DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

দেশে না থাকলেও আমীর খসরুর বিরুদ্ধে নাশকতায় উস্কানী দেয়ার মামলা???

 

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা সকল সীমা অতিক্রম করেছে। এখন ঘটনাস্থলে এমনকি দেশে না থেকেও মিথ্যা এবং গায়েবী মামলা দায়ের চলছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা ত্যাগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি দেশে ফেরেননি এখনো। অথচ গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলীয় সমাবেশে তিনি ‘সরকার মিথ্যা এবং গায়েবীরোধী উসকানিমূলক’ বক্তব্য দিয়েছেন এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

 

জনাব  খসরু সহ বিএনপির শীর্ষ ১০ নেতার উসকানিতেই মগবাজারে পুলিশকে মারধর, গাড়ি ভাঙচুরসহ নাশকতা হয়েছে; এমন অভিযোগ এনে ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের করেছে নবগঠিত হাতিরঝিল থানা পুলিশ।

তবে বিদেশে অবস্থানরত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ঢাকায় দেখানো এবং তাকে আসামি করে দায়ের করা আলোচিত এই মামলায় শঙ্কিত বিএনপি নেতারা।  এব্যাপারে জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু মো. ফজলুল করিম সাফ জানিয়ে দেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

 

ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলামের দায়েরকৃত মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ দলটির ৫৫ নেতা এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারনামীয় অন্য আসামিরা ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকার বিএনপি নেতা। হাতিরঝিল থানা এলাকায় বসবাসকারী আসামিদের প্রত্যেকের নামের সঙ্গে বাবার নাম, বসবাসের ঠিকানাও উল্লেখ করা হয়েছে।

 

পুলিশের দায়ের নাশকতার বিভিন্ন মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকেন্দ্রিক দায়েরকৃত মামলায় এজাহার নামীয় অধিকাংশ আসামির শুধু নাম উল্লেখ করা। তবে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দায়েরকৃত মামলাগুলোতে আসামিদের বাবার নাম ও ঠিকানাও থাকছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘গত নির্বাচনের পর সরকার পুলিশ দিয়ে তড়িঘড়ি করে ঢাকা মহানগর এলাকায় বসবাসকারী ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের তথ্য সংগ্রহ করে। এখন সেই ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম দেখে দেখে পুলিশ দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়ের করছে। এতে আসামির তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে না বিদেশে অবস্থানরত এমনকি মৃত ব্যক্তিও।’

 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের কাছে আষাঢ়ে গল্পের একটা ফরমেট সবসময় প্রস্তুত থাকে। সময়মতো নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে সেগুলো ব্যবহার করা হয়। এবারেও পুলিশ তাই করেছে।’

 

গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ থানায় একটি নাশকতার মামলা দায়ের করেন নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিসুল ইসলাম। মামলায় এজাহারনামীয় ৩৮ জনকে আসামি করা হয়। তাতে অভিযোগ, ওইদিন বিকাল সোয়া ৫টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফুর নেতৃত্বে কিছু নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়। তারা বিজিবি ২ নম্বর গেট সংলগ্ন লালবাগ টাওয়ারের সামনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে পথচারীরা বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করে। তবে লালবাগ টাওয়ারের বসবাসকারী ও স্থানীয় দোকানদারদের সঙ্গে কথা বললে এ প্রতিবেদককে তারা জানান, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

 

ওই মামলার ৩৩ নম্বর আসামি হাজী লিটন, ৩৪ নম্বর আসামি তার ভাই মো. রিপন। হাজী লিটন আমাদের সময়কে বলেন, ‘রথযাত্রার দিন বিকালে স্থানীয় উজ্জ্বল নামে এক ব্যক্তি জানায়, এসআই আনিসুল ইসলাম আমার সঙ্গে কথা বলবেন। উজ্জ্বলের মোবাইলে কথা বললে তিনি আমার লাইসেন্সকৃত শর্টগানের দুই রাউন্ড গুলি দাবি করেন। তখন আমি বলে দেই এটা সম্ভব না। এতে হয়ত ক্ষুব্ধ হয়ে অথবা গুলি নিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিস আমাদের গায়েবি মামলার আসামি করেন।’ বিষয়টি জানতে এসআই আনিসুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল ধরেননি।

 

মওদুদ ও সানাউল্লাহর আগাম জামিনঃ


হাতিরঝিল ও খিলগাঁও থানায় দায়েরকৃত পৃথক তিনটি মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে গতকাল বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

 

তাদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। জামিন আবেদন দাখিল করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান। তিনি বলেন, মামলা তিনটিতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল না করা পর্যন্ত তাদের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

 

তিন মামলার মধ্যে দুটি সানাউল্লাহ মিয়ার বিরুদ্ধে। গত ২০ সেপ্টেম্বর তিনি পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছেন এবং নাশকতামূলক কাজ করছেন এমন অভিযোগে খিলগাঁও থানায় মামলা দুটি করে পুলিশ। একই অভিযোগে গত ১ অক্টোবর অন্য মামলাটি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে করা হয় হাতিরঝিল থানায়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!