DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতা এনু ও রুপন,২ ভাইয়ের অবৈধ সম্পদের পাহাড়।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ কুখ্যাত ক্যাসিনো কারবারি, পুরান ঢাকার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে করা চারটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি তাদের সম্পদের চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। এদিকে দু’জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্তকাজও শেষ পর্যায়ে। যে কোনো সময় আদালতে দাখিল করা হবে চার্জশিট।

সিআইডির একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, এনু-রুপনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের চারটি মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। যে কোনো সময় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। তাদের নামে ব্যাংকে ১৯ কোটি টাকা এবং পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ১২৮টি ফ্ল্যাটের খোঁজ মিলেছে। ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এ দুই ভাই।

২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়াদের পুরান ঢাকার বানিয়ানগরের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সূত্রাপুর ও গেণ্ডারিয়া থানায় তাদের নামে ছয়টি মামলা হয়। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এনু-রুপনের লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই বাড়ি থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়। আর ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজ এবং এক কেজি সোনা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় দুই ভাইয়ের নামে আরও দুটি মামলা হয়। অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনও এনু-রুপনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করে। মামলায় এনুর বিরুদ্ধে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের এবং রুপনের বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। তবে দুদক এখনও আদালতে কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এনু-রুপনের আয়ের বড় উৎস ছিল মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা।

স্থানীয় লোকজন ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েক বছর ধরে ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে রাতারাতি টাকার কুমির বনে যান দুই ভাই। নগদ টাকায় পুরোনো বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি কেনা তাদের নেশায় পরিণত হয়। সিআইডির তদন্তে ১২৮টি ফ্ল্যাট, ছয়টি গাড়ি ও কয়েক বিঘা জমির খোঁজ মিলেছে।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এনু-রুপনের পুরান ঢাকার ৩১ নম্বর বানিয়ানগরে ৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ১০৫ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১০৬ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ১০টি ফ্ল্যাট, ১১৬ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ছয়টি ফ্ল্যাট, ১১৯ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ছয়টি ফ্ল্যাট ও ১১২ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে তাদের। এ ছাড়া ১০৩ ও ১২০ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের দুই কাঠা প্লট, ওয়ারীর ৭০ নম্বর দক্ষিণ মৈসুন্দি এলাকায় ১৪টি ফ্ল্যাট আর গেণ্ডারিয়ার ৬৫/২ শাহ সাহেব লেনের ১৭টি ফ্ল্যাট, ৭১নং শাহ সাহেব লেনের চারটি ফ্ল্যাট, ৮ নম্বর শাহ সাহেব লেনের ১৩টি ফ্ল্যাট, এক নম্বর নারিন্দা লেনের পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১৪ নম্বর নারিন্দা লেনে চারটি, ১৫ নম্বর নারিন্দা লেনের ১১টি ফ্ল্যাট, ১৪ নম্বর নারিন্দা লেনের দুটি ফ্ল্যাট এবং ৬ নম্বর গুরুদাস সরদার লেনের ১২টি ফ্ল্যাটের মালিক দুই ভাই। তাছাড়া ৬৫ নম্বর শাহ সাহেব লেনের টিনশেড ভবন, ১৩৫ নম্বর ডিস্টিলারি রোডে একতলা টিনশেড বাড়ি, ওয়ারী থানার পেছনে ৪৪/বি ভজহরি শাহ স্ট্রিটে ৪ কাঠার প্লট, ৮৮ নম্বর মুরগীটোলায় ৯ কাঠা, কেরানীগঞ্জে তেঘরিয়ায় ১৫ কাঠা জমির ওপর বাড়ি, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় ১০ কাঠার প্লট, শরীয়তপুর নড়িয়ায় ১২ কাঠা, পালং থানায় ২০ শতক এবং নড়িয়ায় ১৪ শতক জমির মালিক এরা দু’জন। সিআইডি তদন্ত করে দেখেছে, বাসায় নগদ টাকা ও সোনা রাখার পাশাপাশি ব্যাংকেও বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রাখেন এনু ও রুপন ভূঁইয়া।

সিআইডির তদন্ত অনুযায়ী, তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ১৯ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৪ টাকা। আদালতের আদেশে এসব টাকা এখন জব্দ রয়েছে। পুরান ঢাকার বংশাল, ইংলিশ রোড, নয়াবাজার, মতিঝিল, শান্তিনগর, গুলশান, ধোলাইখাল, নবাবপুর এলাকায় সাতটি বেসরকারি ব্যাংকে এসব টাকা জমা রাখেন ক্যাসিনো কারবারি এই দুই ভাই।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!