DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

পেটের দায়ে মেয়েকে বিক্রি করলেন মা

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ এমনিতেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান। যুদ্ধের ভয়াবহতায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক মানুষ। তার ওপর দেশটিতে শুরু হয়েছে তীব্র খরা। সব মিলিয়ে দুবেলা খাবার জোটানো যেন অসাধ্য হয়ে পড়েছে মানুষের। অনেকে একটু খাবার আর আশ্রয়ের জন্য ভীড় জমাচ্ছেন শরণার্থী শিবিরে। কিন্তু সেখানেও মিলছে না খাবার। সন্তানদের খাবার দিতে না পেয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া মামারিন নামের এক নারী বাধ্য হয়ে বিক্রি করেছেন তার ৬ বছরের কন্যাসন্তানকে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানী একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ওই নারীর মর্মান্তিক জীবন যাপনের গল্প। আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের একটি শহরে অপ্রত্যাশিত তীব্র খরার কারণে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণে সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হওয়া বাবা-মায়ের করুণ গল্প উঠে এসছে।

সিএনএনের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় তারা মামারিনের মতো অসংখ্য বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরই মাধ্যমে উঠে এসেছে দেশটির চরম দারিদ্র্যতার কথা। একমুঠো খাবারের জন্য শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া মানুষদের সঙ্গে কথা বলেই এমন তথ্য পেয়েছে তারা।

নিজের ছয় বছরের কন্যাসন্তানকে সাধে বিক্রি করেননি মামারিন। যুদ্ধে স্বামী-সংসার হারিয়েছেন। এরপর দুমুঠো খাবারের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু কোথাও ঠাঁই মেলেনি। শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নেন একটি শরণার্থী শিবিরে। কিন্তু সেখানে গিয়ে হাহাকার করেও ক্ষুধার্ত সন্তানদের জন্য জোটাতে পারেন না একটু খাবার।

অবশেষে নিজের ছয় বছরের ফুটফুটে কন্যা আকিলাকে তিন হাজার ডলারে বিক্রি করেছেন শরণার্থী শিবিরের নাজমুদ্দিনের কাছে। নাজমুদ্দিন নিজের দশ বছরের ছেলের সঙ্গে আকিলার বিয়ে দেবেন বলেও মামারিনকে আশ্বাস দিয়েছেন।

নিজের সন্তানকে বিক্রি কেন করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মামারিন বলেন, ‘আমার কাছে কোনও টাকা নেই। খাবার তো নেই, স্বামীও যুদ্ধে মারা গেছে। এদিকে শুরু হয় খরা। তাই আমি তিন সন্তানকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে আসি। এখানে এসেছিলাম সহযোগিতা পাওয়ার আশায়। কিন্তু কিছুই পেলাম না। তাই সন্তানসহ না খেয়ে খেয়ে মরার চেয়ে আকিলাকে এক ব্যক্তির কাছে তিন হাজার ডলারের বিনিময়ে দিয়ে দেই।’

জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, তীব্র খরার কারণে আফগানিস্তানে ২০১৮ সালে বাড়ি ছেড়েছেন কমপক্ষে ২ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাত থেকে ৮৪ হাজার ও বাদগিছ থেকে এক লাখ ৮২ হাজার। এই বছর দেশটিতে চলমান সহিংসতাতেও এত মানুষ গৃহহারা হয়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে হামলার তালেবানের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বধীন সামরিক জোট ন্যাটো আফগানিস্তানে হামলা শুরু করে। এখনও চলছে সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!