DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

জঙ্গিবাদ দমনে জনযুদ্ধ গড়ে তুলুনঃমোশতাক সরকারের মূখ্য সচিব এইচ টি ইমাম

jonojoddho copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  জঙ্গিবাদ দমনে দেশে জনযুদ্ধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের পর ক্ষমতা দখলকারী খন্দকার মোশতাকের শপথ গ্রহন পরিচালনাকারী তৎকালীন মূখ্য সচিব এবং হালের প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনের হল রুমে এক গোল টেবিল আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

`ইসলামের আলোকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় আমাদের করণীয় শীর্ষক’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ কমিটি।

গত বছর শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের টানা আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘আপনারা মনে রাখবেন ওই যে ১০০ দিনের সন্ত্রাস, এটাকে আমরা ঠেলে গুটিয়ে দিয়েছি। জনগণের শক্তির ওপরে কিছুই নেই। জনগণকে সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে আমরা জনযুদ্ধে পরিণত করেছিলাম। এবারও আরেকটি জনযুদ্ধ দরকার। এই যুদ্ধে শামিল হয়ে আমাদের আলেমরা, মন্ত্রীরা, শিক্ষকরা, ছাত্ররা সকলেই মিলে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি, মাঠে নামি। এদেরকেও (জঙ্গি) আমরা ওই সন্ত্রাসের মত ঠেলে গুটিয়ে বন্ধ করতে পারবো। এটা আমার বিশ্বাস।’

তিনি বলেন ,গ্রামে-গঞ্জে ওয়াজ মাহফিলের নামে যে অত্যাচার হয়, চাঁদাবাজি হয়, ফতোয়া দেওয়া হয় এগুলোর বিরুদ্ধে সকলে মিলে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।

এইচ টি ইমাম জামায়াত-শিবির উত্থানের পটভূমি তুলে ধরে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতের যে বিভিন্ন গ্রুপগুলো উঠে এসেছে এরাই ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন নামে গণহত্যা করেছে। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরের পর এরা কোথায় গেল? এদের অনেকে সরাসরি পাকিস্তানে চলে গেছে। এদের অনেকে ব্রিটেনে চলে গেছে। অনেকে আমেরিকায় চলে গেছে। আবার অনেকে দেশের মধ্যেই ঘাপটি মেরে থেকে গেছে।’ ‘কিন্তু জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এদের সকলকে নিয়ে এল। এদের সকলকে নিয়ে অদ্ভুত জিনিস সৃষ্টি করল। সেটা হল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এটা আর কিছুই না। বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ধারা,’ যোগ করেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করে এইচ টি ইমাম আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে তার স্ত্রীর সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনিদের নিয়ে ফ্রিডম পার্টি গঠন করা হল। এটাও জঙ্গিবাদের অংশ।’

বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান কখনো মনে-প্রাণে বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি। সেই জিনিসটা এখন আরও প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। তাদের পার্লামেন্টে একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে যেভাবে কথা বলা হচ্ছে, আর তাদের সাথে সুর মিলিয়ে এই দেশে (বাংলাদেশে) কারা কথা বলছেন। এগুলোর মিল খুঁজলেই জঙ্গিবাদের সূত্র পাওয়া যায়।’

এইচ টি ইমাম বলেন, ‘জঙ্গিদের লক্ষ্য হচ্ছে অরাজকতা সৃষ্টি করে তোলপাড় সৃষ্টি করা। বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে আর্ন্তজাতিক জঙ্গির তকমার ছাপ মারা। আর সব গুলোরর ক্ষেত্রে একটি নাম ‘আইএস’ ব্যবহার করা। তাই বাংলাদেশ থেকে মওদুদীবাদীদের উৎখাত করতে না পারি, জঙ্গিবাদ উৎখাতে এদের শিক্ষা বন্ধ করতে না পারি তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষাকার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খেলাধুলার কোন জায়গা নেই। সংস্কৃতি চর্চা হয় না। শুধু কতগুলো ফোরাম আছে। এগুলোর কর্মকাণ্ড হয়। তাই এখন অন্যান্য যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেগুলোও খতিয়ে দেখতে হবে। এখন খাতিরের সময় না। প্রশ্রয় দেয়ারও দরকার নেই।’

গোল টেবিল আলোচনায় আলেমা-ওলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদরা মতামত জ্ঞাপন করেন। প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাপরিষদ সদস্য এইচ টি ইমামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য খন্দকার, গোলাম মাওলা নকশবন্দী, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আহসান উল্লাহ প্রমুখ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ বলেন, ‘জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। কিন্তু বাংলাদেশে এটি রাজনৈতিক সমস্যা। এর সামনে জেএমবি-হরকাতুল জিহাদ। পেছনে হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। আর এটাকে সার্টিফিকেশন দেওয়ার জন্য হচ্ছে আইএস (ইসলামিক স্ট্রেট)। কারণ আর্ন্তজাতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এটিকে আইএস নাম দেওয়া হচ্ছে। যাতে আর্ন্তজাতিক গোষ্ঠী আইএস ইস্যুতে বাংলাদেশে নাক গলাতে পারে।’

তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী জঙ্গিবাদ দমনে কতকগুলো করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ তুলে ধরেন। নজিবুল বাশার বলেন, ‘সমগ্র বাংলাদেশে লাখ লাখ আলেম-ওলামা ও হাজার হাজার ওয়াজিন আছেন। ওয়াজিনরা ইসলামের নাম নিয়ে ওয়াজ নসিহত করে যাচ্ছে। তারা কারা, তারা সরকারবিরোধী কি না? তারা জামায়াতের অনুসারি কি না? তারা যদি কোরআন সুন্নতের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ওয়াজ করে তাহলে এটা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়াও প্রয়োজন।’

জঙ্গিবাদের জন্য জামায়াতে ইসলামকে সরাসরি দায়ী করে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মেসবাউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘জামায়াতকে ছোট করে দেখলে হবে না। দোস্তি করলে হবে না। তাদের টাকায় বিলবোর্ড টাঙানো ঠিক হবে না। এরা নাই কোথায়। এমনকি এরা সাংবাদিকদের মধ্যেও আছেন।’

জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণায় একটি সেল গঠন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদে ঠাঁই হবে না। কারণ যারা জিহাদের নামে মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের লাশ নেওয়ার লোকও নাই। এমনভাবেই দেশের মানুষ জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করে।’

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আকতারুজ্জামান বলেন, ‘বিগত সময়ে যারা বাসে প্রেটোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালা করেছে। আর যারা এই সময় গুলশানে ক্যাফেতে ঢুকে মানুষকে জিম্মি করে হত্যা করছে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। এদের শুধু কৌশল পরিবর্তন হয়েছে।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংগঠনের সদস্য সচিব ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য দেন-আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!