DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

নায়ক ফারুকের নায়িকা হয়েছেন যারা

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  যে অল্প ক’জন শিল্পী অভিনয় দিয়ে ঢাকাই সিনেমাকে আলোকিত করেছেন তাদের অন্যতম একজন চিত্রনায়ক ফারুক। তিনি সবার কাছে ‘মিয়া ভাই’ বলেও খ্যাত। একটা সময় সিনেমার নাম ভূমিকায় ফারুকের নামের আগে দেখা যেত ‘সুপারস্টার’ শব্দটিও। পর্দার ভেতরে ও বাইরে; সবখানেই সত্যিকারের সুপারস্টার ফারুক। জীবন তার রুপকথার মতো।

অস্থির রাজনীতির সংকটময় পূর্ব পাকিস্থানে ডানপিটে কিশোর ফারুকের যে দুরন্ত যাত্রা হয়েছিলো রাজনীতির আঙিনায়, চলচ্চিত্রে এসে যেন সেই ফারুক সাফল্যের রাজপুত্র বনে গেলেন। একের পর এক ব্যবসা সফল সিনেমা দিয়ে তিনি বাজিমাত করেছেন। ‘সারেং বউ’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়ন মণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’সহ তার বহু সিনেমা কালও জয় করেছে।

 

আজ সেই অভিনেতা ফারুকের জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের এই দিনে তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। রাজনীতির মাঠ পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধ, তারপর চলচ্চিত্রে নাম লেখানো। অসংখ্য নায়িকারাই ফারুকের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন। রোমান্স করেছেন পর্দায়, হাসিয়েছেন-কাঁদিয়েছেন দর্শককে। বিভিন্ন সময় নায়ক ফারুক তার নায়িকাদের স্মৃতিচারণ করেছেন। সেইসব স্মৃতিচারণ ও নানা তথ্য ঘেঁটে নায়ক ফারুকের নায়িকাদের একটি তালিকা করা গেল। নায়কের জন্মদিনে তার নায়িকাদের নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন-

কবরী
দেশ তখন স্বাধীনতা লাভের আনন্দে ভাসছে। নতুন করে তৈরি হচ্ছে নতুন বাংলাদেশের পরিকল্পনা। এমনি সময়ে চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হন চিত্রনায়ক ফারুক ‘জলছবি’ নামের সিনেমায়। এইচ আকবর পরিচালিত এই ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন কবরী। জানা যায়, এটি মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৭২ সালে। প্রথম ছবির গল্প জানাতে গিয়ে নায়ক ফারুক কবরীর স্মৃতিচারণ করে বেশ কিছু সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘কবরী তখন সুপারস্টার। তার মতো নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে সিনেমা শুরু করতে পারাটা আমার জন্য আনন্দের। তবে ব্যাপারটি অতোটা সহজ ছিলো না। আমি খানিকটা ডানপিটে ছিলাম। আমি মারামারি করি এমনটাও প্রচার ছিলো। যখন ‘জলছবি’ সিনেমার প্রযোজক আমাকে তার ছবির নায়ক করলেন কবরী কারো মাধ্যমে জানতে পারলেন যে আমি গুন্ডা কিসিমের। সে শুনেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। আমার সঙ্গে ছবি করবে না বলে আপত্তি তুলেছিলো। তবে পরে তাকে বোঝানো হলে তিনি রাজি হন। অভিনয় করতে এসে আমার সম্পর্কে তার ভুল ধারনাটি ভেঙে গিয়েছিলো।’

সেই শুরু। এরপর ফারুক-কবরীকে দেখা গেছে বেশ কিছু জনপ্রিয় ছবিতে। ‘সারেং বউ’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘আরশিনগর’, ‘তৃষ্ণা’, ‘সুজন সখী’ ইত্যাদি। এরমধ্যে আব্দুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘সারেং বউ’ ছবিটি ফারুক-কবরী জুটিকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। আর খান আতার চিত্রনাট্যে প্রমোদ করের ‘সুজন সখী’ ছবিটি এই জুটিকে সেরা পাঁচটি রোমান্টিক জুটি হিসেবে ঢালিউডের ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছে। এই ছবিটি পরে রিমেক করা হয়। সেখানে জুটি বেঁধে সফল হয়েছিলেন সালমান শাহ ও শাবনূর।

ববিতা
চিত্রনায়ক ফারুক জুটি প্রথায় বিশ্বাসী নন বলে দাবি করেন। তার মতে, বহু নায়িকার সঙ্গেই তিনি জুটি বেঁধে সফল হয়েছেন। জুটি প্রথা বলতে যা বোঝায় তেমনটি তিনি অনুসরণ করেননি। তবে ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি সিনেমা তিনি করেছেন ববিতার সঙ্গে। তাই নিজের সফল বা প্রিয় নায়িকা হিসেবে ববিতাকেই এগিয়ে রাখেন তিনি। তাছাড়া ঢালিউডে জনপ্রিয় ও সফল দশটি জুটির একটি বলে মনে করা হয় ফারুক-ববিতা জুটিকে। ১৯৭৩ সালে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবি দিয়ে প্রথমবারের মতো জুটি হন তারা। এরপর ‘আলোর মিছিল’, ‘কথা দিলাম’, ‘প্রিয় বান্ধবী’, ‘লাঠিয়াল’, ‘সুর্যগ্রহণ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘নয়নমনি’, ‘মিয়া ভাই’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ ইত্যাদিসহ ৩৩টি ছবিতে অভিনয় করেন তারা। তারমধ্যে কালজয়ী হয়ে আছে ‘আলোর মিছিল’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবিগুলো। আর ‘নয়নমনি’ ছবির মিষ্টি রসায়নে ফারুক-ববিতা আজও দর্শকের মনে নিটোল প্রেমের প্রতীক হয়ে আছেন।

সর্বশেষ এই জুটিকে দেখা গিয়েছিল ২০০৮ সালে, ‘ঘরের লক্ষী’ নামের ছবিতে। দুজনের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কটাও খুব জমজমাট এই দুই তারকার। নানা উপলক্ষেই একজন আরেকজনের বাসায় নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেন, আড্ডায় মেতে ওঠেন। চোখ ভেজান সোনালি অতীতের রোমান্স-রোমাঞ্চকর দিনগুলোর স্মৃতিচারণে।

মজার ব্যাপার হলো, দুজনই একসঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন চলতি বছরে।

শাবানা
কবরী ও ববিতার সমসাময়িক আরও ক’জন নায়িকাদের সঙ্গে ফারুক জুটি বেঁধেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম শাবানা। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ‘মেহমান’, ‘লাল কাজল’, ‘সখী তুমি কার’, ‘ভাই ভাই’র মতো কিছু ছবিতে তারা জুটি হয়েছেন। তবে দর্শক কোনো এক কারণে এই জুটিকে গ্রহণ করেননি। নায়ক ফারুকের বক্তব্য, ‘অনেক পরিচালকই আগ্রহ নিয়ে শাবানাকে আমার বিপরীতে কাজ করিয়েছেন। আমরা বেশ ভালো গল্প নিয়েই কাজ করেছিলাম। দুজনের অভিনয়ও ভালো ছিলো। কিন্তু শাবানার সঙ্গে কেন জানি না আমার রসায়নটা ঠিক জমতো না। দর্শকও খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। তবে শাবানার অভিনয় ও তার ব্যক্তিত্ব চমৎকার। তার সঙ্গে কাজ করে আমি আনন্দিত ছিলাম।’

রোজিনা 
ফারুক সফল হয়েছেন রোজিনার সঙ্গেও। বেশ কিছু চলচ্চিত্রেই এই জুটির সাফল্য ছিলো ঈর্ষনীয়। তার মধ্যে ‘সাহেব’, ‘সিকান্দার’, ‘শেষ পরিচয়’, ‘যন্তর মন্তর’, ‘অন্ধ বধু’, ‘বন্ধু আমার’, ‘দুঃখীনী মা’, ‘হাসু আমার হাসু’, ‘মান অভিমান’, ‘ভুল বিচার’, ‘সুখের সংসার’, ‘দাঙ্গা ফ্যাসাদ’ ইত্যাদি ছবিগুলো উল্লেখযোগ্য। নায়ক ফারুক মনে করেন, তার ক্যারিয়ারে গতানুগতিক জুটি বলতে যা বোঝায় তেমন কিছু সত্যি হয়ে থাকলে সেটি ছিলো রোজিনার সঙ্গে। খুব সহজেই দুজনে মিশে যেতে পারতেন চরিত্রের সঙ্গে। জমে উঠতো অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রিও।

সুচরিতা
চিত্রনায়িকা সুচরিতার সঙ্গেও অনেকগুলো ছবিতে নায়ক হয়েছেন ফারুক। সেইসব ছবি পেয়েছে ব্যবসায়িক সাফল্য ও জনপ্রিয়তাও। উল্লেখ করা যায় ‘লাখে একটা’, ‘নাগর দোলা’, ‘কোটি টাকার কাবিন’, ‘ছক্কা পাঞ্জা’ ইত্যাদি ছবির নাম।

সুনেত্রা
বলা হয়ে থাকে গ্রামীন চরিত্রে নায়ক ফারুক ছিলেন অনবদ্য। গ্রামীন প্রেক্ষাপটের ছবির জন্য পরিচালকদের সেরা পছন্দের ছিলেন তিনি। সেই ধাঁচের কিছু ছবিতে সুনেত্রার বিপরীতে নায়ক হয়েছেন ফারুক। দুই তারকার মধ্যে বয়সের গ্যাপ থাকলেও জমজমাট পর্দা রসায়ন জনপ্রিয় করে তুলেছিলো ফারুক-সুনেত্রা জুটির ‘শিমুল পারুল’, ‘পালকী’ ছবিগুলোকে।

অঞ্জনা ও অন্যান্যরা……
সমসাময়িক প্রায় সব নায়িকার সঙ্গে জুটি হয়েছেন ফারুক। তাদের মধ্যে নাচের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত চিত্রনায়িকা অঞ্জনার বিপরীতেও কাজ করেছেন তিনি ‘ছোট মা’ নামের ছবিতে। তাকে তারচেয়ে বয়সে ছোট অঞ্জু ঘোষের নায়ক হিসেবে দেখা গেছে ‘শক্তিশালী’, ‘যাদুমহল’ নামের ছবিতে। ফারুক তার ক্যারিয়ারের অন্যতম ব্যবসা সফল ছবি ‘ঝিনুক মালা’য় নায়িকা হিসেবে পেয়েছিলেন নিপা মোনালিসাকে। চিত্রনায়িকা জুলিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন ‘দোস্তী’ ছবিতে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!