DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও এরিস্টোক্র্যাট গ্রুপের যোগসাজসে নকল এন-৯৫ মাস্কে বাজার সয়লাব।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের যোগসাজসে আবারও দেশে ছড়িয়ে পড়ছে নকল ও নিম্নমানের এন-৯৫ মাস্ক।  ‘কমিশন’ নিয়ে খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএডি) এই মাস্ক সরকারি হাসপাতালে ছাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাতারাতি ঔষধাগার থেকে মাস্ক আমদানির লাইসেন্স নিয়ে নিম্নমানের এসব নকল মাস্ক দেশে এনেছে ‘এরিস্টোক্র্যাট গ্রুপ’।

বিশেষ করে আজ থেকে বাইরে মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক হওয়ায় এসব অসাধু চক্র সরকারের সহযোগিতায় নকল ও নিম্নমানের এসব মাস্কে বাজার সয়লাব করে দিয়েছে।

সূত্র জানায়, ঔষধাগারে এন-৯৫ আদলের নিম্নমানের মাস্ক দেখা গেছে। এরিস্টোক্র্যাট গ্রুপের মতো আরও একাধিক প্রতিষ্ঠান মাস্ক ব্যবসায় নেমেছে। আর তাদের দিয়েই নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ দিচ্ছে ‘সিএমএডি’।

অসুন্ধানে দেখা গেছে, এরিস্টোক্র্যাট নন-ওভেন, কৃষিজাত প্রোডাক্ট তৈরির সঙ্গে জড়িত। মাত্র কয়েকদিন আগে মাস্ক আমদানির জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নেয় তারা। এরপর মাস্ক আনার কার্যাদেশও পায়। এমনকি তাদের ওয়েবসাইটে ব্যবসা তালিকায় স্বাস্থ্য সরঞ্জাম আমদানি করার কোনো রেকর্ড নেই।

 

অভিযোগ, ‘অবৈধ’ সুবিধা নিয়ে এন-৯৫ মাস্ক আনার জন্য তাদের কার্যাদেশ দিয়েছে সিএমএসডি। গত এপ্রিলে দেওয়া হয় এই কার্যাদেশ। ৫০০ টাকা দামের একেকটি এন-৯৫ মাস্ক তাদের সরবরাহ করার কথা ছিলো।

এরিস্টোক্র্যাট গ্রুপের সরবরাহ করা মাস্কের প্যাকেটে উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে চীনের নাম দেখা গেছে। তবে ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, চীনের একটি কোম্পানির সবকিছু হুবহু নকল করে সেগুলো তৈরি করা।

সিএমএসডির একটি সূত্র থেকে পাওয়া প্যাকেট খুলে দেখা যায়, মাস্কগুলো দেখতে অবিকল এন-৯৫ এর মতো, তবে নিম্নমানের। মাস্কের গুণগত মান যাচাইয়ের যে ৫টি ল্যাব টেস্ট করতে হয় সেখানেও ফাঁকি দিয়েছে এরিস্টোক্র্যাট গ্রুপ।

মাস্ক আমদানির সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যবসায়ী জানান, সিএমএডি জেএমআই-এর মাধ্যমে যেভাবে নকল মাস্ক ছেড়েছিল, এবারও একই কাজ করেছে। চীন থেকে আনা প্রতিটি ৯৫ মাস্কের কেবল আমদানি খরচ পড়ে সাড়ে ৮০০ টাকা। সেখানে ৫০০ টাকায় অখ্যাত এরিস্টোক্র্যাট গ্রুপ মাস্ক দিয়েছে। এরসঙ্গে সিএমএসডি ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের (ডিজিডিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এরিস্টোক্র্যাট গ্রুপ তাদের মাস্ক আমদানির কাগজপত্রে যোগাযোগের নাম্বারের জায়গায় সিএমএসডির একজন কর্মচারীর নাম্বার উল্লেখ করেছে। ওই নাম্বারে ফোন দিয়েও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরিস্টোকেটের তাদের যে ফোন নাম্বার উল্লেখ করেছে সেটি সিএমএসডির স্টোরে কাজ করা একজন কর্মকর্তার। যিনি স্টোরের ডেস্ক অফিসার সাব্বির আহমেদ বলে নিজেকে দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এরিস্টোক্র্যাট গ্রুপ ভুল করে থাকতে পারে। যতটুকু জানি তারা মাস্ক সাপ্লাই দিচ্ছে। সেখানে আমার নাম্বার দেওয়ার কথা নয়। সেটা ওরা ভুল করেছে।’ ডিজিডিএ’র অনাপত্তিপত্র ও মাস্কের গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য নির্ধারিত ল্যাবের টেস্ট রিপোর্ট দিতে হয় বলেও তিনি জানান।

এরিস্টোক্রেট গ্রুপের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মতিয়ার রহমান জানান, ' কৃষিজাত পণ্য নন ওভেন ব্যাগ তৈরি করে তাদের গ্রুপ। তারা কোন মাস্ক আমদানির সঙ্গে জড়িত নন। তাইওয়ান থেকে তাদের কোন মাস্ক আসেনি।

পরে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর তিনি বলেন, 'আমদানি হতে পারে। আর এ সম্পর্কে জানতে হলে সরাসরি তাদের অফিসে যেতে বলেন। আর অফিসের কোন কর্মকর্তার বক্তব্য জানাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।'

এবার এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাস্ক আমদানিকারক এরিস্টোক্র্যাট গ্রুপ পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়নি। এরপরও ঔষধ প্রশাসনের ছাড়পত্র নিয়ে তারা মাস্ক দিয়েছে সিএমএসডিতে। সেখানেও বিষয়টি পার পেয়ে গেছে। ৫টি ল্যাব টেস্টের মধ্যে মাত্র একটি (পাটিকাল ফিল্টারেশন টেস্ট) ছিলো এরিস্টোক্র্যাট গ্রুপের। বাকি ৪টি টেস্টের রিপোর্ট নেয়নি তারা।

এই মাস্ক গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত সিএমএসডি’র সহকারী পরিচালক (ভাণ্ডার ও সরবরাহ) মেজবাউর রহমান বলেন, ‘মান মেনে এরিস্টোক্র্যাট থেকে মাস্ক নেওয়া হয়েছে। ডিজিডিএ যে মাপকাঠি দিয়েছে সেটি আমরা অনুসরণ করি। আমাদের গেটে গোয়েন্দা সংস্থার লোক থাকে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর (ডিজিডিএ) সব দেখে এনওসি দেয়। তারপরও যতদূর সম্ভব আমরা চেক করে নেই। তিন চেকের পরে মাল ঢুকে।’

এদিকে, নকল বা নিম্নমানের মাস্ক পরলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে ফ্রন্টলাইনের ফাইটাররা। চিকিৎসকরা এসব মাস্ক পরে কোভিড চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হলে একসময় আর চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া যাবে না– এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তাজরিন আলম জানান, নকল বা নিম্নমানের মাস্ক পরলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে। এসব মাস্ক ব্যবহার করে যারা সেবা দিচ্ছেন সেই ফ্রন্টলাইন ফাইটার তারা আক্রান্ত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে একসময় আমাদের দেশে সাধারণ জ্বর-কাশি চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক পাওয়া যাবে না।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!