DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

শেখ হাসিনার চায়ের আমন্ত্রন কি একটি রাজনৈতিক চাল???

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বলে উল্লেখ করে এই জয়কে স্বাগত জানাতে প্রধানমন্ত্রীর চায়ের দাওয়াতে যেতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে নির্বাচন-উত্তর শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন৷ আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে তিনটায় গণভবনে চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের৷ তাদেরকে আমন্ত্রণপত্রও পাঠনো হয়েছে৷ ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও বাম গণতান্ত্রিক জোটের আটটি দলের ১৬ জন নেতা আমন্ত্রণ পেয়েছেন৷ তাদেরকেও ২ ফেব্রুয়ারি সাড়ে তিনটায় চা চক্র ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷

তবে প্রধানমন্ত্রীর চা চক্রে পিঠাপুলি খাওয়ার ইচ্ছে নেই ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের৷ ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমন্ত্রণ পেয়েছি৷ কিন্তু এতে যাওয়ার সুযোগ নেই৷ এখন পিঠাপুলি খাওয়ার মানসিকতায় আমরা নেই৷''

সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ নিয়ে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলাম৷ ওই নির্বাচন ছিল প্রহসনের নির্বাচন৷ কিন্তু এখন শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য ডাকা হয়েছে৷ আমরা সেখানে যাচ্ছি না৷ তবে ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন৷ সোমবার তাঁর দেশে ফেরার কথা আছে৷ তিনি দেশে ফেরার পর এই আমন্ত্রণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে৷''

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শাহাদুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তাদের সাড়া দেয়া উচিৎ৷ তার সামনে গিয়ে বলা উচিৎ আপনি নির্বাচনের আগে আমাদের যে কথা দিয়েছিলেন সেটা রাখেননি৷ তারা না গেলে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন৷ পাশাপাশি যেহেতু এখনো সময় আছে তারা সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারেন৷ অন্যভাবে দেখলে তারা প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে হয়ত নির্বাচনের বৈধতা দিতে চাননি৷''

আমন্ত্রণে না গেলে প্রধানমন্ত্রীর সামনে গিয়ে তাঁর প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে প্রশ্ন করার সুযোগ থেকে ঐক্যফ্রন্ট বঞ্চিত হবে কি না? জবাবে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘সেখানে তো আলোচনা হবে না৷ প্রধানমন্ত্রী শুধুই শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন৷ আর পিঠাপুলি খাওয়াবেন৷ আমরা তো সেখানে গিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবো না৷ তাহলে কেন যাবো? আমাদের নেতাকর্মীরা জেলে, এখনও মামলা হচ্ছে৷ আমার নিজের উপরই ৬ বার হামলা হয়েছে৷ এগুলো এড্রেস সেখানে করা যাবে না৷ তাহলে শুধুই পিঠা খাওয়ার মানসিকতা আমাদের নেই৷''

বিএনপির জায়গা থেকে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ঠিকই আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই চা চক্র কী? আওয়ামী লীগ জিতেছে তারা বিজয় পালন করছে৷ সেই বিজয় উৎসবে কোন মুখে যাবে বিএনপি? আজকে যদি কোনো আলোচনা বা সংলাপ হতো তাহলে হয়তো যাওয়ার প্রসঙ্গ আসত৷''

আমন্ত্রণ পাওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের এজেন্ডা থাকলে আমরা সংলাপে যাবো, না হলে যাবো না৷ এটাই ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির সিদ্ধান্ত৷ ভোট ডাকাতির নির্বাচনে বিজয়ীকে শুভেচ্ছা জানাতে কেনো যাবো? ঐক্যফ্রন্টের অন্য নেতাদের মতও একই৷ তারা বলছেন, আমন্ত্রণে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই৷ এই ভুয়া নির্বাচনকে স্বাগত জানাতে তারা যাবেন না৷

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফও মনে করেন, বিএনপি'র এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিতই ছিল৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই তাদের এই ধরনের শুধু চা চক্রে না যাওয়াই প্রত্যাশিত ছিল৷ কর্মীদের কাছে বিএনপি নেতাদের তো জবাবদিহিতা করতে হয়৷ ফলে তারা নিজেদের অবস্থানের কারণেই হয়ত এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এই সিদ্ধান্ত থেকেই হয়ত তারা রাজনৈতিক জয় আনতে চান৷ প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের নিজস্ব অবস্থান থাকে, এটাই হয়ত তাদের অবস্থান৷''

এদিকে নির্বাচন নিয়ে মতামত গ্রহনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ হবে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি৷ জেএসডি সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা আ স ম আবদুর রব সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘২৮ জানুয়ারি আমাদের সংলাপ হওয়ার কথা ছিল৷ সেই সংলাপ এখন আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি হতে পারে৷ সংলাপে কাদের ডাকা হবে এ ব্যাপারে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, ‘‘ভোটারবিহীন নির্বাচন, যেটা জাতিকে হতবাক করে দিয়েছে৷ এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ যারা আছেন, তারা মত প্রকাশ করবেন৷ যারা অবাধ, সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পথ খুঁজে দেবেন, তারা এই সংলাপে অংশ নেবেন৷''

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে প্রধানমন্ত্রী ৭৫টি দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন৷ ওই সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলের নেতাদের আলাদা আলাদা চিঠি দিয়ে চা চক্রে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে৷

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দল গত ১ নভেম্বর গণভবনে সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে বসেছিলেন৷ এর ৭ দিন পর ৭ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে দ্বিতীয় দফায় সংলাপে বসেন৷ পরে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি হয়৷

নির্বাচনের পরে একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৩ জানুয়ারি বলেন, আবারও সংলাপে বসবেন প্রধানমন্ত্রী৷ কাদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল, তাদের আবার আমন্ত্রণ জানাবেন প্রধানমন্ত্রী৷ অবশ্য এর একদিন পরেই কাদের বলেন, নির্বাচন নিয়ে সংলাপ নয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য ডাকা হবে৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!