প্রতিস্থাপক হিসেবে যানবাহন ক্রয় বন্ধ রাখা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্রও জারি করা হয়েছে। ফলে এই পরিপত্র অনুযায়ী এই মুহূর্তে ৬৯টি গাড়ি কেনার জন্য অর্থ ব্যয়ে সম্মতি দেয়ার ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ অসম্মতি জ্ঞাপন করেছে।

সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গাড়ি কেনার একটি প্রস্তাব পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দফতরে প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য ৭টি মাইক্রোবাস ক্রয় করতে হবে। সেখানে আরও বলা হয়, ৩৮ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের টিওএন্ডইতে বিদ্যমান ২টি করে কারের পরিবর্তে ২টি করে জিপ গাড়ি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এর ফলে ৩৮ জেলায় প্রাথমিকভাবে প্রটোকল কাজের জন্য৩৮টি জিপ কেনা দরকার। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, জেলা প্রশাসক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, সিলেট ও যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রটোকল কাজে ব্যবহারের জন্য ৭টি জিপ গাড়ি প্রয়োজন। পাশাপাশি ন্যূনতম আয়ুষ্কাল ৮ বছর পার হওয়ায় ৬৪ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ১৭টি জেলায় মাইক্রোবাস প্রতিস্থাপন করতে হবে।

গাড়ি কেনার ব্যয় তুলে ধরে জনপ্রশাসনের প্রস্তাবে বলা হয়, ৬৯টি গাড়ি ক্রয় করতে ব্যয় হবে ৫২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দফতরে প্রতিটি মাইক্রোবাসের মূল্য হচ্ছে ৪৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ৭টি মাইক্রোবাস ক্রয়ে ব্যয় হবে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। এছাড়া প্রতিটি জিপ গাড়ির মূল্য ৯৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে ৩৮ জেলা প্রশাসকের ৩৮টি জিপ গাড়ি কেনায় ব্যয় হবে ৩৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

আর রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, সিলেট ও যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রটোকল কাজে ব্যবহারের ৭টি জিপ কিনতে ব্যয় হবে ৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকার প্রয়োজন। আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ১৭টি মাইক্রোবাস প্রতিস্থাপনে ব্যয় হবে ৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রতিটি মাইক্রোবাসের মূল্য হচ্ছে ৪৪ লাখ টাকা।

অর্থ ব্যয় প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরে এসব গাড়ি ক্রয় করা প্রয়োজন। চলতি অর্থবছরে সরকারি যানবাহন অধিদফতরে গাড়ি কেনার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এই অর্থ থেকে গাড়ি কেনা বাবদ প্রায় ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ের সম্মতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হল।

উল্লিখিত প্রস্তাব পর্যালোচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ২১ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পাঠিয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, অর্থ বিভাগের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী এ মুহূর্তে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর দফতরের জন্য ৭টিসহ ২৪টি মাইক্রোবাস এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জন্য ৪৫টি জিপ গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ নির্দেশক্রমে অসম্মতি জ্ঞাপন করছে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাড়তি ব্যয় জোগান দিতে কৃচ্ছ সাধনে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। অযৌক্তিক ও বিলাসী ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধন করতে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে বড় কোনো অনুষ্ঠান না করার জন্যও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

কৃচ্ছ্রসাধনে অন্য যেসব খাত নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো হল : পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় যানবাহন ক্রয় স্থগিতের মাধ্যমে ৭৯৩০ হাজার কোটি টাকা এবং চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ স্থগিতের মাধ্যমে ব্যয় কমবে ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়গুলোয় প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে ৯৮০ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, চলমান করোনা সংক্রমণ মোকাবেলা করতে গিয়ে বিভিন্ন খাতে সরকারের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। অন্যদিকে রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ঘাটতি হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতেই মূলত কৃচ্ছ সাধনের পথে হাঁটছে সরকার। এই সাশ্রয়ী অর্থ আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!