DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বিএনপির নতুন কমিটি নিয়ে দেশে বিদেশে চাপা অসন্তোষঃব্যবস্থা নেয়া জরুরী

bnpposter

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ    বিএনপির নবগঠিত কমিটিতে বাদ পড়েছে অনেক ত্যাগী নেতা, বিদেশেও কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে সংকটে পড়েছে নেতৃত্ব । দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের পরপরই দ্রুততম সময়ে বিএনপি জনগণের সামনে নতুনভাবে আবির্ভূত হবে, দলীয় চেয়ারপারসন রাজপথের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হবেন।

বিশেষ করে বহির্বিশ্বের কমিটি গুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য,সৌদী আরব সহ মাত্র কয়েটির নেতারা বিএনপির জাতীয় কমিটিতে স্থান করে নিলেও উত্তর আমেরিকা,ইউরোপ সহ অন্য সকল অঞ্চল থেকে কাউকেই মূল্যায়ন করা হয়নি।

কিন্তু এসব প্রত্যাশার রঙ শুরুতেই ফিকে হতে বসেছে। কমিটি গঠন-পরবর্তী ক্ষোভ-অসন্তোষ নিয়ে দলটিকে বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। বিশেষ করে দলের কিছু ত্যাগী ও হাইপ্রোফাইল নেতার যথাযথ প্রাপ্তিযোগ না হওয়ায় নানা শংকা তৈরি হয়েছে। এমনকি এ সারির কয়েকজন সরকারি দলের সুনজরে আছেন বলেও খবর ছড়িয়েছে।

প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান     শিল্পপতি  মোসাদ্দেক আলী ফালু ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন।অপর ভাইস চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের পরিক্ষিত নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান প্রাকাশ্যেই তার অসন্তোষের কথা বলেছেন । সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম পদ ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন করেছেন। বিএনপির নতুন কমিটিতে স্থান না হওয়ায় জিয়া পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনের সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহার।

পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আরও সময় নিয়ে নতুন কমিটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিশেষ সম্পাদক, সহ-সম্পাদক এবং সদস্যপদ থেকে প্রায় অর্ধশত নেতা দলীয় কর্মকান্ডে নিস্ক্রিয় বা দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিতে পারেন। পদ পেলেও কমিটির ক্রমবিন্যাসে জুনিয়র সিনিয়রের ওপরে চলে যাওয়ায় স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যও ক্ষুব্ধ বলে তারা জানিয়েছেন। নতুন কমিটিতে পদ দেয়া হয়নি সংস্কারপন্থীদের। সেক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ ও সংস্কারপন্থী নেতারা সুযোগ পেলে দলে ভাঙনও ধরতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন।

দেশের বাইরে মালয়েশিয়ায় নির্বাহি কমিটি নিয়ে বিরোধ দেখা গেছে। বিশেষ সুত্রে জানাযায়, মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার বাদুলুর রহমান ও অপর গ্রুপের সভাপতি মোঃ শহিদুল্লাহ শহিদের বর্তমান নির্বাহি কমিটিতে জায়গা হয়নি। তবে বাদল গ্রুপের বিতর্কিত সাধারন সম্পাদক মোশাররফ হোসেনর নির্বাহি কমিটিতে জায়গা পাওয়া নিয়ে দুই গ্রুপেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তথ্যসুত্রে জানাযায়, মোশাররফ এর বিরুদ্ধে মানব পাচারসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও রয়েছে। অন্যদিকে আবুদাবি বিএনপির সভাপতি মোঃ জাকির হোসেন খতিব এর জায়গা হয়নি নির্বাহি কমিটিতে। অথচ বিএনপির দুঃসময়ে এরা দলের অর্থনৈতকি ও আন্দোলনে দেশ বিদেশে গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন। মালয়েশিয়া বিএনপির একাংশের সভাপতি মোঃ শহিদুল্লাহ শহিদ জানান, দলের দুুর্দিনে আমরাই আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহন করেছি । জাতীয় কাউন্সিলসহ বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের নামে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের মামলা ও হামলার বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারনা চালিয়েছি তবুও দলের নির্বাহি কমিটিতে জায়গা হয়নি। এবিষয়ে বাদুলুর রহমানকে ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ভিন্ন একটি সূত্রে জানাযায়,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা, ইতালি, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি শাখার নেতা কর্মীরা তাদের ক্ষোভ ও হতাশার কথা এ প্রতিবেদকের কাছে জানান।কানাডা বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপির রাজনীতিকে প্রচার, লবি ও চাপে রাখার কৌশলে ব্যাপকভাবে এগিয়ে থাকা সত্যেও তাদের কোন নেতা কর্মীকে হাই কমান্ড কিছুতেই মূল্যায়ন করেনি। যে কারনে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের নেতা কর্মীরা হতাশ হয়েছেন।

এদিকে বিএনপি নেতা মিঞা আহমেদ কিবরিয়া বিগত আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়ে জেল খেটেছেন, পল্টন ও ঝালকাঠীতে হামলা মামলার শিকার হয়েছেন, তবুও নির্বাহি কমিটিতে স্থান হয়নি। অন্যদিকে বীর মুক্তিযোদ্বা ড. ইঞ্জিনিয়ার এম শাহ আলম দলের জন্য আন্দোলন ও প্রচারনায় সরাসরি অংশগ্রহন করেও নির্বাহি কমিটিতে স্থান হয়নি। এছাড়া বরিশাল জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চান, সাধারন সম্পাদক এ্যাড. আবুল কালাম শাহিনসহ দেশের আরো অনেক নেতাদের নির্বাহি কমিটিতে মুল্যায়ন করা হয়নি।

গত মার্চে বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হওয়ার প্রাক্কালে বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব (বর্তমান মহাসচিব) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কাউন্সিলের পর বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু মহাসচিবের বিপুল প্রত্যাশা তৈরির সেই বক্তব্য এখন অনেকটা স্বপ্ন বিলাসে পরিণত হয়েছে।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, কমিটি গঠন-পরবর্তী বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনায় রোববার রাতে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে সৃষ্ট সংকট নিরসনে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তবে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, দলকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে কমিটি গঠন-পরবর্তী মান-অভিমানের সংকট দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। এরপর দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে নতুন নির্বাহী কমিটিকে প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স দেখাতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘোষিত কমিটিতে অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ তাদের যদি সম্মানের সঙ্গে নির্বাহী কমিটি থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং এক নেতার এক পদ কার্যকর করা হয় অনেক পদই শূন্য হবে। এসব শূন্য পদে বঞ্চিত যোগ্যদের কমিটিতে স্থান করে দিলে এসব থাকবে না বলে মনে করেন ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!