DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

রোডসও মনে করেন আম্পায়ারের ভুলেই সর্বনাশ!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ   ১৯১ রানের বিশাল লক্ষ্যে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল ফিরে গেলেও, অপরপ্রান্তে দলের রানের চাকা সচল রেখেছিলেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। চতুর্থ ওভারেই পূরণ হয়ে যায় দলীয় পঞ্চাশ, চতুর্থ ওভারের শেষ বল হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্কোর ১ উইকেটে ৫৪।

তখনই ঘটে যায় ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা। বাংলাদেশ ইনিংসের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার ওশেন থমাসের বলে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে বসেন লিটন দাস। কিন্তু ততক্ষণে আম্পায়ার তানভীর আহমেদ সে ডেলিভারিটিকে 'নো বল' ডেকে বসে আছেন, তা দেখে রানআউটের জন্য থ্রো করেন ফিল্ডার। রানআউট থেকেও বেঁচে যান লিটন।

কিন্তু যখন মাঠের বড় পর্দায় সে বলের রিপ্লে দেখানো হলো, তখন স্পষ্ট দেখা যায় বল ছাড়ার সময় থমাসের সামনের পা পপিং ক্রিজের ভেতরেই ছিলো। যার মানে ছিলো বলটি আসলে বৈধ, কিন্তু আম্পায়ার ডেকেছেন অবৈধ তথা নো বল। বড় পর্দায় রিপ্লে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ক্যারিবীয় ক্রিকেটাররা। ব্যাট হাতে ৮৯ রানের ঝড় তোলা ইনিংস খেলা এভিন লুইস তো যেনো আম্পায়ারকে এক দফা শাসিয়েই নেন।

এ সময় ক্যারিবীয় অধিনায়ক কার্লোস ব্রাথওয়েট মাঠের চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা ক্রিকেটারদের ডেকে পিচের পাশেই একটা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে বসেন। তাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছিলো আম্পায়ারের ভুল নো বল ডাকার প্রতিবাদে বুঝি মাঠ ছাড়বে ক্যারিবীয়রা। এভাবেই চলতে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। এক পর্যায়ে মাঠের ঠিক বাইরে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের সামনে বসে থাকা চতুর্থ আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা সৈকতের কাছে গিয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন ক্যারিবীয় অধিনায়ক ব্রাথওয়েট।

আম্পায়ারের ডাকা নো বলের সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল না, তা বারবার বলতে থাকেন উইন্ডিজ ক্যাপ্টেন। টিভির পর্দায় তার শরিরী অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিলো ব্রাথওয়েট ফোর্থ আম্পায়ারকে বলছিলেন, এমন ভুল সিদ্ধান্ত দিলে খেলবো কি করে?

এমন সময় থার্ড আম্পায়ার গাজী সোহেল নেমে আসেন। এক পর্যায়ে ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো‘ও গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের তিন তলায় তার নিজের নির্দিষ্ট কক্ষ থেকে নেমে মাঠের ঠিক বাইরে ব্রাথওয়েটের কাছে চলে আসেন। তার সাথে কথা বার্তা বলার পর ক্ষান্ত হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। পরে আট মিনিট বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয় খেলা।

কিন্তু খেলা শুরু হলেই বা কি! যা ঘটার ঘটে গেছে সে আট মিনিটেই। মাত্র ৩.৫ ওভারে ৫৬ রান করে ফেলার পরেও অনাকাঙ্খিত বিরতির পরে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। বিরতির আগে ৩.৫ ওভারে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে ৫৬ রান করা বাংলাদেশের সংগ্রহ একপর্যায়ে ৯.৩ ওভারে রূপ নেয় ৬ উইকেটে ৮৯ রানে।

মাঝের ছয় ওভারে একে একে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র রান পাওয়া লিটন কুমার দাস। ম্যাচ কার্যত তখনই শেষ। আম্পায়ারের ভুলে হওয়া ৮ মিনিটের দেরিটা যেনো শাপেবর হয়েই দেখা দেয় ক্যারিবীয়দের জন্য আর সে সিদ্ধান্ত নিজেদের পক্ষে পেয়েও তছনছ হয়ে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস।

ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডসও হঠাৎ ছন্দপতনের কারণ হিসেবে আম্পায়ারের ভুলজনিত কারণে হওয়া সেই দেরীটাকেই উল্লেখ করেন। তার মতে বোলিংয়ে শুরুটা খারাপ হলেও শেষদিকে দারুণ ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো তার দল। সে ধারাবাহিকতায় ব্যাটিংয়ের শুরুটাও হয় দুর্দান্ত। এরপরই সেই বিরতিটাই মনোযোগ সরিয়ে দিয়েছে খেলোয়াড়দের এবং এ সময়েই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ।

রোডসের ভাষ্যে, হ্যাঁ অবশ্যই (আম্পায়ারের সে ভুলেই ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলেছে)। যদি আপনি আজকের ম্যাচ দেখেন, উইন্ডিজরা উড়ন্ত সূচনা পেয়েছিল, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছিল। এরপর আমরা দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসি। এমনকি আমাদের ইনিংস শুরুর সময়ও নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতেই ছিল। এরপর ম্যাচের মাঝে খেলা বন্ধ হওয়া এবং সেসময় হওয়া দেরিটাই ম্যাচটা ওদের পক্ষে নিয়ে গিয়েছে।'

সেসময় দলের অবস্থার কথা জানিয়ে রোডস আরও বলেন, 'আমি আমাদের প্লেয়ারদের ড্রেসিংরুমে শান্ত রাখার চেষ্টায় ছিলাম। চেষ্টা করেছি মাঠে বার্তা পাঠাতে, বলতে চেয়েছি, 'দেখ আমরা এখন ভালো অবস্থানে আছি। তোমরা সতর্ক থাক এবং যখন খেলা শুরু হবে তখন মনোযোগ ধরে রেখ।' কারণ এমন অবস্থায় ম্যাচের মোড় ঘুরে যেতে পারে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বার্তা দেয়ার পরও সেটা কাজে আসে নি, কারণ এমন অবস্থায় সবসময় মাথা ঠাণ্ডা রাখা কঠিন। এটাই আমাদের হয়েছে, আমরা ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারিয়েছি।'

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!