DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সরকারী আড়াই একর জমি দখলের চেষ্টা জেলা আওয়ামী লীগ সাঃ সম্পাদকের

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  এবার ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের বিরুদ্ধে সরকারী খাস জমি  দখলের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।। সরকার দলীয় পদের অপব্যবহার করে তিনি বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন-বিজেএমসির আড়াই একর মহামুল্যবান জমির ওপর অবস্থিত গোডাউন দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা যায়।

ময়মনসিংহ শহরের র‌্যালি মোড়ের এ আড়াই একর জমি আদমজী জুট মিলের। এর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১২৫ কোটি টাকা।

মোয়াজ্জেমের সহযোগী একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভুয়া উত্তরাধিকার দেখিয়ে জমিটি দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। এ জমি নিজ কব্জায় নিতে মরিয়া এ চক্রটি রাতের আঁধারে টিন ও কাঠ দিয়ে বেড়া দেয়। শ্রমিক পাঠিয়ে কিছু স্থান পরিষ্কারও করিয়েছে। কিন্তু বিজেএমসির কঠোর অবস্থানের কারণে এখনো সফল হতে পারেনি দখলবাজরা।

জানতে চাইলে বিজেএমসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করেছি। প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গোডাউনের গার্ড আশিক জানান, ‘২৯ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে টিন ও কাঠের বেড়া দিয়ে দখলের চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন সময় ১০ থেকে ১৫ জন এসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করত। অনেকটা চোর-পুলিশ খেলার মতো করেই চূড়ান্ত দখলের পথে এগোচ্ছিল। এসব বিষয় মিল কর্তৃপক্ষকে জানালে পুলিশের সহায়তা নিতে বলেন। পরে দুজনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।’

ডেপুটি অডিট অফিসার শাহরিয়ার জানান, জায়গার প্রকৃত মালিক জুট মিলকে গোটা জায়গাই লিখে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই একজন দাবি করছেন উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি ওই জমির মালিক। এ ব্যাপারে একটি উকিল নোটিসও দেন। অন্যদিকে জায়গাও দখল করতে থাকেন। তিনি আরও জানান, দখলের চেষ্টাকালে কয়েকজনকে আটক করা হয়। কিন্তু কীভাবে যেন পুলিশের কাছ থেকে তারা ছাড়া পেয়ে যান! আটকদের ছেড়ে দেওয়া সম্পর্কে জানার জন্য কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদারকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একসময় আইন পেশা ছিল মোয়াজ্জেম হোসেনের সম্বল। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে তিনি এখন টাকার কুমির। এখন এতটাই দাপুটে যে, ভয়ে নিজ দলের নেতা-কর্মীরাও প্রতিবাদ করার সাহস পান না। আর এজন্য তিনি সময় নিয়েছেন গুনে গুনে মাত্র চার বছর। অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু সরকারি জমিই নয়, সাধারণ মানুষের জমিতে নজর পড়লে তাও গিলে ফেলার চেষ্টা করেন এই নেতা। নগরের চুরখাই এলাকায় তিনি ব্যক্তিমালিকানাধীন ৩০০ শতক জমি ইতোমধ্যে দখলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল জেলার সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় প্রভাব বিস্তার করছেন ভালুকা উপজেলায়ও। উপজেলা সদরে সাধারণ মানুষের প্রায় ১৫০ শতক জমি দখলের চূড়ান্ত বন্দোবস্ত করেছেন। সেখানে প্রতি শতকের মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। তবে এ জমি দখলের ক্ষেত্রে মোয়াজ্জেমের পুরনো সতীর্থদের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছেন ভালুকা সদর ইউনিয়ন মো. হাতেম। 

মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের এসব অনৈতিক কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ খোদ নিজের দলের লোকেরাই। কিন্তু পদ-পদবি ও হয়রানির ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় নেতা-কর্মী বলেন, সাধারণ সম্পাদকের এসব কর্মকান্ডে দলের গুটিকয় নেতা জড়িত। তারাও অল্প দিনে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন।

বিজেএমসির জমি দখল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল অস্বীকার করেন। তিনি  বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ, এটা ঠিক নয়। একজন আইনজীবী হিসেবে জনৈক ব্যক্তি ওই জমির কাগজপত্র আমাকে দেখাতে এনেছিলেন। আমি বলেছি, সিভিল ম্যাটার আমি দেখি না। আপনি সিভিল আইনজীবীর কাছে যান।’ টিন ও কাঠ দিয়ে ওই জমি ঘেরাওয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এরও কিছুই আমি জানি না।’ ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘তাদেরকে আমি চিনি না।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!